কিডনীর যত্ন বলতে আমরা সচরাচর মনে করি যে, ডাক্তারের কাছে গিয়ে চেকআপ করাতে হবে এবং ঔষধ সেবন করতে হবে। আসলে কি তাই? কখনোই না। কিডনীর যত্ন আপনি ঘরে বসেই নিতে পারেন।
কিডনীর সমস্যা হলে আমরা শুরুতেই বুঝতে পারি না। যখন সমস্যাটা বা রোগটা মিডিয়াম পর্যায়ে চলে যায় এবং আমাদের মধ্যে রোগ লক্ষণ ধরা পড়ে তখন সচেতন হই এবং চিকিৎসা নিই।
কিন্তু এরকমটা হওয়া উচিত নয়। আগে থেকেই আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। কিডনীর প্রতি নজর রাখা উচিত। তো আজকে আমরা ঘরোয়াভাবে কিডনীর যত্ন সম্পর্কে জানবো। আর কথা নয় – চলে যাচ্ছি মূল আলোচনায়।
১. শরীরে ফ্লুয়িড ব্যালেন্স ঠিক রাখা:
কিডনি ভালো রাখতে শরীরের ফ্লুয়িড ব্যালেন্স ঠিক রাখা জরুরি। নিয়মিত প্রচুর পরিমাণে পানি খেলে কিডনি আরও বেশি কার্যকর হবে।
বেশি বেশি পানি খেলে প্রস্রাব থাকবে স্বচ্ছ আর হালকা, আর যদি দেখেন তা হলদেটে বা আরো গাঢ় রং-এর তাহলে বুঝবেন, পানি খাওয়াটা কম হচ্ছে। নিয়মিত প্রয়োজনের তুলনায় কম পানি খাওয়া আপনার কিডনির জন্য খারাপ কিছু বয়ে আনতে পারে।
২. খাবারে থাকুক ভারসাম্য:
শরীরের জন্য খাবার যে দরকার তা তো সবার জানা। তবে শরীরের জন্য খাবারের সঠিক ভারসাম্য রাখা চাই। প্রতিদিনের তালিকাভুক্ত খাবারে যেন মিনারেল এবং ভিটামিনের উপস্থিতি থাকে তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
বিভিন্ন খাবারের পাশাপাশি শাক-সবজি খেতে হবে প্রচুর পরিমাণে। আর আমাদের দেশে প্রায় সারাবছরই মৌসুমি ফল পাওয়া যায়, আর গ্রীষ্মে তো রীতিমত ফল উৎসবই থাকে।
তাই উল্লেখযোগ্য পরিমাণে খেতে হবে বিভিন্ন রকমের ফল। আর এসব খাবার নিয়মিত খেলে তা কিডনিকে ভালো এবং অ্যাকটিভ রাখতে সাহায্য করবে। তবে সেই সাথে অবশ্যই অতিরিক্ত লবণ ও স্নেহ বা চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে যেতে হবে।
৩. গরমে কিডনির বিশেষ যত্ন:
গ্রীষ্মকাল প্রায় এসেই গেছে। আর এই সময়ে বাইরে কাঠফাটা রোদ আর গনগনে গরম কতখানি তা টের পাওয়া যায় বাইরে কাজে বের হলে, বেড়াতে গেলে, খেলাধুলা কিংবা ব্যায়াম করতে গেলে।
অসহ্য এই গরমে অল্পতেই ঘেমে যাওয়া, ক্লান্ত হয়ে পড়ার কারণে শরীরে পানির পরিমাণ কমে যায় অনেকখানি। দেখা দিতে পারে নানা অসুখ-বিসুখ, বাজে প্রভাব পড়তে পারে কিডনির উপরও। তাই গরমের সময় কিডনিকে ভালো রাখতে খেতে হবে স্বাভাবিকের চাইতে বেশি পানি।
৪. ওজন রাখুন নাগালের মধ্যেই:
খাবার ছাড়া আমরা বাঁচতে পারি না এটা ঠিক। তবে অতিমাত্রায় খাওয়ার ফলে ওজন বৃদ্ধি পায়। আর এই ওজন বৃদ্ধি ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস আর উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয় যা কিনা কিডনি রোগের অন্যতম মূল কারণ।
কারণ রক্ত চাপ যদি খুব বেড়ে যায় তবে তা কিডনির জন্য বড় ধরণের হুমকি। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের ফলে রক্তে বেড়ে যাওয়া সুগারও একইভাবে কিডনির জন্য ক্ষতিকর।
তাই অতিমাত্রায় খেয়ে মুটিয়ে যাওয়া নয় বরং পরিমিত খাবার খেয়ে নিজের শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন। যা আপনাকে রাখবে অ্যাকটিভ আর রক্ত চাপ রাখবে নিয়ন্ত্রণে আর ডায়াবেটিস কে রাখবে দূরে। ফলে কিডনি থাকবে ভালো এবং ঝুঁকিমুক্ত।
৫. টুকিটাকি ওয়ার্কআউট চলতে থাকুক:
সারাদিন অফিস, ক্লাস কিংবা কাজের মাঝে ব্যাস্ত থাকি। কখনও টানা এক জায়গাতেই বসে থাকি ঘণ্টার পর ঘণ্টা এতে শরীরে এক ধরণের অলসতা, অসাড়তা চলে আসে।
আর দিনের পর দিন এভাবে চলতে থাকলে শরীরের জন্যও তা খারাপ কিছু বয়ে নিয়ে আসতে পারে। তাই প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১.৩০ ঘণ্টা টুকিটাকি ওয়ার্কআউট করা উচিত।
যেমন একটু হাঁটাহাঁটি, কিংবা জগিং, কিংবা বন্ধুদের সাথে সাইক্লিং করা, আর সুযোগ থাকলে সাঁতারের চেষ্টা করা। সপ্তাহে মাত্র ১.৩০ ঘণ্টা, দিনে ২০-২২ মিনিট ওয়ার্কআউট কি খুব বেশি? অথচ প্রতিদিনের একটুখানি এই ওয়ার্কআউট আপনাকে রাখবে অ্যাকটিভ ও ফিট। যা কিডনিকে ভালো রাখতে সহায়ক ভুমিকা পালন করবে।
পরিশেষে বলা যায়, কিডনী শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। কিডনীর প্রতি খেয়াল রাখা আমাদের সবারই উচিত। উপরে উল্লিখিত বিষয়গুলোর মাধ্যমে আপনি সুস্থ হওয়ার পথে থাকবেন – এটুকু বলতে পারি।
তবে যদি কোন সমস্যা বা রোগ লক্ষণ দেখা দেয় তবে আর দেরি করবেন না। অবশ্যই একজন ভালো কিডনী বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিন এবং সুস্থ থাকুন।
আরও পড়ুন: চুল পড়ে যাওয়ার কারন এবং চিকিৎসা কি