বাংলাদেশ মূলত কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের অর্থনীতি এখনও অনেকটাই কৃষি নির্ভর। এখনও ৭০ শতাংশ মানুষ কৃষক অর্থাৎ কৃষি কাজ করে তারা জীবিকা নির্বাহ করে।
কথায় কথায় আমরা বলি, কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। কথা কিন্তু সঠিক। তাহলে জনগণ বাঁচবে কিভাবে? এই প্রশ্নের উত্তর একেক জন আসলে একেকভাবে দেবে।
আসলে জনগণ আর কৃষক কি আলাদা? মোটেও নয়। জনগণ বলা হয় দেশের আপামর জনগোষ্ঠীকে। কৃষক, ছাত্র, চাকরিজীবি সহ সকল শ্রেণীর সবাইকে নিয়েই জনগণ। কিন্তু কৃষক হলো মাত্র একটা শ্রেণী যারা কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে।
এখন, কৃষক’রা উৎপাদন করে। সেগুলো বাজারে বিক্রি করে। তারা এভাবেই জীবিকা নির্বাহ করে। আর অন্যান্য পেশাজীবি যারা আছে তারা বাজার থেকে কিনে খায়। তারা কিন্তু উৎপাদন করে না।
এখন কথা হলো, দেশের বাজার ব্যবস্থা স্থিতিশীল রাখার জন্য শুধুমাত্র এক শ্রেণীকে সুবিধা দিলে কিন্তু হবে না। সুবিধা সব শ্রেণীকেই দিতে হবে। যারা উৎপাদন করে তাদেরকেও সুবিধা দিতে হবে এবং যারা কিনে খায় তাদেরকেও সুবিধা দিতে হবে।
সরকার কিন্তু সব হাতে হাতে তুলে দিবে না। সরকার এখানে কেবল ঘোষক হিসেবে কাজ করবে। ক্রমান্বয়ে সরকারের যে প্রতিনিধি দল রয়েছে যারা কৃষক পর্যন্ত পৌছে যাবে তাদের কাছে হলো মূল কাজ।
তারা সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো কৃষক পর্যায়ে জানাবে। জনসাধারনকে জানাবে। তাহলেই যেকোন কর্মসূচি সফল হবে এবং যেকোন অস্থিতিশীল পরিবেশ অনুকূলে আসবে।
বর্তমান বিশ্বে প্রায় দেশেই বাজার ব্যবস্থা অস্থিতিশীল। আমার নিজের বিশ্বাস, ঐসব দেশে হয়তো উৎপাদনের সত্যিকার ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে সত্যিকার ঘাটতি নেই।
বাংলাদেশে বাজার ব্যবস্থা অস্থিতিশীল হওয়ার পেছনে কিছু মানুষ দায়ী। তারা হলো মধ্যম পন্থার লোক। অর্থাৎ কৃষকও নয় আবার যারা কিনে খায় তারাও নয়। এখানে দায়ী হলো মাঝখানে যারা কেবল হাত বদল, পাড়া বদল এর কাজটি যারা করে তারা।
আমার জানামতে, কৃষকদের জন্য সরকার অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে। অনেকগুলোই সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। এখন তো বাজারে সার, কীটনাশকের কোন অভাব নেই।
বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে কৃষক’রা এককালীন কৃষি ঋণ নিতে পারছে। আবার, ভর্তুকি পাচ্ছে। কিন্তু সাধারন জনগণ কি পাচ্ছে। যারা ঢাকা শহরে বাস করে, মাসে ১০ বা ১৫ হাজার টাকা স্যালারী পায় তাদের কি অবস্থা?
শুধু কৃষককে বাঁচালে হবে না, এই শহরে বাস করা নিম্ন আয়ের মানুষগুলোকেও বাঁচাতে হবে। এই জন্য বাজার ব্যবস্থা স্থিতিশীল রাখা উচিত।
ধরুন, পঞ্চগড়ে ১ কেজি বেগুনের দাম ২০ টাকা। সেটা ঢাকায় এসে ১০০ বা ১৫০ টাকা কেজি হয়ে যায়। এটা কি করে সম্ভব? এটা কিন্তু ইচ্ছে করলেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
শুধুমাত্র পরিস্থিতি অনুযায়ী আইন করতে হবে এবং তার সঠিক প্রয়োগ করতে হবে। কোন কিছুর দাম বাড়া শুরু করলেই বড় বড় ব্যবসায়ীগণ তাদের কাছে থাকা পণ্য লুকিয়ে রাখেন।
কেন, এসব কেন হচ্ছে? এদের তো শাস্তির আওতায় আনা উচিত। কিছুদিন আগে সময় টিভির খবরে দেখলাম, বাজারে নাকি চিনি নাই। খুচরা বিক্রেতারা চিনি পাচ্ছেন না মিল মালিকের কাছ থেকে। অথচ হাজার হাজার বস্তা চিনি লুকিয়ে রেখেছিলেন বড় বড় ব্যবসায়ীরা।
এসব ব্যাপার প্রকাশ্যে এলেও তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়না। আর তাই এই কাজগুলো তারা মন চাইলেই করতে পারছেন। মহানবী (সাঃ) ব্যবসাকে হালাল বলেছেন। কিন্তু এমন ব্যবসাকে হালাল বলেছেন বলে আমরা মনে হয় না।
একটি ছোট দেশে আমরা অনেক মানুষ বাস করি। পৃথিবীতে এমনও দেশ রয়েছে যার আয়তন আমাদের দেশের তুলনায় ১০ বা ১৫ গুণ বেশি। সেসব দেশে আবার জনসংখ্যা আমাদের তুলনায় অতি নগন্য।
তাহলে আমাদের দেশে একটু অভাব অনটন থাকবে এটা স্বাভাবিক। তাই বলে আকাশ ছোয়া দাম হয়ে যাবে এমনটা কাম্য নয়।
এই যে কাঁচা মরিচ নিয়ে কি কাহিনীটাই না হয়ে গেলো? ৪০০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হলো। এখন আবার সেটা ১৫০ টাকা কেজিতে নেমে এসেছে। তাহলে এই কয়েকদিনে কি কৃষক’রা নতুন মরিচ গাছ লাগিয়ে উৎপাদন করে বাজারে ছাড়লো?
আসলে তো বিষয়টা ঐরকম না। মরিচ ছিলো – যথেষ্ট পরিমাণ ছিলো। কিন্তু হাত-বদল পার্টি দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে কৃষকও তেমন লাভবান হয়নি আবার সাধারন জনগণের তো পাছার ছাল উঠে গেছে।
আমাদের দেশে হলো একতার অভাব। ডিমের এতো দাম। ৫০ টাকা হালি। সারাদেশে একযোগে সাধারন জনগণ যদি ডিম খাওয়া কমিয়ে দেয় তাহলে ডিমের দাম অটোম্যাটিক কমে যাবে।
কিন্তু এটা শুধু স্বপ্নেই সম্ভব। বাংলাদেশে এটা সম্ভব না। তাই আমার জানামতে, বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ খুব সহজে হবে না। সরকার যদি কঠোর থেকে কঠোর হয়, ব্যবসায়ীদের জন্য আইন তৈরী করে তাহলে হয়তো নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
কৃষক এবং যারা কিনে খায় এই দুই দলের জন্যই সরকারের ভাবা উচিত। যারা উৎপাদন করছে তাদেরও যেন কিছু লাভ হয় এবং যারা কিনে খাচ্ছে তারাও যাতে একটু কিনতে পারে।
আর মাঝখানে যারা হাত-বদলের ব্যবসা করে হাজার হাজার টাকা কামিয়ে নিচ্ছে তাদের জন্য কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারন করা উচিত। তারা ব্যবসা করুক, লাভ করুক কিন্তু একটা লিমিট তো আছে। পঞ্চগড় থেকে ২০ টাকার বেগুন ঢাকায় এসে ৫০ টাকা হোক কিন্তু ১০০ টাকা যেন না হয় সেদিকে নজর দেয়া উচিত।
আজকাল মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কগুলো একদম দূর্বল। কেউ কারও কথা চিন্তা করে না। আশপাশে তাকালে দেখবেন, ১০ তলা বাড়ি করেছে কিন্তু নিচে হেটে যাওয়া গলিটুকু পাকা করতে পারে নাই।
এই হচ্ছে মানুষের মানসিকতা। মানসিকতার পরিবর্তন হলে সরকারকেও এতো কঠোর হতে হবে না। ব্যবসা হচ্ছে হালাল। এই হালালের নাম করে আমরা কুকর্ম করছি নাতো।
হয়তো আমার কথাটি কারও কাছে কাল্পনিক হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা সত্যিই তাই। পরকালে অবশ্য সবকিছুর জবাব আল্লাহতায়ালা ঠিকভাবেই দেবেন এবং সঠিক সময়েই দেবেন।
ভালো থাকুক দেশের কৃষক সমাজ, ব্যবসায়ী সমাজ এবং হাত বদল সমাজ। তাদের মধ্যে সমঝোতা তৈরী হোক এবং বাজার ব্যবস্থা সাধারন জনগণের জন্য স্বাভাবিক হোক – এই কামনা করে লেখার ইতি টানলাম।
লিখেছেন: করতোয়া’র সম্পাদক মো. আজগর আলী
আরও পড়ুন: কাউকে কিছু শেখানোর আগে এই ঘটনাটি পড়ার অনুরোধ রইলো