গরুর মাংস আমাদের সবার পছন্দের শীর্ষে। কিন্তু বর্তমানে কেজি প্রতি দাম ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা হওয়ায় তা সাধারন মানুষ কিনতে পারে না। কিন্তু সম্প্রতি একজন কসাই গরুর মাংস বিক্রি করছেন মাত্র ৫৮০ টাকা দরে এবং এ কারনে তিনি বর্তমানে সারাদেশে ভাইরাল।
গরুর মাংসের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অন্যান্য মাংসের দাম। যেখানে ব্রয়লার মুরগীও স্থান করে নিয়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে মাংস কিনে খাওয়া প্রায় দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।
দেশের পরিবেশ পরিস্থিতি বিচার বিবেচনা করে একজন কসাই (কালু কসাই) ঠিক এসময়ই গরুর মাংস ৫৮০ টাকা দরে বিক্রি করা শুরু করেন। বগুড়ার গাবতলী উপজেলার নশিপুর ইউনিয়নের কদমতলী সিনজি স্ট্যান্ড তিনমাথা মোড়ের মাংস ব্যবসায়ী হলেন নজরুল ইসলাম ওরফে কালু কসাই (৬০)।
সম্প্রতি বললে ভুল হবে, তিনি প্রায় এক বছর ধরে ৫৮০ টাকা দরে (কেজি প্রতি) মাংস বিক্রি করে আসছেন। এতদিন এ খবর বগুড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো। কিন্তু বর্তমানে এ খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারনে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
বগুড়া ছাড়াও কিছুটা দূর থেকেও মানুষ এখন সেখানে যাচ্ছেন মাংস কিনতে। কম দামে বেশি মাংস কিনে নিচ্ছেন সবাই। আর কালু কসাই এর দোকানে সবসময়ই উপচে পড়া ভিড় থাকছে। আশপাশের মাংস ব্যবসায়ীরা যদি দিনে ৩টি গরু জবাই করে বিক্রি করেন সেখানে কালু কসাই বিক্রি করেন ১০টি।
তার ওখানে মাংস কিনতে গেলে লাইনে দাঁড়াতে হয়। কারন, সবসময়ই উপচে পড়া ভিড় থাকে। বর্তমানে তিনি প্রতিদিন গড়ে ৬-৭টি গরু জবাই করে মাংস বিক্রি করছেন। শুক্রবার ছুটির দিনে ক্রেতাদের ভিড় বরাবরই বেশি থাকে। কোন কোন শুক্রবার তিনি ১০টিরও বেশি গরু জবাই করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে গাবতলীর কদমতলীর তিনমাথা সিএনজি স্ট্যান্ড মোড়ের অবস্থান। আর এখানেই কসাই নজরুল ইসলামের মাংসের দোকান।
পুরো বগুড়া শহরে তার চেয়ে কম দামে কেউ মাংস বিক্রি করে না বিধায় অনেক মানুষই মাংস কেনার জন্য ভিড় করেন নজরুল ইসলামের দোকানে।
গাবতলী, ধুনট এমনকি সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলা থেকেও সাত-সকালে মাংস কেনার জন্য ক্রেতারা ছুটে আসেন। ক্রেতারা আসছেন, দেখছেন আর কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। দরদাম করতে দেখা যায় না।
নজরুল কসাই এর দোকানে মাংস কিনতে আসা একই এলাকার ব্যবসায়ী স্বপন কুমার বলেন, “এক কিলোমিটার দূরেই আমাদের বাড়ি। সেখানে মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৮০ টাকায়। আর এখানে ৫৮০ টাকায়। আমি কেন বেশি টাকা দিয়ে সেখান থেকে মাংস কিনবো? তাই এখানে চলে আসি নিয়মিত।”
নিজ গ্রামের চাকরিজীবী মনিরা ফেরদৌসী বলেন, এক বছর ধরে নজরুলের দোকানে কম দামে মাংস বিক্রি হচ্ছে। প্রথম দিকে কেজি প্রতি ৫০০ টাকা করে বিক্রি হতো। চাহিদা বেড়ে যাওয়ার পরে ৫৫০ টাকা করা হয়েছিল।
কম দামে মাংস বিক্রির ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পরে এলাকার মানুষ মাংস কেনার জন্য এখানে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। অন্যদিকে, ইজারাদারদের চাপে বর্তমানে ৫৮০ টাকা দরে মাংস বিক্রি করা হচ্ছে।
কসাই নজরুল আসলে উদার মন-মানসিকতার মানুষ। তা নাহলে তিনি এমন নজির তৈরী করতে পারতেন না। তিনি সীমিত লাভে গরুর মাংস বিক্রি করছেন। সাধারন মানুষ মাংস কিনে খাওয়ার একটু সুযোগ পাচ্ছে তার দোকান থেকে।
আরও পড়ুন: সুলতান’স ডাইনে অভিযান পরিচালনা করে যা তথ্য পেল ভোক্তা অধিদপ্তর