কিডনী সুরক্ষার কিছু উপায়:
কিডনী মানবদেহের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। মানুষের শরীরে মাত্র ২টি কিডনী থাকে। মানব শরীরের পানির ভারসাম্য রক্ষা করে কিডনী।
তাছাড়া দূষিত পদার্থ শরীর থেকে বের করে দিতেও কিডনী কাজ করে। কোনো কারণে যদি কিডনী বিকল বা নষ্ট হয়ে যায় তবে শরীরে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়।
প্রথম অবস্থায় কিডনীর রোগ বোঝা যায় না। এটা ঠিক নীরব ঘাতকের মতো। কিডনীর চিকিৎসাও অনেকটা ব্যয়-বহুল। তাই কিডনীর প্রতি সবসময়ই যত্নবান হোন।
কিডনী ভালো রাখার অনেকগুলো উপায় রয়েছে। তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপায় নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো:
১। বেশি পানি পান করুন: প্রতিদিন অন্তত ৮-৯ গ্লাস পানি পান করুন। তরল খাবার বেশি করে খান। কোনো পরিশ্রমের কারণে শরীর থেকে ঘাম ঝড়লে পানি পান করুন বেশি বেশি। শরীরে পানির ঘাটতি যেনও না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি পান করবেন। নিয়মিত যথেষ্ট পরিমাণ পানি পান করলে কিডনীতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
২। প্রোটিন খাওয়া কমান: অতিরিক্ত গরুর মাংস খাবেন না। এছাড়াও চিপস, ফাস্টফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং ইন্সট্যান্ট নুডলস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। অতিরিক্ত লবণ দিয়ে ভাজা যেকোন খাবার কিডনীর জন্য ক্ষতিকর। আপনি বেশি পরিমাণে ডাল ও মাছ খেতে পারেন। প্রাণিজ প্রোটিন বেশি খেলে কিডনীর দূর্বল টিস্যুগুলোর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৩। পাতে লবণ খাওয়া বন্ধ করুন: অনেকেই তরকারিতে যথেষ্ট লবণ দেয়া স্বত্বেও পাতে লবণ খায়। অতিরিক্ত লবণ কিডনীর জন্য খুবই ক্ষতিকর। প্রতিদিন মানব শরীরে কেবল ১ চা চামচ লবণের চাহিদা থাকে। তাই কিডনী ভালো রাখার জন্য পাতে লবণ খাওয়া বন্ধ করুন।
৪। রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখুন: শরীরের রক্তচাপ মাঝে মধ্যেই চেকআপ করতে হবে। মাসে অন্তত একবার। কিডনীর সমস্যা হতে পারে যদি রক্তচাপ ১৪০/৯০ এর উপরে থাকে। তাই রক্তচাপ যাতে ১৩০/৮০ এর মধ্যে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সাধারণত নিয়মিত ব্যায়াম করলে এবং পাতে লবণ কম খেলে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকতে পারে।
৫। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করুন: যদি আপনার ডায়াবেটিস থাকে তবে তা নিয়ন্ত্রণে রাখুন। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস কিডনীর বিভিন্ন অসুখের পাশাপাশি জটিলতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। রক্তের সুগার ঠিক রাখতে নিয়মিত তা টেস্ট করুন। মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিমিত পরিমাণে খান।
৬। ওষুধ খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান হোন: ব্যথানাশক ওষুধগুলো কিডনীর জন্য হুমকিস্বরুপ। কখনোই নিজে নিজে ওষুধ কিনে খেতে যাবেন না। অবশ্যই যেকোন ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ মতো খান।
৭। ড্রিংকস ত্যাগ করুন: এখানে ড্রিংকস বলতে কোমল পানীয়কে বোঝানো হয়েছে। ড্রিংকস বা এ জাতীয় পানীয়গুলো কিডনীর জন্য ক্ষতিকর। তাই যতোটা সম্ভব এগুলো এড়িয়ে চলুন। পানির পিপাসা পেলে অনুগ্রহ করে বিশুদ্ধ ঠাণ্ডা পানি পান করুন।
আরও পড়ুন: শরীর ও মন ভালো রাখতে করণীয়।
৮। অতিরিক্ত ভিটামিন সি খাবেন না: প্রতিদিন একজন মানুষের জন্য প্রয়োজন মাত্র ৫০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। অতিরিক্ত ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেলে কিডনীতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ভিটামিন সি খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান হোন।
৯। মাদক ত্যাগ করুন: মাদক তথা ধুমপান কিংবা মদপানের কারণে কিডনীতে রক্ত চলাচল কমে যেতে থাকে। একসময় কিডনীর কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে থাকে। মাদক কখনোই জীবনের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনে না। শুধু কিডনী ভালো রাখার স্বার্থে নয় – সুন্দর একটি জীবনের স্বার্থে মাদক পরিহার করুন।