কিসমিস:
কিসমিস এর নাম প্রায় সবাই জানেন। এই ফলটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। কিসমিস স্বাস্থ্যের জন্য নানা দিক থেকে উপকারী।
আমরা অনেকেই হয়তো জানি না, সেই উপকারী দিকগুলো কি। আমাদের দেশে শুকনো ফলের রাজা হলো এটি।
ফলটি দেখতে সোনালী-বাদামী রং এর মতো হয়। চুপসানো এবং ভাঁজ হওয়া আকৃতির হয়। শরীরে অনেক শক্তি যোগায় এই ফল।
মাইক্রোওয়েভ ওভেন কিংবা সূর্যের তাপে এটি তৈরী করা হয়। তাপের ফলে যে ফ্রুক্টোজ তৈরী হয় সেগুলো জমাট বেঁধে যায় এবং তারপর তৈরী হয় কিসমিস।
ঠিক এভাবেই আাঙুর ফল শুকিয়ে তৈরী করা হয় কিসমিস। যেকোন খাবারের স্বাদ এবং সৌন্দর্য দুটোই বাড়ানোর ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত হয় এটি।
কিসমিস এর উপকারিতা:
হাড় সুরক্ষা: ক্যালসিয়ামের ঘাটতি প্রায় মানুষের শরীরেই থাকে। আর এই কারণে হাড়ে অনেকের খুবই ব্যথা হয় যদিও আরও কারণ থাকতে পারে।
কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। এর ফলে কিসমিস খেলে হাড় মজবুত ও শক্ত হয়। এর মধ্যে বোরন নামক মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস থাকে যা হাড়ের ক্যালসিয়াম শোষণে ভূমিকা রাখে।
কেউ যদি প্রতিদিন কিসমিস খায় তবে তার হাড়ের ক্ষয় হবে না। বাত ব্যথা হবে না। সুস্থ্যভাবে সবসময় হাঁটা-চলা ও কাজ-কর্ম করতে পারবে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ: ফ্রি রেডিক্যাল ড্যামেজ শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কিসমিসে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা দেহের কোষগুলোকে ফ্রি-রেডিক্যাল ড্যামেজ হতে রক্ষা করে।
কোষের একটানা বর্ধনকে বাধা দেয়। ফলে ক্যান্সার কোষগুলো বাড়তে পারে না। এছাড়াও কিসমিসে পলিফেনলিক নামক অ্যাসিড রয়েছে যেটাকে ক্যাটেচিন বলা হয়।
মানুষের দেহকে ক্যান্সার মুক্ত রাখতে এই অ্যাসিড এর যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। সাধারণত আঁশ জাতীয় খাবার ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে আঁশ রয়েছে। সুতরাং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত কিসমিস খাওয়া উচিত।
রক্তশুন্যতা দেখা দিলে: রক্তশুন্যতা দেখা দিলে শরীরের মধ্যে যে রক্ত রয়েছে সেই রক্তের উপাদানগুলোর মধ্যে একটি উপাদান কমে যায়। রক্তের সেই উপাদানের নাম হিমোগ্লোবিন।
শরীরে রক্তশুন্যতা দেখা দিলে অবসাদ, অরুচি, মাথা ঘোরানো, চোখে ঝাঁপসা দেখা সহ বিভিন্ন প্রকার শারিরীক অসুবিধা দেখা দিতে পারে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়।
কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে লৌহ উপাদান উপস্থিত থাকে। আর লৌহ উপাদানগুলো রক্তশুন্যতা দূরীকরণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই রক্তশুন্যতা দূরীকরণে প্রতিদিন এটি খেতে পারেন।
রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে: যে কারও জন্য উচ্চ রক্তচাপ ভালো কিছু বয়ে আনে না। বরং শরীরের নানাবিধ ক্ষতি হয় উচ্চ রক্তচাপের কারণে। তাই রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকা সবার জন্যই কাম্য।
কিসমিসের উপাদানগুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। কিসমিসে যতোগুলো উপাদান থাকে তন্মধ্যে পটাশিয়াম একটি। এই পটাশিয়াম রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে ভূমিকা রাখে।
ঘুম কম হলে: রাতে ঠিক মতো ঘুমাতে না পারলে পরেরদিন কোন কাজই ঠিক মতো করা যায় না। নিয়মিত এটি খেলে অনিদ্রা সমস্যা দূর হয়। কারণ, কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে আয়রণ রয়েছে যা অনিদ্রায় উপকারী।
অ্যাসিডিটি নিয়ন্ত্রণে: শরীরে অধিক মাত্রায় অ্যাসিডিটি হলে রক্তে অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলশ্রতিতে, চর্মরোগ, বাত, হৃদরোগ ও ক্যান্সার সহ নানা রোগ হতে পারে। কিসমিস অ্যাসিডিটি কমাতে সাহায্য করে। অ্যাসিডিটি নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত কিসমিস খেতে পারেন।
মোটা হতে চাইলে: অনেকেই চিকন স্বাস্থ্যে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন না। মোটা হতে চান। নিজের শরীরের ওজন বাড়াতে চান।
কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ থাকে যা ওজন বাড়াতে ভূমিকা রাখে। নিয়মিত খেলে সত্যিই কাঙ্খিত মাত্রায় শরীরের ওজন বেড়ে যায়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে: নিয়মিত কিসমিস খেলে শরীরের প্রোস্টগ্রান্ডিয়াল ইনসুলিন রেসপন্স কমিয়ে দেয়। ফলশ্রুতিতে শরীর এর মধ্যে ’হঠাৎ ইনসুলিন বৃদ্ধি’ প্রতিহত হয়। পরোক্ষভাবে ডায়াবেটিস রোধ হয়।
দাঁতের যত্নে: কিসমিসে বিভিন্ন প্রকার ফাইটো ক্যামিক্যাল থাকে যা দাঁতের ক্ষয় ও ক্যাভিটি থেকে সুরক্ষা দেয়। আর প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম বিদ্যমান থাকায় এটি দাঁতকে মজবুত করে।
হজম শক্তি বৃদ্ধি: রাতে কিসমিস ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে তা হজমে খুব উপকার করে। কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। আর ফাইবার থাকার কারণে তা পরিপাকতন্ত্রের উন্নতি ঘটায় এবং হজম শক্তি বাড়িয়ে তোলে।
সৌন্দর্য বর্ধনে: নিয়মিত কিসমিস খেলে দেহের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। ব্রণজাতীয় সমস্যা দূর হয়। শুধু কিসমিস খেতে যাদের সমস্যা তারা কাজুবাদাম মিশ্রণ করে তা খেতে পারেন।
কিসমিস খাওয়ার নিয়ম:
আপনি বিভিন্নভাবে কিসমিস খেতে পারেন। এটা আপনার রুচি এবং ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। তারপরেও নিচে কয়েকটি উপায় উল্লেখ করা হলো।
কাঁচা অবস্থায়: বাজার থেকে কিসমিস কিনে আনার পর তা ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন। তারপর আপনি যতোটুকু পারেন খেয়ে নেবেন। ধুয়ে খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান হোন। কারণ, করোনা সম্বন্ধে আপনি নিশ্চয়ই অবগত।
আরও পড়ুন: নিম ও হলুদের ভেষজ উপকারিতা জানুন।
রান্না অবস্থায়: বিভিন্ন খাবারের সাথে কিসমিস মিশিয়ে রান্না করে খাওয়া যায়। সাধারণত পায়েস রান্নায় কিসমিস এর বহুল ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
ভিজিয়ে রেখে: কিসমিস কিনে এনে রাতে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। পরেরদিন সকালে তা খেয়ে নিন। এভাবে খেতে পারলে খুব বেশি উপকার হয়।
পরিশেষে বলা যায়, শারিরীক বিভিন্ন উপকারিতার জন্য নিয়মিত কিসমিস যে কেউ খেতে পারেন। কিসমিসে কোনো ক্ষতিকারক উপাদান নেই।
বাজারে প্রায় সব ধরণের মুদি দোকানে এটি কিনতে পাওয়া যায়। শারিরীক বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্ত থাকার জন্য মাসে কয়েকদিন এটি খাওয়ার অভ্যাস করুন।