গনোরিয়া রোগ:
গনোরিয়া একটি যৌন বাহিত রোগ বা সংক্রমণ। নিশেরিয়া গনোরিয়া (Neisseria gonorrhoeae) নামক জীবাণুর আক্রমণে এই রোগ হয়ে হয়ে থাকে। প্রাপ্ত বয়স্ক যারা তারাই সাধারণত এ রোগে আক্রান্ত হয়।
গনোরিয়ার জীবানু আক্রমণ করলে তা কেবল যৌনাঙ্গে-ই স্থির থাকে না। ছড়িয়ে পড়ে মুখ এবং পায়ু গহ্বরে।
মনে রাখবেন, এটা আসলে ছোয়াচে রোগ। তাই বলে শরীরের সাথে স্পর্শ লাগলেই এ রোগ হবে এমন নয়।
এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে যদি অনিরাপদ যৌন সঙ্গম (কনডম ছাড়া) করা হয়, মৌখিক বা পায়ু পথে সঙ্গমে মিলিত হয়, তবেই রোগটি ছড়ায়।
যাদের বয়স ২৫ বছরের নিচে এবং যৌনকার্য করেন তাদের বছরে অন্তত একবার এই রোগের পরীক্ষা করা উচিত। সমকামী পুরুষের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
গনোরিয়া রোগ কেন হয়?
আগেই বলা হয়েছে যে, গনোরিয়া রোগটি একটি জীবাণুর কারণে হয়ে থাকে। জীবাণুটির নাম নিশেরিয়া গনোরিয়া।
আর গনোরিয়া রোগে আক্রান্ত এমন কারও সাথে যৌন সঙ্গম করলেও রোগটি হতে পারে। সেদিক থেকে এটি ছোয়াচে রোগ।
জীবাণু আবিষ্কার:
১৮৭৯ সালে অ্যালবার্ট নাইসার নামক একজন চিকিৎসা বিজ্ঞানী এ রোগের জীবাণু আবিষ্কার করেন। সাধারণত ১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী মানুষের মধ্যে এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
সুপ্তাবস্থা:
জেনে রাখুন এ রোগের সুপ্তিকাল ২ থেকে ১৪ দিন। সাধারণত ৪ কিংবা ৬ দিনের মাথায় ধীরে ধীরে লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে।
এ রোগের জীবাণু যখন আক্রমণ করে তখন পুরুষের ক্ষেত্রে মুত্র পথের সম্মুখ অংশে প্রথম আক্রান্ত করে।
আরও পড়ুন: করোনা ভাইরাসের যে লক্ষণগুলো দেখা দিলে হাসপাতালে যেতে হবে।
সময় মতো উপযুক্ত চিকিৎসা না নেয়া হলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে এবং তা প্রোস্টেট গ্রন্থি থেকে শুরু করে শুক্রাশয় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
গনোরিয়া রোগের লক্ষণ:
গনোরিয়া রোগটি পুরুষ এবং নারী উভয়েরই হতে পারে। তাই লক্ষণসমুহের মধ্যে তফাৎ থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
নিচে প্রথমে পুরুষ এবং তারপর নারীদের রোগ লক্ষণসমুহ উল্লেখ করা হলো।
পুরুষের ক্ষেত্রে:
- প্রস্রাব করার সময় প্রচণ্ড জ্বলনী ভাব বা জ্বালাপোড়া হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি প্রস্রাব করতে গেলে ভয় পায়।
- পুং লিঙ্গের সামনের অংশে লালচে ভাব ধরে কিংবা লাল হয়ে যায়। সামান্য ফুলে যেতে পারে।
- লিঙ্গ এর অগ্রভাগ থেকে কিংবা ঘা গুলো থেকে পুঁজ নিঃসৃত হতে পারে।
- বার বার প্রস্রাবের চাপ হতে পারে। অনেকেই ডায়াবেটিস ভেবে ভুল করেন।
- শক্ত পোশাক ব্যবহার করলে শুক্রাশয় কিংবা অন্ডকোষে প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে।
- কিডনী ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। কেননা, মুত্র যে পথে বের হয় সে পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। এর ফলে মুত্র বা প্রস্রাব বাইরে বের হয়ে আসতে পারে না।
আরও পড়ুন: যৌন মিলন বিষয়ক খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা – যা আপনার জানা উচিত।
- বেশিরভাগ মানুষেরই এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ফলে অণ্ডকোষ ফুলে যায়। অনেক সময় ফুলে অনেক বড় হয়ে যায়।
- যারা সমকামী তারা তো মূলত পায়ু পথে মিলন করে। এর ফলে পায়ুপথ সংক্রমিত হয়। পায়ুপথে তীব্র ব্যথা এবং পুঁজ হতে পারে।
- যারা মুখ মৈথুন করে বা অভ্যস্ত তাদের মুখে সংক্রমণ দেখা দেয়। মুখে ঘা এর সৃষ্টি হয় এবং তার সাথে সাথে গলা ব্যথা হয়।
- দীর্ঘদিন ধরে আক্রান্ত থাকলে অস্থিসন্ধি প্রদাহ, মস্তিষ্কের প্রদাহ, ত্বকে বিভিন্ন প্রকার ক্ষত, সেপটিসেমিয়া সহ হৃদপিণ্ডের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
নারীদের ক্ষেত্রে:
- পুঁজ এর মতো হলুদ স্রাব বের হয়।
- মিলনের সময় যোনিপথে জ্বালাপোড়া করে। প্রস্রাবের সময় মুত্রনালীতে জ্বালাপোড়া করে।
- অনেক সময় কারও কারও ক্ষেত্রে কোনো প্রকার লক্ষণ দেখা নাও যেতে পারে।
- আক্রান্ত মহিলাদের অনেকের মধ্যে তলপেটে ব্যথা হতে দেখা যায়।
- ঋতুস্রাব সময় মতো হয় না। হলেও দেরিতে হয়, স্রাবে গন্ধ হয়।
- অল্প সংখ্যক মহিলারা এ রোগের কারণে বন্ধ্যা হয়ে যেতে পারে।
- গর্ভকালীন সময়ে রক্ত ক্ষরণ দেখা দিতে পারে।
- মাংস পেশিতে খিঁচুনি বা টান হতে পারে। এটা পুরুষেরও হতে পারে।
চিকিৎসা:
সাধারণত গনোরিয়া রোগের চিকিৎসায় চিকিৎসকগণ বিভিন্ন ধরণের অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করেন।
আর অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে যে চিকিৎসা করা হয় তা সবচেয়ে বেশি কার্যকরী। এখন পর্যন্ত এটিই বহুল প্রচলিত।
চিকিৎসার ক্ষেত্রে এজিথ্রোমাইসিন, ডক্সিসাইক্লিন ও সেফট্রায়াকজন জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিকগুলো ব্যবহার করা হয়।
নিয়মিত চিকিৎসা নিলে এ রোগ অল্প দিনেই সেরে যায়। তবে কয়েক মাস পর পর আবার চেক আপ করে নিতে হয়।
মহিলাদের ক্ষেত্রে, গর্ভাবস্থায় যদি এ রোগ দেখা দেয় তবে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করা উচিত। নচেৎ গর্ভের বাচ্চার সমস্যা হতে পারে।
পরামর্শ ও করনীয়:
গনোরিয়া রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে যৌন মিলন বিরত রাখুন। তবে একান্ত প্রয়োজনে যদি মিশতেই হয় তবে কনডম ব্যবহার করুন।
আরও পড়ুন: সোরিয়াসিস নামক চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায়।
রোগে আক্রান্ত হয়ে গেলে দ্রুত চিকিৎসা নিন এবং এ সময় যৌন মিলন থেকে বিরত থাকুন। পায়ু বা ওরাল সেক্স একদম পরিহার করুন। সমকামিতা বন্ধ করুন।
কোনো ধর্মেই সমকামিতাকে স্থান দেয়া হয়নি। এটা সমাজ তথা শরীরের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনে না।
একাধিক ব্যক্তির সাথে যৌন সঙ্গমে বিরত থাকুন। সামাজিক বিধি-নিষেধ মেনে চলুন। রোগের লক্ষণগুলো স্বাভাবিক মনে হলেও দীর্ঘদিন চিকিৎসা না করলে মারাত্মক কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।