কিডনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। কোন কারনে এটা বিকল হলে বিভিন্ন অসুখ বাঁসা বাধে শরীরে। কিডনীর সমস্যা হতেই পারে। তবে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
কিডনীর সমস্যা হয়েছে এমনটি বোঝার কিছু উপায় রয়েছে। কিছু লক্ষণ রয়েছে যা থেকে আপনি অনুমান করে নিতে পারবেন যে, আপনার কিডনীর সমস্যা হয়েছে।
তবে এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। কারন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া কোনভাবেই পুরোপুরি বলা সম্ভব না যে, আপনার কিডনীর সমস্যা হয়েছে। এখানে যে কথাগুলো (লক্ষণসমূহ) উল্লেখ করা হয়েছে কিডনীর সমস্যা হলে এই লক্ষণগুলো সাধারনত দেখা দেয়।
আপনার সাথে যদি কয়েকটি লক্ষণ মিলে যায় তাহলে ঘাবড়াবেন না। সম্ভব হলে একটু দ্রুত নিকটস্থ কোন কিডনী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বা মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখান। তখন ডাক্তার যা করার আপনাকে করতে বলবে।
তো এবার আমরা কাঙ্খিত সেই বিষয়গুলো জানবো অর্থাৎ কিডনীর সমস্যা হলে যেসব লক্ষণ বা ধরণ দেখা দিতে পারে সেসব বিষয় নিয়ে। আশা করি, মনোযোগ দিয়ে পড়বেন। তো আর কথা নয় – সরাসরি যাচ্ছি মূল আলোচনায়।
মনে রাখতে হবে যে, কিডনীর সমস্যা সম্পর্কে যেকোন স্টেজেই জ্ঞান রাখা অপরিহার্য। এই রোগ নিরাময়ের মূল শক্তিই হলো কিডনীর সমস্যা বা রোগ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন।
অনেকেই ক্রনিক কিডনী রোগে ভুগে থাকেন কিন্তু লক্ষণ বুঝতে পারেন না। পরবর্তীতে কিডনীর সাধারন সমস্যা জটিল সমস্যায় পরিণত হয়।
যদি কিডনী রোগের লক্ষণগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা নেয়া যায় বা জানা থাকে তাহলে সেই অনুযায়ী নিরাময়ের ব্যবস্থা নেয়া সহজ হয়।
কিডনীর সমস্যা হলে যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে:
- কিডনি রোগ হলে এনার্জি কমে যায় এবং অনেক বেশি ক্লান্ত অনুভব হয় সবসময়।
- যে কারও কথাতে মনোযোগ দিতে সমস্যা হয়।
- কিডনীর সমস্যা হওয়ার কারনে যখন কিডনীর কার্যক্ষমতা কমে যায় তখন রক্তের মধ্যে অপদ্রব্য হিসেবে টক্সিন তৈরী হয় এবং এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি দূর্বল ও ক্লান্ত হয়ে যান। কোন বিষয়ে মনোযোগ দেওয়াটা তার জন্য কঠিন হয়ে যায়। এছাড়াও এনেমিয়ার মতো জটিল সমস্যাও হতে পারে।
- রক্ত স্বল্পতার কারনেও দূর্বলতা বা অবসাদগ্রস্ততার মতো সমস্যা তৈরী হতে পারে।
- ঠিক মতো ঘুম হতে সমস্যা হবে।
- ত্বকের শুষ্কতা বেড়ে যাওয়ার দরুন ত্বক ফেঁটে যেতে পারে।
মনে রাখবেন, সুস্থ কিডনী শরীর থেকে বর্জ্য ও অতিরিক্ত তরল বের করে দেয়। একই সাথে লাল রক্তকণিকা তৈরী করে যেটাকে আমরা হিমোগ্লোবিন তৈরী করে।
মানবদেহের হাড়কে শক্তিশালী করে এবং শরীরের মধ্যে খনিজ পদার্থের ভারসাম্য রক্ষা করে। আবার, শুষ্ক ও ফেঁটে যাওয়া ত্বক খনিজ ও হাড়ের অসুখের জন্যও হতে পারে, যা অ্যাডভান্স কিডনি রোগের সহগামী হিসেবে থাকতে পারে যখন কিডনি রক্তের পুষ্টি উপাদান ও খনিজ লবণের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে না।
ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ হবে বিশেষ করে রাতের বলায়। এটা কিন্তু কিডনী রোগের লক্ষণ। কিডনীর ছাকনীগুলো নষ্ট হয়ে গেলে প্রস্রাবের বেগ বেড়ে যায়।
আবার, ইউরিন ইনফেকশনের কারনেও ঘন ঘন মূত্র ত্যাগ হতে পারে। পুরুষের ক্ষেত্রে প্রোস্টেট গ্লান্ড যদি বড় হয়ে যায় তাহলে এইরকম লক্ষণ দেখা দেয়।
এছাড়াও প্রস্রাবের সাথে রক্ত গেলে, প্রস্রাবে বেশি ফেনা উঠলে, পায়ের গোড়ালি ও পায়ের পাতা ফুলে গেলে, মাংসপেশিতে খিঁচুনি হলে, বমি-বমি ভাব হলে, বমি হলে, নিশ্বাসে দূর্গন্ধ হলে, শ্বাস নিতে কষ্ট হলে, সবসময় ঠান্ডা অনুভব করলে, মাথা ঘোরালে এবং কোমর ও পায়ে ব্যথা হলে ধরে নিতে হবে যে, কিডনীর সমস্যা হয়েছে।
পরিশেষে বলা যায়, কিডনীর যেকোন রোগ হলে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। দেরি করলেই দেরি হয়ে যায়। সবকিছুই ম্যানেজ হয় কিন্তু রোগীকে আর বাঁচানো যায় না। তাই আসুন, আমরা সবাই কিডনী সম্পর্কে সচেতন হই, নিজে সুস্থ থাকি এবং অন্যকে সুস্থ রাখি।
আরও পড়ুন: কিডনী ভালো রাখার কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায়