গর্ভকালীন সমস্যা ও সমাধান:
মেয়েদের জীবনের একটি বিশেষ সময় হচ্ছে গর্ভকালীন সময়। এই সময় শরীরের নানা ধরণের পরিবর্তন হয়। নতুন পৃথিবীর মুখ দেখতে নতুন একটি মুখ আসে।
জেনে রাখা ভালো, মা হওয়ার সময় একটি মেয়ের শরীরে আসে নানাবিধ পরিবর্তন ও প্রতিক্রিয়া। তখন কিছু সমস্যাও দেখা দেয়। সেগুলো খুব গুরুতর না হলেও মানিয়ে নেয়ার জন্য বাড়তি যত্নের প্রয়োজন।
আজ আমরা গর্ভকালীন সময়ের কিছু সমস্যা ও সমাধান নিয়ে জানবো।
১। মর্নিং সিকনেস: সকালে ঘুম থেকে উঠার পর বমি-বমি ভাব এবং মাথা ঘোরে। এই অবস্থার নামই মর্নিং সিকনেস। যখন একজন নারী প্রথম সন্তান ধারণ করে তখন এই সমস্যা বেশি হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় মাসে এ সমস্যা সাধারণত দেখা দেয়।
সাধারণত তিন মাসের পর আর এ ধরণের সমস্যা দেখা যায় না অর্থাৎ সেরে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ২৫ শতাংশ নারীর এ ধরণের সমস্যা একেবারে নাও হতে পারে।
মর্নিং সিকনেস থেকে রক্ষার উপায়:
- সকাল বেলা খুব হালকা করে খাবার খেতে হবে। অল্প অল্প করে শুকনো খাবার খাওয়া যেতে পারে যেমন- টোস্ট, বিস্কুট কিংবা আমিষ সমৃদ্ধ খাবার।
- বেশি তেলে ভাজা কিংবা রান্না করা খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। যেসব খাবার দেখলে বমির উদ্রেক হতে পারে কিংবা হয় সেগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো।
- গর্ভকালীন সময়ে যেকোন ওষুধ খাওয়ার সময় খুব সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোনো ওষুধই খাওয়া উচিত নয়।
- হঠাৎ যদি অতিরিক্ত বমি হয়, শরীরে পানি শুন্যতা দেখা দেয় তবে সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
২। পায়ে পানি আসা: গর্ভাবস্থায় পায়ে পানি আসা খুবই স্বাভাবিক। তবে তা যেন খুব বেশি না হয়। যদি খুব বেশি হয় তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না যেন। কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত। তাহলে পায়ে পানি আসা সহ আরও আনুষঙ্গিক কিছু সমস্যার সমাধান সহজ হবে।
নিম্নে ক্রমিক আকারে সেগুলো উল্লেখ করা হলো:
- অনেক সময় নিয়ে পা ঝুলিয়ে বসে থাকবেন না। যদিও থাকেন তবে পায়ের নিচে মোড়া কিংবা টুল দিয়ে নিন।
- খাওয়ার সময় পাতে লবণ কমানোর চেষ্টা করুন অর্থাৎ অতিরিক্ত লবণ খেতে যাবেন না। তা এই সময়ের জন্য ক্ষতিকর।
- বিশ্রাম নেয়ার সময় কিংবা ঘুমের সময় পায়ের নিচে একটা বালিশ রাখতে পারেন।
- যদি পা অনেক বেশি পরিমাণে ফুলে যায়, চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়, মাথা ব্যথা হয় বা রক্তচাপ বেড়ে যায় তবে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৩। কোমরে ব্যথা হওয়া: গর্ভকালীন সময়ে প্রায় ৫০ শতাংশ মেয়ে কোমর ব্যথায় ভোগে। সাধারণত শরীরের ওজন বৃদ্ধি এবং অস্থি সন্ধির শিথিলতার জন্য এমনটা হয়।
তবে অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- অতিরিক্ত উঁচু হিলের জুতা পড়া, প্রস্রাবে সংক্রমণ হওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি। পা উচুঁতে রেখে বিশ্রাম নিলে আরাম পাওয়া যায়।
সবসময় সঠিক ভঙ্গিতে বসবেন কিংবা ঘুমাবেন, শক্ত বিছানা ব্যবহার করবেন এবং কোমরে বালিশ অথবা সেঁক দেবেন (প্রয়োজনে)। এরপরেও ব্যথা বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাওয়ার অনুরোধ রইলো।
৪। ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া: গর্ভকালীন সময়ের ৮ থেকে ১২ সপ্তাহে সাধারণত এই সমস্যাটি বেশি হয়। এ সময় জরায়ুর আকার বড় হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে, মূত্রথলিতে চাপ পড়ে আর তাই এরকম হয়।
১২ সপ্তাহের পরে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া বন্ধ হয়ে গেলেও ডেলিভারি সময়ের কয়েকদিন আগে যখন শিশুর মাথা নিচের দিকে নেমে আসে তখন আবার এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
যদি প্রস্রাবে কোনো ধরণের জ্বালাপোড়া না থাকে এবং তলপেটে কোনো প্রকার ব্যথা না থাকে তবে এ নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই। কোনো ধরণের ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন নেই।
৫। পেট শক্ত হয়ে যাওয়া: গর্ভকালীন সময়ে পেশির সংকোচনের জন্য পেট শক্ত হয়ে আসতে পারে। এরকম ক্ষেত্রে ব্যথা থাকে না এবং অল্প সময় পরেই তা আবার শেষ হয়ে যায়।
তবে পেট যদি দীর্ঘ সময় জুড়ে শক্ত থাকে এবং যদি ব্যথা হতে থাকে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অন্যদিকে, প্রস্রাবে কোনো ধরণের সংক্রমণ কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাওয়া উচিত।
গর্ভকালীন সময়ে মায়েদের নানারকম সমস্যা দেখা দিতেই পারে। এ সময় গর্ভবতী মায়ের নিজের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। নিজের খেয়াল রাখতে হবে।
পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের উচিত গর্ভবতী মায়ের প্রতি যত্নবান হওয়ার। কেননা, সামান্য কারণে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুন: শরীর ও মন ভালো রাখতে করণীয়।
আর গর্ভকালীন সময়ে কিছু সমস্যা আছে যা কেবল গর্ভবতী মা নিজেই অনুধাবন করতে পারেন। কিন্তু তিনি যদি অসহায়ত্ব বোধ করেন তবে সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করতে পারে।
গর্ভবতী মায়ের সবসময় পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে এবং ভারী কাজ করা যাবে না। যেকোন সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অবশ্যই ওষুধ খেতে হবে এবং প্রয়োজনে বিশ্রামে থাকতে হবে।