ইংরেজি Abortion শব্দটি ল্যাটিন শব্দ থেকে এসেছে। যার অর্থ গর্ভপাত, অকালে গর্ভত্যাগ, ভ্রূণ গর্ভাবস্থার ২৮তম সপ্তাহের আগেই অর্থাৎ একটি টেকসই পরিপক্ক পর্যায়ে পৌছানোর আগেই গর্ভপাত। একটি গর্ভপাত গর্ভাবস্থার বিনষ্টকরণের হয়। এটা স্বতঃস্ফূর্ত হতে পারে বা একটি অস্ত্রোপচার পদ্ধতি বা নির্দিষ্ট ধরনের ঔষধ ব্যবহারের কারণেও হতে পারে, কিন্তু গর্ভপাত শব্দটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়, যদি এটি কোন নির্দিষ্ট কারণে হয় (Induced abortion) । অনিরাপদ গর্ভপাত প্রায় সব দেশে বিভিন্ন পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে এটি বৈধ, যদিও মাতৃমৃত্যু ও রোগ
গর্ভপাত প্রধান একটি কারণ।
গর্ভপাতের কারণসমূহঃ
গর্ভপাতের দুটি প্রধান কারণ হলো ভ্রূণ এবং মাতৃ সমস্যা। ভ্রূণ সংক্রান্ত সমস্যার প্রধাণ কারণ হলো ভ্রূণের জেনেটিক গঠণ। গর্ভাবস্থার প্রথম তিনমাসের মধ্যে গর্ভপাতের অধিকাংশ কারণ হলো ভ্রূণ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, যা ক্রোমোজোম
অস্বাভাবিকতা বা টেরাটোজেনিক (teratogenic) ফ্যাক্টরের কারণে হয়। প্রতিরোধমূলক ফ্যাক্টরও গর্ভপাতের কারণ হতে পারে। তাড়াতাড়ি গর্ভপাতের আরেকটি সাধারণ কারণ হলো জরায়ুতে ভ্রণের রোপণে (implantation)
অস্বাভাবিকতা। প্ল্যাসেন্টায় রক্ত সঞ্চালনের ব্যত্যয় ঘটলে পুষ্টিহীন ভ্রূণ তৈরী করে এবং ভ্রণ রোপনে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়, যাতে গর্ভপাত হতে পারে।
ডেসিডুয়াস ভেসিলাস (deciduas basalis) নিয়ন্ত্রণের জন্য ডিম্বাশয়ের কর্পাস লিউটিয়াম (corpus luteum)
যথেষ্ট প্রোজেসটেরন (progesterone) উৎপাদনে ব্যর্থ হলেও গর্ভপাত হতে পারে।
সংক্রমণের কারণে ভ্রূণ বৃদ্ধির ব্যর্থতাসহ গর্ভপাত ঘটাতে পারে। রুবেলা, সিফিলিস, এবং পলিও এর মত
সংক্রমণ নির্দ্ধিধায় গর্ভফুল বা প্ল্যাসেন্টা ক্ষতি করে এবং জটিলতা তৈরী করতে পারে।
আইসোট্রেটিনন(Isotretinoin) এর মত টেরাটোজেনিক (Teratogenic) ওষুধের কারণেও গর্ভপাত হতে পারে।
অন্যান্য কারণগুলোর মুধ্যে প্রধানত অন্তর্ভুক্তঃ
* বয়স ৪২ বছরের উপর
* গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ধূমপান
* গর্ভাবস্থায় অ্যালকোহল ভোজন
* কিডনি রোগের মত গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা
গর্ভপাত নির্ণয়ঃ
প্রাথমিক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রধানত ডাক্তারী
ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত।
অন্যান্য পরীক্ষার মধ্যে অন্তর্ভুক্তঃ
* আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান – গর্ভের ছবি পেতে সাহায্য
করে।
* শ্রোণীচক্র পরীক্ষা – রক্তপাতের উৎস নির্ণয়
করতে সাহায্য করে।
* প্রস্রাব এবং রক্ত পরীক্ষা – বিটা হিউম্যান
কোরিওনিক গুনাডোট্রোফিন এবং প্রজেস্টেরন
হরমোন মূল্যায়নে সহায়তা করে, যা গর্ভাবস্থা সঙ্গে
সম্পর্কিত।
গর্ভপাত লক্ষণঃ
গর্ভপাত লক্ষণ প্রধানত পেটে মুচড়ানো ব্যথা এবং
হালকা, মধ্য, অথবা গুরুতর যোনি হতে রক্তপাত হতে
পারে, টিস্যুসহ জমাট বাঁধা বা দলা বাঁধা মত
বেরিয়ে আসতে পারে।
গর্ভপাতের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাঃ
সবচেয়ে জনপ্রিয় চিকিৎসা পদ্ধতির একটি হলো হোমিওপ্যাথি। স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে নির্মিত তথ্যের মাধ্যমে ওষুধ নির্বাচন করে খুব সহজেই রোগারোগ্য করা সম্ভব। এই পদ্ধতি শুধু রোগ আরোগ্যই করে তা নয়, সাথে এর রোগের অন্তর্নিহিত কারণও দূর করে।গর্ভপাত চিকিৎসার জন্য রোগীকে অবশ্যই যোগ্যতাসম্পন্ন ও রেজিস্টার্ড
হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। নারীর গর্ভপাত চিকিৎসার জন্য সহায়ক ওষুধ নিম্নরুপঃ
Aconite Nap. – ভয় এবং উত্তেজনার কারণে সৃষ্ট
গর্ভপাতের ঝুঁকিতে কার্যকরী।
Apis Mel. – গর্ভাবস্থার ৩য় মাসের সময় গর্ভপাতের
ঝুঁকিতে কার্যকরী।
Arnica Montana – দুর্ঘটনা জনিত কারণে গর্ভপাতের
ঝুঁকিতে কার্যকরী।
Aletris Far. – দুর্বলতা এবং রক্তাল্পতা কারণে
স্বভাবগত গর্ভপাতের ঝুঁকিতে কার্যকরী।
Chamomilla – মানসিক উত্তেজনার কারণে গর্ভপাতের
ঝুঁকিতে কার্যকরী।
Baptesia – কম জ্বর, মানসিক বিষণ্নতা, শকের ফলে
গর্ভপাতে ঝুঁকি।
Sabina – গাঢ় লাল রক্ত রক্তক্ষরণ, প্রত্যেক দ্বিতীয়
বা তৃতীয় মাসে অভ্যাসগত গর্ভপাত ক্ষেত্রে,
পিছনে এবং যৌনাঙ্গ সামান্য ব্যথায় চমৎকার ওষুধ।
Sepia – গর্ভাবস্থার পঞ্চম থেকে সপ্তম মাসের সময়
গর্ভপাত।
Syphilinum – সিফিলিসের কারণে গর্ভপাত।
Caulophyllum – জরায়ুর দুর্বলতার কারণে অভ্যাসগত
গর্ভপাত।
Crotolus Hor. – জমাটহীন কালো রক্তপাত, পচনশীল
রোগ বা রক্তদূষণের কারণে গর্ভপাত।
Thuja – গনোরিয়া রোগের ইতিহাস আছে এমন নারীর
গর্ভপাত প্রবণতা।
Thyreoidinum – মূল যান্ত্রিক কারণ না থাকলে অকাল
গর্ভপাত প্রবণতা। নারী থাইরয়েড কর্মহীনতার
কারণে গর্ভপাত প্রবণতা থাকলে তা প্রতিরোধ করে,
এটা জরায়ু থেকে ধীর ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য
করে।
Trillium Pend . – গর্ভপাতে রক্তপাত নিয়ন্ত্রণে
সহায়তা করে।
Tuberculinum – যক্ষার কারণে গর্ভপাত।
Pulsatilla – ভীরু, শীতকাতর, পিপাসাহীন নারী,
উত্তেজনাপূর্ণ গর্ভপাতের জন্য একটি চমৎকার
হোমিওপ্যাথি ওষুধ।
Gelsemium – মানসিক উত্তেজনার কারণে গর্ভপাত,
ব্যথা পেট থেকে উর্ধ্বগামী হয় এবং অবশেষে
পিছনে স্থির হয়।
Thlaspi – খুব বেশি রক্তপাত জনিত কারণে গর্ভপাত।
Ipecauc – পেটে ব্যথা এবং বমি বমি ভাবসহ বরাবর
উজ্জ্বল লাল রক্ত প্রবাহ থাকলে এই ওষুধ খুবই
কার্যকরী।