কিডনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। এই অঙ্গ ছাড়া আমরা বাঁচতে পারবো না। কিডনীর ক্ষতি নিয়ে আমরা কেউ তেমন মাথা ঘামাই না। কারন, এটা তো দেখা যায় না।
আপনারা হয়তো জানেন না যে, দুনিয়া জুড়ে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যাচ্ছে কিডনী রোগের কারনে। কিডনীর একটু যত্ন নিলেই এ সংখ্যাটা অনেক কমে আসবে।
কিডনীর ক্ষতি হয় এমন খাবার খাওয়া, কাজ করা এগুলো হতে বিরত থাকতে হবে আমাদের। দৈনন্দিন জীবন-যাপনে অনেক পরিবর্তন নিয়ে আসা কিডনীর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
তো প্রতিদিন আমরা এমন কিছু কাজ করি যার জন্য আমাদের কিডনীর ক্ষতি হতে পারে। আজ সেই ভয়াবহ কারনগুলো (যা আমরা প্রতিদিন করি) এখানে তুলে ধরবো। মনোযোগ দিয়ে পড়লে অনেক উপকার হবে ইনশাআল্লাহ।
কিডনীর ক্ষতি – ভয়াবহ ১০টি কারন
১. পরিমাণমতো পানি পান না করা: এটি আসলে খুব স্বাভাবিক কারন মনে হলেও এটিই প্রধান কারনগুলোর মধ্যে একটি। কিডনীর অন্যতম একটি প্রধান কাজ হলো শরীর থেকে পরিপাক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বর্জ অপসারণ করা এবং লোহিত রক্তকণিকার ভারসাম্য রক্ষা করা।
কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমানে যদি পান না করা হয় তাহলে বৃক্বের রক্তপ্রবাহ চরমভাবে ব্যহত হতে পারে। অন্যদিকে, রক্তে দূষিত রাসায়নিক জমা হতে থাকে। পরবর্তীতে কিডনীর চরম ক্ষতি হয়।
২. দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব না করে থাকা: দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব না করে থাকা প্রাত্যহিক সমস্যাগুলোর একটা। বিশেষত পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেটের অভাবে শহরাঞ্চলের নারীরা এই সমস্যায় বেশি ভোগেন।
দীর্ঘক্ষণ মূত্রাশয় পূর্ণ করে রাখা শরীরে নানাবিধ জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। পেশির ওপর চাপ থেকে ডাইভারটিকিউলোসিসের মতো জটিল রোগ হতে পারে।
এ ছাড়া দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব না করা থেকে হাইড্রোনেফ্রোসিস বা কিডনিতে প্রস্রাবের চাপ বেড়ে যাওয়ার সমস্যা তৈরি হয়। এসব থেকেই কিডনি কর্মক্ষমতা হারায় এবং ডায়ালাইসিস প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে।
৩. বেশি লবণ খাওয়া: বিভিন্ন খাবার-দাবারে মিশে থাকা লবণকে পরিপাক করা কিডনির আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। রান্না করা বা প্যাকেটজাত খাবারে ব্যবহার করা লবণ আমাদের শরীরে সোডিয়ামের বড় উৎস।
কিন্তু পরিপাকের মধ্য দিয়ে এই সোডিয়ামের বেশির ভাগটাই বর্জ্য হিসেবে শরীর থেকে বের করে দিতে হয়। আমরা যখন বেশি বেশি লবণ খাই, তখন এই সোডিয়াম প্রক্রিয়াজাত করা নিয়ে কিডনিকে অনেক বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়। এতে কিডনির ওপর প্রবল চাপ পড়ে।
৪. ক্যাফেইন এর প্রতি আসক্তি: কোমল পানীয় আমাদের খুবই পছন্দের। তৃষ্ণা পেলে আমরা পানি পান না করে অনেক সময় কোমল পানীয় পান করি।
কিন্তু আমরা হয়তো অনেকেই জানি না যে, এগুলোর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যাফেইন মিশ্রিত থাকে। আর অতিরিক্ত ক্যাফেইন শরীরের রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। অতিরিক্ত রক্তচাপ কিডনীর উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং কিডনীর ক্ষতি করে।
৫. ব্যথানাশকের প্রতি নির্ভরশীলতা: মাথাব্যথা, গলাব্যথা যাই হোক না কেন কথায় কথায় ব্যথার ওষুধ খাওয়ার বাজে অভ্যাস আমাদের অনেকেরই আছে। কিন্তু প্রায় সব ব্যথানাশক ওষুধেরই কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে।
কিডনিসহ নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জন্য এসব ওষুধ ক্ষতিকর। গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত ব্যথানাশক ওষুধের ওপর নির্ভরতা রক্তচাপ কমিয়ে দেয় এবং কিডনির কর্মক্ষমতা হ্রাস করে।
৬. বেশি বেশি প্রোটিন খাওয়া: কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়লে লাল মাংস বা গরু-ছাগলের মাংস বেশি খাওয়া ঠিক না। বেশি প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার কিডনির ওপর চাপ তৈরি করতে পারে। তবে, কিডনির সমস্যা না থাকলে বা চিকিৎসকের নিষেধ না থাকলে এমন প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া যেতে পারে।
৭. অ্যালকোহলে আসক্তি: মদ্যপানের অভ্যাস আছে এমন অনেকেরই অনেক সময় মাত্রাজ্ঞান থাকে না। আর খুব বেশি পরিমাণে মদ পান করা কিডনির জন্য খুবই ক্ষতিকর।
অ্যালকোহলে নানা ধরনের টক্সিন থাকে, যেগুলো শরীর থেকে দূর করতে কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে যায়। ফলে কিডনি বাঁচাতে হলে অবশ্যই অ্যালকোহলে আসক্তি কমাতে হবে।
৮. ধূমপানে আসক্তি: যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের অভিমত অনুসারে ধূমপান কিডনিসহ শরীরে সব অঙ্গের জন্যই ক্ষতিকর। এ ছাড়া বিভিন্ন গবেষণাতেই ধূমপানের সঙ্গে কিডনি রোগের সম্পর্ক আছে। সুস্থ কিডনি চাইলে ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করুন।
৯. সর্দি-কাশিকে পাত্তা না দেওয়া: সাধারণ সর্দি-কাশিকে পাত্তা না দেওয়া আমাদের অনেকেরই অভ্যাস। কিন্তু এই সর্দি-কাশিই কিডনির জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। এ ছাড়া নানা গবেষণায় দেখা গেছে কিডনির সমস্যায় ভুগছেন এমন অনেকেরই অসুস্থতার সময়ে ঠিকমতো বিশ্রাম না নেওয়ার ইতিহাস আছে।
১০. রাত জাগা: আমরা অনেকেই রাত জাগি। দিনের কাজ রাতে করি। কিন্তু ঘুমের জন্য রাতই হচ্ছে সর্বোত্তম। আপনি রাতের ঘুম দিনে কাভার করতে পারবেন না।
আপনি হয়তো জানেন যে, ঘুমের সময়ই আমাদের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর টিস্যুর নবায়ন ঘটে। নিয়মিত ঘুমাতে না পারলে কিডনীসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের উপর এই কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। কিডনী তার স্বাভাবিক কাজ করার ক্ষমতা আস্তে আস্তে হারিফে ফেলে।
পরিশেষে বলা যায়, কিডনীর সমস্যা কারোরই না হোক তা আমরা চাই। কিন্তু আমরা পুরোপুরি সচেতন নই। আপনি যদি কিডনীর চিকিৎসা হয় এমন হাসপাতালে যান তাহলে দেখতে পাবেন কি অবস্থা।
উপরে যে কারনগুলো উল্লেখ করা হয়েছে আসলে এসবের পূণরাবৃত্তির প্রভাবেই একসময় আমাদের শরীরের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অঙ্গ কিডনী বিকল হয়ে যায়।
তাই আসুন, আমরা কিডনীর সমস্যা যাতে না হয় সেদিক থেকে নিজেকে সচেতন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলি। সবাই সুস্থ থাকি, ভালো থাকি।
আরও পড়ুন: আর্সেনিক যুক্ত পানি খেলে কিডনী শেষ | বিস্তারিত জানুন