কোলেস্টেরল এক ধরনের চর্বিজাতীয়, তৈলাক্ত স্টেরয়েড যা কোষের ঝিল্লি বা (সেল মেমব্রেন)-এ পাওয়া যায় এবং যা সব প্রাণীর রক্তে পরিবাহিত হয়।
স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সেল মেমব্রেনের এটি একটি অত্যাবশ্যক উপাদান । এই উপাদান মেমেব্রেনের মধ্য দিয়ে তরল পদার্থের ভেদ্যতা সচল রাখে এবং তার তারল্য বজায় রাখে।
এছাড়াও কলেস্টেরল একটি জরুরি প্রিকার্সার মলিকিউল যা বাইল আসিড, স্টেরয়েড হরমোন এবং স্নেহজাতীয় পদার্থে দ্রাব্য ভিটামিনের জৈব সংশ্লেষ ঘটায় । কলেস্টেরল সবচেয়ে জরুরি স্টেরল যা প্রাণীদেহে সংশ্লেষিত হয় ।
কিন্তু অন্যান্য ইউকারইওট যেমন গাছপালা এবং ছত্রাকের দেহে এটি অল্প পরিমাণে সংশ্লেষিত হয় । প্রোক্যারিওট যেমন ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে এটি একবারেই দেখা যায় না ।
এই নাম কলেস্টেরলের উৎস গ্রিক শব্দদ্বয় কলে – (পিত্ত) এবং স্টেরস (ঘন পদার্থ); শব্দের শেষের রাসায়নিক বিভক্তি -অল অর্থাৎ এলকোহল কারণ ফ্রাসোয়া পুলেতিয়ার দে লা সল ১৭৬৯-এ প্রথমে কলেস্টেরলকে পিত্তাসয়ের পাথর হিসেবে চিহ্নিত করেন। যাইহোক ১৮১৫-এ রসায়নবিদ ইউজিন শেভ্রিউল এই যৌগিকের নাম দেন “কলেসটেরাইন”।
কোলস্টেরলের সমস্যায় ভুগেন বেশিরভাগ মানুষ। অত্যাধুনিক জীবনযাত্রা এবং খাওয়ার অভ্যাস বাড়িয়ে দেয় এই রোগ। কোলস্টেরলের হাত থেকে বাঁচতে অনেকেই ওষুধ খান। কিন্তু ওষুধ না খেয়েই শুধুমাত্র খাবার খেয়েই কমিয়ে ফেলা যায় এই রোগটিকে।
এবার দেখে নিন ঠিক কি কি ধরনের খাবার খেয়ে স্বাভাবিক রাখা যায় এই রোগকে:
১. ওট খান:
যে সমস্ত খাবারে ফাইবারের পরিমাণ খুব বেশি সেই সমস্ত খাবার খান। নিজের ব্রেকফাস্টে ওট খেতেই পারেন। এতে থাকা ফাইবার আপনার কোলস্টেরল স্বাভাবিক রাখে।
যা শরীরের খারাপ কোলস্টেরলের আধিক্য কমিয়ে ভালো কোলস্টেরলের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। ওটের মধ্যে কলা মিশিয়ে খেতে পারনে। কলা কোলস্টেরলের জন্য খুবই উপকারি।
২. মাছ এবং ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড:
ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি ভালো উৎস হল মাছ। ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরে কোলস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হার্ট অ্যাটাকের হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়া এটি রক্তকে জমাট বাঁধতে দেয় না।
৩. আখরোট এবং আমন্ড খান:
আখরোট এবং আমন্ড কোলস্টেরলের পক্ষে খুবই উপকারি। এগুলি খারাপ কোলস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। এতে ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। এছাড়া পিনাট, পাইন নাট ইত্যাদিও কোলস্টেরলের পক্ষে খুবই কার্যকরী।
৪. ওলিভ অয়েল:
যে কোনও খাবারে ওলিভ ওয়েল মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হার্টকে সুস্থ রাখে। এতে ফ্যাটের পরিমাণ অনেক কম থাকে। যা কোলস্টেরলের জন্য খুবই ভালো।
৫. শাক:
সবুজ জিনিস অথবা শাক শরীরের পক্ষে খুবই ভালো। এছাড়া কমলা লেবু এবং টক দইও কোলস্টেরল স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। ভারী খাবার খাওয়ার পরে স্যালাডে খেয়ে নিতেই পারেন লেবু বা শসা।
পরিশেষে বলা যায়, কোলেস্টেরল শরীরের জন্য প্রয়োজন কিন্তু অতিরিক্ত নয়। আসলে অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়। শরীরে কোলেস্টেরল বেশি থাকলে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। তাই শরীরে কোলেস্টেরল এর মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে সচেতন হওয়া জরুরী।
আরও পড়ুন: ক্যান্সার প্রতিরোধ করার জন্য আজ থেকেই এই কাজগুলো করুন।