নাক, কান ও গলা শরীরের খুব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এই তিনটি অঙ্গ একে অপরের সাথে সংযুক্ত। একটিতে সমস্যা হলে আরেকটাতেও হতে পারে। এখানে মূলত উল্লেখ করা হবে গলার প্রধান তিন সমস্যা নিয়ে।
এই অঙ্গগুলোতেও সাধারন হাঁচি-সর্দি থেকে শুরু করে গলার ক্যান্সারসহ হতে পারে। আজ আমরা এই তিনটি অঙ্গের প্রধান রোগ সম্পর্কে সম্যক ধারণা নেব।
রোগ হলে চিকিৎসা তো ডাক্তারের কাছে থেকেই নিতে হবে কিন্তু রোগ ব্যাধি সম্পর্কে সাধারন জ্ঞান থাকাটা ভালো। এখানে তেমনই কিছু তথ্য সংযুক্ত করা হলো। তো আর কথা নয় – সরাসরি যাচ্ছি মূল আলোচনায়।
১. টনসিলের ইনফেকশন:
সবচেয়ে পরিচিত এই টনসিলের সমস্যা। এটি মূলত শিশুদের সমস্যা। বড়দেরও হয়। টনসিলের সমস্যায় গলা ব্যথা, খেতে গেলে ব্যথা, সামান্য জ্বর ইত্যাদি থাকে। প্রথমত ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।
বারবার হতে থাকলে সম্যক জটিলতা ও কষ্টের কথা বিবেচনা করে টনসিল অপারেশন করিয়ে নিতে হয়। সারা পৃথিবীতে শিশুদের যত অপারেশন হয় তারমধ্যে টনসিল অপারেশনের অবস্থান সবার শীর্ষে।
২. এডিনয়েড বড় হওয়া:
এটি শিশুদের রোগ। নাকের ছিদ্রের পিছন দিকে যে অঞ্চলটি রয়েছে সেখানে এই এডিনয়েড নামক লসিকা গ্রন্থির অবস্থান। এটি অনেক সময় বড় হয়ে নাক আংশিক বন্ধ করে দেয়। ফলে নাক দিয়ে অধিকাংশ সময়েই সর্দি ঝরে।
কানের সাথে নাকের পিছনের অংশের যোগাযোগ রক্ষাকারী টিউবটির মুখও আংশিকভাবে বন্ধ থাকে। ফলে কানও বন্ধ থাকে।
কানের মধ্যে পানির মত তরল জমে কান ব্যথা করে। এডিনয়েড বড় হলে শিশু মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়। ঘুমের মধ্যে শ্বাসবন্ধ হয়ে জেগে ওঠে।
রোগীর চেহারা ক্রমশ হাবাগোবা হয়ে পড়ে। অনেক অভিভাবকই এ সমস্যাটির ফলে সৃষ্ট ক্ষতি অনুধাবন করেন না। ফলে শিশুর অনেক ক্ষতি হয়। অপারেশনই হচ্ছে এর একমাত্র চিকিৎসা।
৩. ভোকাল কর্ডে পলিপ:
এটি শ্বাসতন্ত্রের অন্তর্গত সমস্যা। গলায় স্বর তৈরির স্থানটি হচ্ছে ল্যারিংস। সেখানেই থাকে ভোকাল কর্ড। কর্ড দুটির কাঁপুনিতেই সৃষ্টি হয় শব্দ। ভোকাল কর্ড বেশি ব্যবহৃত হলে এবং ল্যারিংসে ইনফেকশন হলে গলার স্বর ভেঙ্গে যায়।
স্বরভঙ্গের প্রথম চিকিৎসা হচ্ছে ৭-১০দিন কথা বলা সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ করে দেয়া। স্বরের পরিমিত বিশ্রামের অভাবে গলা ভাঙ্গলে ভোকাল কর্ডে দানার মতো দেখা দেয়। যাকে বলা হয় ভোকাল কর্ড।
স্বর ব্যবহারকারী যেমন- সঙ্গীত শিল্পী, শিক্ষক এদের ভোকালকর্ডে পলিপ বেশি দেখা দেয়। পলিপ হলে চিকিৎসা অপারেশন।
৪. গলায় ক্যান্সার:
এ ক্ষেত্রে ল্যারিংসের ক্যান্সারকেই বোঝানো হয়েছে। খাদ্যনালীর ক্যান্সারকেও গলায় ক্যান্সার বলা যেতে পারে। ল্যারিংসের ক্যান্সার বলতে শ্বাসতন্ত্রের যেখানে থেকে স্বর তৈরি হয় সে অঞ্চলের ক্যান্সারকে বোঝায়।
আর খাদ্যনালীর ক্যান্সার বলতে বোঝায় খাদ্যনালীর উপরের অংশের ক্যান্সারকে বোঝানো হয়। ল্যারিংসের ক্যান্সার হলে তাই গলার স্বর পরিবর্তন হয়ে যায়, সমস্যা তীব্র হয়ে শ্বাসনালী বন্ধ করার উপক্রম হলে শ্বাস কষ্ট শুরু হয়।
অন্যদিকে খাদ্যনালীর ক্যান্সারের সমস্যা শুরু হয় গলায় ব্যথা ও খেতে অসুবিধা হওয়ার মধ্য দিয়ে। সমস্যা তীব্র হলে খাদ্যনালী বন্ধের উপক্রম হলে রোগী কিছুই খেতে পারে না। অবস্থাভেদে এর চিকিৎসা অপারেশন, রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপি।
পরিশেষে বলা যায়, কোন অসুখই কারও জন্য ভালো নয়। তাই নাক, কান ও গলার মধ্যে কোন সমস্যা পরিলক্ষিত হলে দেরি না করে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
আরও পড়ুন: টনসিল এর চিকিৎসা না করলে আপনার যা হতে পারে!