কৃমি রোগ:
কৃমি আসলে কোনো রোগ নয়। কৃমি হলে খুব সাধারণ কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। কৃমিতে ছোট’রা বেশি ভোগে। তবে বড়রাও আক্রান্ত হয়।
পেটে ব্যথা হলে অনেকেই মনে করে ভাজাপোড়া কিংবা তেল-মশলা জাতীয় খাবার খাওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে।
কিন্তু কৃমির কারণেও এই সমস্যাটি দেখা দিতে পারে, হজমের সমস্যা নাও হতে পারে। তাই কৃমি আছে কিনা তা কিছু লক্ষণের মাধ্যমে বোঝা যায়।
যেসব লক্ষণ দেখা যায়:
- শরীর দূর্বল হয়।
- ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়।
- ক্লান্তি লাগে।
- কাশি হয়।
- ডায়রিয়া ও বমি হতে পারে।
- ওজন কমে যায়।
- গ্যাস বা পেট ফাঁপা দেখা দেয়।
কৃমিরোগ দূর করার ঘরোয়া কিছু উপায়:
পদ্ধতি ০১: কৃমিরোগ দূরীকরণে গ্রামাঞ্চলে সাধারণত মধু ও কাঁচা পেঁপের প্রচুর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। প্রক্রিয়াটি হলো- এক গ্লাস হালকা গরম দুধ নিতে হবে।
তারপর সেখানে এক চা চামচ মধু ও এক চা চামচ কাঁচা পেঁপের রস মিশিয়ে খালি পেটে খেতে হবে।
প্রায় ১ সপ্তাহ সময়জুড়ে আপনাকে খেতে হবে। তাহলে আপনার পেটের কৃমি দূর হয়ে যাবে।
পদ্ধতি ০২: কৃমি দূর করতে লবঙ্গ বেশ উপকারী। শুধু কৃমিই নয়, অন্যান্য প্যারাসাইট দূর করতেও লবঙ্গের জুড়ি নেই।
এক কাপ পানি নিন এবং তাতে ৩ থেকে ৪টি লবঙ্গ দিয়ে পানি ফুটিয়ে নিন। তারপর সারাদিন অল্প অল্প করে সেই পানি পান করুন। কৃমি ও কৃমির ডিমসহ দূর হয়ে যাবে।
পদ্ধতি ০৩: কাঁচা হলুদের নানারকম উপকারিতা রয়েছে। কাঁচা হলুদ খালি পেটে চিবিয়ে খেলে কৃমি দূর হয়। কারণ, কাঁচা হলুদে রয়েছে জীবাণুনাশক ও প্রদাহবিরোধী উপাদান।
পদ্ধতি ০৪: নিমপাতা সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। চর্মরোগ দূরীকরণে নিমপাতার ভেষজ গুণ অনেক। কৃমিরোগ দূর করতেও নিম পাতা ব্যবহার করা হয়।
নিমপাতার মাধ্যমে পেটের কৃমি দূর করার জন্য সকালে খালি পেটে হালকা গরম পানির সাথে আধা চা চামচ নিম পাতা (বেটে নিয়ে) মিশিয়ে পান করুন।
অন্তত এভাবে ৫ থেকে ৭ দিন খান। পেটের কৃমি দূর হওয়ার সাথে সাথে অন্যান্য উপকারও পাবেন।
পদ্ধতি ০৫: কুমড়োর বীজ আমরা সবাই চিনি। গ্রামাঞ্চলে প্রায় বাড়িতেই এটি পাওয়া যায়। আর শহরে দোকান থেকে কিনে নিতে হবে।
কয়েকটি কুমড়োর বীজ শিল পাটায় বেটে নিন। তারপর তাতে নারকেল দুধ ও পানি মিশান। তারপর তা সকালে খালি পেটে পান করুন। অন্তত এক সপ্তাহ পান করলে পেটের কৃমিরোগ দূর হয়ে যাবে।
পদ্ধতি ০৬: রসুন আমরা প্রতিদিন খাই। মসলা হিসেবে এর প্রচুর ব্যবহার হয়। কিন্তু আপনি জানেন কি, রসুন হলো অ্যান্টি প্যারাসাইটিক জাতীয় মসলা।
কাঁচা রসুনের অ্যামাইনো পেটের কৃমি দূরীকরণে খুব ভালো কাজ করে। এই জন্য প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই কোয়া রসুন খাবেন। এভাবে সপ্তাহখানেক খেলে সব কৃমি মারা যাবে।
পদ্ধতি ০৭: বাজার থেকে নারকেল এনে তা কুচি করে কেটে ২ টেবিল চামচ পরিমাণ খান। যদি পারেন তবে তিন ঘন্টা পর এক গ্লাস গরম দুধের সাথে দুই টেবিল চামচ ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে খাবেন।
পদ্ধতি ০৮: প্রতিদিন গাজর খেলেও পেটের কৃমিরোগ দূর হয়। গাজর হলো অনেক ভিটামিন সমৃদ্ধ একটি সবজি। গাজরের মধ্যে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ, সি এবং জিঙ্ক যা কৃমি প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
পদ্ধতি ০৯: প্রতিদিন খাবার খাওয়ার পূর্বে যদি সম্ভব হয় তবে অ্যাপল সিডার ভিনেগার খাবেন। অ্যাপল সিডার ভিনেগার পেটের মধ্যে অ্যাসিড এর পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। ফলশ্রুতিতে পরোক্ষভাবে পেটের মধ্যে থাকা প্যারাসাইট ও বিভিন্ন প্রকার লার্ভা মারা যায়।
পদ্ধতি ১০: আনারস খুব সুস্বাদু একটি ফল। এর মধ্যে রয়েছে ব্রোমেলিন এনজাইম। আর এই এনজাইম প্যারাসাইট মারতে খুব সাহায্য করে।
আপনি যদি একটানা কয়েকদিন আনারস খেতে পারেন তবে আপনার পেটে থাকা সব ধরণের কৃমি মারা যাবে।
আরও পড়ুন: মাইগ্রেন রোগ কেন হয়, চিকিসা কি জেনে নিন।
পরিশেষে বলা যায়, কৃমি খুব খারাপ একটি রোগ। পেটে কৃমিরোগ হলে নানারকম অসুবিধা দেখা দেয়। মুখে বারবার থুথু আসে। পেট কামড়ায়।
তাই আপনি যদি বুঝতে পারেন যে আপনার কৃমিরোগ হয়েছে তাহলে দ্রুত চিকিৎসা নিন। উপরোক্ত ঘরোয়া পদ্ধতিগুলোর মধ্যে যেটি আপনার ভালো লাগে সেটি করতে পারেন।
আর যদি ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো আপনার ভালো না লাগে তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কৃমিনাশক ওষুধ খেতে পারেন।