ক্যান্সার একটি মরণব্যাধি। ক্যান্সারে আক্রান্ত অধিকাংশ মানুষই মারা যায়। গুটি কয়েক মানুষ বিভিন্ন থেরাপি এবং খুবই ব্যয়বহুল চিকিৎসা নিয়ে কয়েক বছর বেঁচে থাকতে পারে।
এই ক্যান্সার এমনি এমনি হয় না। কোনো না কোনো কারণে হয়। গবেষক’রা আজ পর্যন্ত অনেকগুলো কারণকে চিহিৃত করেছেন।
এখন আপনি যদি এই কারণগুলো তৈরী না করেন বা একটু সচেতন থাকেন তবে ক্যান্সার আপনার ধারে কাছেও আসবে না। যদিও রোগ ব্যাধি কার কখন কিভাবে হবে তা বলা মুশকিল কিন্তু তবুও আপনি সাবধানতা অবলম্বন করুন। সৃষ্টিকর্তা নিজেই সব ব্যাপারে সাবধান হতে বলেছেন।
আজ আমরা ক্যান্সার কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় তা জানবো। নিচে ক্যান্সার থেকে বাঁচার জন্য তথ্য প্রতিরোধের জন্য যা যা করা দরকার তা পয়েন্ট আকারে তুলে ধরা হলো:
১. অ্যালকোহল ছেড়ে দিন:
মদ, বিয়ার ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তা ছেড়ে দিন। এটি দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অ্যালকোহল পানের সঙ্গে অনেক ধরনের ক্যান্সার জড়িত। যেমন- স্তন ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার, গলায় ক্যান্সার ইত্যাদি। অ্যালকোহল আমাদের ডিএনএ-কে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
২. ধূমপান ত্যাগ করুন:
প্রথমেই সিগারেট ত্যাগ করার কথা না বললেই নয়। এটি যে মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনে তা বলার মতো না। দেহের যে কোষগুলোতে ক্যান্সার বাসা বাঁধতে পারে, ধূমপান সে কোষগুলোতে ক্যান্সার ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। আপনি যেই হোন না কেন, ধূমপান ত্যাগ না করলে ক্যান্সার থেকে দূরে থাকা সম্ভব নয়।
৩. খাদ্য তালিকা বদলে ফেলুন:
খাদ্য তালিকা বদলে ফেলে আমরা অনেক সুস্থ জীবন কাটাতে পারি। সবজি, ফল এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারের তালিকা তৈরি করুন।
এগুলো বাওয়েল ক্যান্সারের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেবে। তা ছাড়া পুষ্টিকর খাবার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয়। প্রক্রিয়াজাত খাবার, সম্পৃক্ত ফ্যাট এবং লাল মাংসের কারণে ব্রিটেনে সবচেয়ে বেশি বাওয়েল ক্যান্সার হয়।
৪. পারিবারিক ইতিহাস জানুন:
বংশ বা পরিবারে ক্যান্সারঘটিত কোনো ইতিহাস রয়েছে কিনা তা খুঁজে বের করে জানার চেষ্টা করুন। যেমন- পরিবারের কারো স্তন ক্যান্সার থাকলে আপনারও এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
৫. সূর্যের আলো থেকে নিরাপদ থাকুন:
সকালে সূর্য উঁকি দিলে কার না মন চায় সেই আলোতে বের হয়ে যেতে। এটা ভালো, কিন্তু অতিরিক্ত সূর্যের আলোতে ম্যালিগনান্ট মেলানোমার মতো ত্বকের ক্যান্সারের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই উত্তপ্ত সময় সূর্যের আলো থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন।
৬. রাসায়নিক পদার্থ:
নানা ধরনের খাবার, দূষিত বায়ু এবং দূষিত পানি থেকে আমরা বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ গ্রহণ করি। এসব পদার্থ বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
যেমন- ভবন তৈরির সময় অ্যাসবেসটস নামে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয় তা ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে কাজ করার সময় সাবধানতা অবলম্বনের জন্য হাতে গ্লাভস, মুখে কাপড় পরে কাজ করা উচিত।
৭. ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন:
স্বাস্থ্যকর ওজন ভালো, তবে অতিরিক্ত ওজন মোটেও ভালো নয়। নিজের ওজন নিয়ন্ত্রণ ক্যান্সার থেকে দূরে থাকার বড় একটি উপায়। এ ছাড়া ওজনের সঙ্গে দেহের নানা সমস্যাও জড়িত।
দেখা গেছে, বডি ম্যাস ইনডেক্স (বিএমআই) অনুযায়ী স্বাভাবিক ওজন অপেক্ষা ৩০ শতাংশ বেশি থাকলে স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ৩০% বেড়ে যায়।
পরিশেষে বলা যায়, মরণব্যাধি ক্যান্সার থেকে বাঁচার জন্য একটু খানি সচেতনতা অবলম্বন করা কঠিন কিছু নয়। কিন্তু একবার যদি ক্যান্সার হয়েই যায় তবে তো আর করার কিছুই থাকে না।
যাই হোক, ক্যান্সার কারও হোক এটা আমরা কেউ-ই চাই না। সবাই সুস্থ থাকুক, ভালো থাকুক। আর সবার মধ্যে ক্যান্সার বিষয়ক সচেতনতা বাড়ুক এই কামনাই করছি।
আরও পড়ুন: জন্ডিস রোগ থেকে হতে পারে লিভার সিরোসিস – প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো জেনে নিন।