গর্ভপাত খুব খারাপ একটি বিষয়। যাদের এরকম হয় তারা জানে এর কষ্ট কি। কারণ, আট নয় মাস গর্ভে সন্তান থাকার পরে কোন কারণে তা যদি নষ্ট হয়ে যায় তবে এটা মেনে নেয়ার মতো নয়।
তো আজ আমরা আলোচনা করবো গর্ভপাত বা গর্ভ নষ্ট হওয়া থেকে কিভাবে কাউকে বাঁচানো সম্ভব কেবল হোমিও ওষুধ প্রয়োগ করার মাধ্যমে। তো আর কথা নয় – সরাসরি যাচ্ছি মূল আলোচনায়।
১. গর্ভপাত, গর্ভ নষ্ট হওয়া
গর্ভস্থ ভ্রুণের (শিশুর) শারীরিক বৃদ্ধি পূর্ণতা পাওয়ার পূর্বেই প্রসব হওয়াকে গর্ভপাত বা গর্ভ নষ্ট হওয়া বলে। বিশেষত গর্ভধারণের ২০ সপ্তাহ পার হওয়ার পূর্বেই ডেলিভারি হওয়াকে।
ইহা আঘাত, ইনফেকশান, ভয় পাওয়া, জরায়ুর ক্রটি, ঔষধের রিয়েকশানসহ বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এটা খুবই মর্মান্তিক একটি বিষয়।
যেসব ওষুধ ব্যবহার করা যায়:
Caulophyllum: কলোফাইলাম গর্ভপাতের একটি উত্তম ঔষধ যাতে ভুয়া প্রসব ব্যথা দেখা দিলে এটি প্রয়োগ করতে হয়।
যাদের প্রতিবারই একটি নির্দিষ্ট সময়ে গর্ভ নষ্ট হয়ে যায় তারা একমাস পূর্ব থেকেই অগ্রিম এই ঔষধটি খাওয়া শুরু করতে পারেন (শক্তি ৬)।
Sepia: ডা. হেরিং বলতেন যে, ঘনঘন গর্ভপাতে অভ্যস্থ নারীদের অবশ্যই সিপিয়া খাওয়া উচিত। সাধারণত পঞ্চম মাসে অথবা পঞ্চম মাসের পরে গর্ভ নষ্ট হলে তাতে সিপিয়া প্রযোজ্য।
সিপিয়ার প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো তলপেটে বল বা চাকার মতো কিছু একটা আছে বলে মনে হয়। পায়খানার রাস্তা ভারী বোধ হয়।
তলপেটে নিচের দিকে ঠেলামারা ব্যথা হয়, রোগী তলপেটের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পায়খানার রাস্তা দিয়ে সব বেরিয়ে যাবে এই ভয়ে দুই পা দিয়ে চেপে ধরে রাখে এবং স্বামী-সন্তান ও চাকরি-বাকরির প্রতি আকর্ষণ কমে যায় সহ ইত্যাদি।
Sabina: এটি গর্ভধারণের তৃতীয় মাসের অ্যাবর্শন ঠেকানোর ক্ষেত্রে একটি ভালো ঔষধ। ইহা রক্তক্ষরণের মাধ্যমে শুরু হয় এবং পরে কোমরের পিছন থেকে সামনের দিকে ব্যথা ছড়াতে থাকে।
রক্তের রঙ হালকা লাল এবং কখনও চাকা চাকা। রক্তক্ষরণ হয় একটু পরপর জোয়ার-ভাটার মতো। রোগী গরম ঘর এবং গরম বাতাসে অসুবিধা বোধ করে।
Cinamomum: যে ক্ষেত্রে কেবল রক্তক্ষরণ ছাড়া গর্ভপাতের অন্য কোন লক্ষণ নাই, তাতে সিনামমাম প্রযোজ্য। তাতে রক্তের রঙ থাকে উজ্জ্বল লাল এবং পরিশ্রম করলে রক্তক্ষরণ বৃদ্ধি পায়।
Arnica Montana: তলপেটে আঘাত পাওয়ার কারণে যদি গর্ভ নষ্ট হওয়ার আলামত দেখা দেয়, তবে আর্নিকা আপনাকে রক্ষা করবে।
হ্যাঁ, মারাত্মক ধরণের ইনফেকশন বা সেপটিক সমস্যার কারণেও যদি গর্ভপাতের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তাতেও আর্নিকা প্রযোজ্য।
Secale cornatum: সিকেলী কর ঔষধটি প্রথম দিকের যে-কোন গর্ভপাত বিশেষত তৃতীয় মাসের গর্ভপাতে প্রযোজ্য। এতে কালচে রঙের পাতলা রক্তক্ষরণ হয়।
প্রসব ব্যথার মতো তলপেটে ঠেলামারা ব্যথা থাকে। রোগীর শরীর ঠান্ডা থাকে কিন্তু সে পাখা দিয়ে বাতাস করার জন্য বলতে থাকে ।
Belladonna: গর্ভপাতে বেলেডোনা‘র লক্ষণ হলো উজ্জ্বল লাল রঙের এবং গরম রক্তক্ষরণ হবে, কোমরে ব্যথা, মাথা ব্যথা
এবং জরায়ুতে অস্বসি-কর টাটানি।
Cimicifuga/Actea Racemosa: একটিয়া রেস্থির গর্ভপাতের ব্যথা তলপেটের একদিক থেকে অন্যদিকে দৌড়াঁতে থাকে। যেসব মহিলার বাতের সমস্যা বেশী, তাদের ক্ষেত্রে ইহা ভালো কাজ করে।
Viburnum Opulus: ভাইবারনাম ওপুলাস গর্ভপাতের একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ যাতে তীব্র ব্যথা থাকে এবং ব্যথা কিছুক্ষণ পরপর বৃদ্ধি পায়।
এটি গর্ভপাতের প্রথম দিকে ব্যবহার করলে উত্তম ফল পাওয়া যায়। নড়াচড়ায় রোগীর অবস্থা খারাপ হয় এবং বিশ্রামে থাকলে ভালো হয়।
Chamomilla: রাগ করার কারণে, ঝগড়া-ঝাটির কারণে বা ক্রুদ্ধ হওয়ার কারণে গর্ভপাতের সূচনা হলে ক্যামোমিলা খাওয়ান।
Kali Carbonicurn: সাধারণত গর্ভধারণের দ্বিতীয় মাসে গর্ভপাত হলে তাতে ক্যালি কার্ব প্রযোজ্য। ক্যালি কার্বের প্রধান লক্ষণ হলো ভীষণ দুর্বলতা, বেশী বেশী ঘামানো এবং কোমর ব্যথা।
এছাড়া চোখের ওপরের পাতা ফোলা থাকে, ঘুমের মধ্যে পায়ে টাচ করলে চমকে ওঠে, যৌনমিলনের পরে চোখে সমস্যা হয় সহ ইত্যাদি।
পরিশেষে বলা যায়, কেউ-ই চায় না তার গর্ভস্থ শিশু সময়ের আগেই কোন কারনে বিপদে পড়ুক। উপরে যেসব ওষুধের কথা বলা হয়েছে তা নিজে নিজে কখনো প্রয়োগ করতে যাবেন না।
যেহেতু এটা একটা জটিল বিষয়, তাই নিকটস্থ অভিজ্ঞ ভালো কোনো হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করবেন। আশা করা যায়, ১০ মাস ১০ দিনে কোন সমস্যা হবে না ইনশাআল্লাহ।
আরও পড়ুন: ডায়াবেটিস মাত্র ১১ দিনেই নির্মূল করার সেরা উপায়।