একজন গর্ভবতী মা স্বামীর জন্য শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। গর্ভের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত (১০ মাস ১০ দিন) প্রতিটি দিন মায়ের যত্ন নেয়া উচিত।
কারণ, একটি সুস্থ্য সবল বাচ্চা পেতে গেল অবশ্যই মা’কেও গর্ভাবস্থায় সুস্থ্য থাকতে হবে। মা যদি অসুস্থ্য থাকে তবে বাচ্চার সুস্থ্যতা কামনা করা বোকামি।
একজন গর্ভবতী মায়ের চেক আপ করার জন্য কোন কোন বিষয়ের উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন এবং কি কি করণীয় তা এই লিখায় জানতে পারবেন।
অনুগ্রহ করে লিখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। আশা করি, সব কিছু স্পষ্টভাবে বুঝতে পারবেন। তো আর কথা নয় – সরাসরি যাচ্ছি মূল আলোচনায়।
গর্ভবতী মা এর চেকআপে যা করণীয়:
১. প্রথমবার পরীক্ষার সময় চিকিৎসা কেন্দ্রে যা পরীক্ষা করে তা হল:
ক. গর্ভবতী মায়ের পরীক্ষা: উচ্চতা, ওজন, রক্তচাপ, সাধারণ স্বাস্থ্য, রক্তস্বল্পতা, পা ফোলা, হার্টের অসুখ, মেদবাহুল্য ইত্যাদি।
খ. পরীক্ষাগারে পরীক্ষা: রক্তের হিমোগ্লোবিন, রক্তের গ্রুপ, আর.আইচ ফ্যাক্ট, প্রস্রাব পরীক্ষা (বিশেষ করে অ্যালবুমিন এবং সুগার), সিফিলিসের পরীক্ষা, হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের পরীক্ষা, সম্ভব হলে এইডস ভাইরাসের পরীক্ষা।
২. পরবর্তীতে প্রতিবার গর্ভবতী মা যখন চিকিৎসা কেন্দ্রে যাবে তখন তার নিম্নলিখিত পরীক্ষাসমূহ করা হবে:
ক. প্রতি চেকআপে একই মেশিনে একই সময়ে ওজন নেয়া ও তা রেকর্ড করা।
খ. রক্তচাপ মাপা, রক্তস্বল্পতা, পা ও শরীর ফোলা, হার্ট ও ফুসফুসের অবস্থা দেখা, রক্তের হিমোগ্লোবিন, প্রস্রাবের পরীক্ষা (বিশেষ করে অ্যালবুমিন ও সুগার)।
৩. জরায়ুর উচ্চতা দেখা: এটি গর্ভস্থ সন্তানের বৃদ্ধির পরিমাপ। জরায়ুতে সন্তানের অবস্থান এবং ছয় মাসের পর থেকে ফিটাস (গর্ভস্থ সন্তান) এর হার্ট বিট শোনা।
৪. শেষ চেকআপে পেলভিসের (প্যাসেজের) পরিমাণ নেয়া।
৫. গর্ভবতীর কোনো জটিলতা থাকলে তার সঠিক কারণ নির্ণয় ও প্রতিকার করা।
৬. বিশুদ্ধ পানি পান, সুষম খাবার ও সহবাস পদ্ধতি সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রীকে শেখানো।
৭. ৮ থেকে ১৮ সপ্তাহের মধ্যে জরায়ুর আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে ভ্রুণ সঠিক অবস্থানে আছে কিনা তা জানা। ৩২ থেকে ৩৩ সপ্তাহের মধ্যে আল্ট্রাসনোগ্রাম করে জরায়ুতে গর্ভস্থ সন্তানের অবস্থান সঠিক কিনা সেটা জেনে নেয়া।
গর্ভাবস্থায় একজন নারীর অন্তত চার বার চেকআপ করা জরুরি। প্রথম ১৬ সপ্তাহে একবার, পরে ২৮ সপ্তাহে আরেকবার, তারপর ৩২ সপ্তাহে, এরপর একেবারে ডেলিভারীর আগে একবা চেকআপ করতে হবে।
অন্তত এই চার বার যদি একজন গর্ভবতী নারী চিকিৎসকের কাছে যান, তাহলে অনেকটাই শঙ্কামুক্ত থাকতে পারবেন। গর্ভকালীন তাঁর কোনো সমস্যা হলে সেগুলো সমাধান করা সম্ভব হবে।
পরিশেষে বলা যায়, গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের কখনোই অযত্ন করা যাবে না। সুস্থ্য মা এবং সুস্থ্য সন্তান সবারই কাম্য।
তাই গর্ভাবস্থায় স্বামীর সাহচর্য একজন নারীর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ভুল করেও অবহেলা করা যাবে না। উপরে চেকআপ এর কথা যেভাবে বলা হয়েছে অনুগ্রহ করে সেভাবে চেকআপ গুলো করবেন।
আরও পড়ুন: গর্ভকালীন সমস্যা ও সেগুলোর সহজ সমাধান।
তাহলে সমস্যা হলেও তা জটিল আকার ধারণ করা সম্ভব হবে না এবং যে ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে চেকআপ করবেন তিনি সমস্যার সমাধান সহজেই করতে পারবেন।
একটু যত্নের অভাবে মা তার জীবন হারাতে পারে, আবার বিকলাঙ্গ শিশু হতে পারে। তাই গর্ভবতী মায়ের যত্নের ক্ষেত্রে সচেতন হোন।