কিডনি ব্যর্থতা মূলত কি?
তীব্র কিডনি ব্যর্থতা এমন একটি অবস্থা যা কিডনি কাজ করা বন্ধ করে দিলে বা রক্ত পরিশোধনের প্রক্রিয়া কমে গেলে ঘটে। তীব্র রেনাল ব্যর্থতায় রক্তে বিষাক্ত পদার্থ জমে থাকে। এটি রক্তের রাসায়নিক গঠনকে প্রভাবিত করে।
অনেকের ক্ষেত্রে কিডনিতে আঘাতের কারণে কিডনি ফেইলিওরের সমস্যা দেখা দিলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন। কারন, কিডনি মানুষের তৃতীয় প্রধান অঙ্গ। আপনি যেমন আপনার হার্টের যত্ন নেন, তেমনি কিডনির যত্ন নেওয়াও খুব জরুরি সবার জন্য।
কিডনির প্রধান কাজ হল আপনার রক্ত থেকে বর্জ্য ফিল্টার করা ও বের করে দেয়া। কিডনি প্রস্রাবের আকারে রক্ত থেকে অতিরিক্ত তরল অপসারণেও সাহায্য করে। কিডনি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতেও সাহায্য করে।
তারা ইলেকট্রোলাইট নিয়ন্ত্রণে এবং শরীরে ভিটামিন ডি সক্রিয় করতে সাহায্য করে। আপনি যদি কিডনিতে কোনো অস্বাভাবিকতা অনুভব করেন, অবিলম্বে চিকিৎসা নিন। কারণ কিডনির সমস্যাকে হালকাভাবে গ্রহণ করা শরীরের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
কিডনি রোগের চিকিৎসা যতভাবে করা যায়
অ্যান্টিবায়োটিক:
ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে ব্যাকটেরিয়ার ধরন নির্ণয়ে রক্ত বা প্রস্রাব কালচার করার প্রয়োজন হতে পারে।
নেফ্রোস্টোমি:
এ বিশেষ পদ্ধতিতে চামড়ার নিচ দিয়ে একটি ক্যাথেটার কিডনিতে পৌঁছানো হয় যার মাধ্যমে বিকল্প পথে প্রস্রাব বের হয়ে আসতে পারে।
লিথোট্রিপসি:
উচ্চ প্রযুক্তির আল্ট্রাসনিক শক ব্যবহার করে কিডনির পাথরকে ছোট করে বিশেষ ব্যবস্থায় বের করে আনার চিকিৎসা পদ্ধতিকে লিথোট্রিপসি বলে। তবে এ পদ্ধতি বেশ ব্যয়বহুল।
নেফ্রেকটোমি:
শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে কিডনি অপসারণকে নেফ্রেকটোমি বলে। কিডনিতে ক্যান্সার অথবা টিউমার হলে বা কোনো কিডনি পুরোপুরি বিকল হয়ে সমস্যার সৃষ্টি করলে নেফ্রেকটোমি করা হয়ে থাকে।
ডায়ালাইসিস:
কৃত্রিম যন্ত্রের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময় পরপর রক্ত পরিশোধন ব্যবস্থার নাম ডায়ালাইসিস। ডায়ালাইসিস বিভিন্ন রকমের হতে পারে যেমন- হেমোডায়ালাইসিস, পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস প্রভৃতি। এটি বেশ ব্যয় বহুল চিকিৎসা পদ্ধতি।
কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট:
অকেজো কিডনি পরিবর্তন করে কোনো দাতার কিডনি সংযোজনকে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট বলে। কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট ব্যয় বহুল এবং এটি করার পর বাকি জীবন নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ সেবন করে যেতে হয়।
কিডনি রোগ থেকে বাঁচার উপায় কিছু উপায়
১. রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা;
২. নিয়ম মেনে ব্যায়াম করা;
৩. দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকিয়ে না রাখা;
৪. সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা;
৫. ধূমপান এবং অ্যালকোহল বর্জন করা;
৬. স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া;
৭. ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন না করা;
৮. নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা;
পরিশেষে বলা যায়, মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো কিডনি। সুতরাং কিডনি ভালো রাখার স্বার্থে নিজেকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। ব্যথার ঔষধসহ যেকোন ঔষধ সেবনে সতর্ক হতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া এবং ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতিরেকে কোন ঔষধই সেবন করা উচিত নয়।
সাধারন চিকিৎসায় এটা ভালো হয় না। তাই আগে থেকেই সচেতন থাকতে হবে। যেসব কারণে কিডনি রোগ হয় সেগুলো থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। তবে অবশ্যই সবসময় সৃষ্টিকর্তার উপর পূর্ণ আস্থা রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: পেটের ডান পাশে ব্যথাকে আর অবহেলা নয় – হতে পারে কঠিন যেসব রোগ