কাল বৈশাখী ঝড়ের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। চৈত্রের শেষের দিকে তথা বৈশাখের শুরুতেই এই ঝড় শুরু হয়। সপ্তাহে দুই তিন পর্যন্ত হয়ে থাকে।
প্রতিবারের ন্যায় এবারও পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় গতকাল কাল বৈশাখী ঝড় বয়ে গেছে। উড়িয়ে নিয়ে গেছে অসংখ্য ঘরবাড়ির টিন। মাটির ঘরগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
বাড়ির আশেপাশে থাকা সাধারন গাছগুলো ভেঙে পড়েছে। কোনটা শিকড়সহ আছড়ে পড়েছে। দেবীগঞ্জের প্রায় বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে চায়না ধান আবাদ করা হয়েছে।
প্রচন্ড বাতাসের কারণে ধানগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেকেই মরিচ চাষ করেছেন। বাতাসের কারণে মরিচ গাছের গোড়ার মাটি নরম হয়ে বহু গাছ নুইয়ে পড়েছে।
কয়েকদিন আগে ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর এলাকায় শিলাসহ বৃষ্টিপাত হয়েছে। কোনো কোনো জায়গায় এক পোয়া ওজনের শিলা পাথর পড়েছে।
সে তুলনায় দেবীগঞ্জে শিলা পাথর পড়েনি। স্থানীয় লোকজনের বরাতে জানা গেছে, খুব ছোট ছোট শিলা পাথর বৃষ্টির সাথে পড়েছে। তবে প্রচন্ড বাতাস হয়েছে।
আর বাতাসের কারণে সাধারণ ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দেবীডুবা ইউনিয়নের বেলতলী পাড়ার বাসিন্দা মোজাম্মেল হক বলেছেন, তার বাসায় তিনটি ঘর। তন্মধ্যে উনি যে ঘরটিতে থাকেন সেটিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
তার সেই ঘরের টিন বাতাসে উড়িয়ে নিয়েছে। টিনগুলো একটু পুরাতন হওয়ায় ঘরজুড়ে বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে। বলা চলে, থাকতে চরম কষ্ট হয়। তার এই মেরামত বাবদ প্রায় পনের হাজার টাকার প্রয়োজন।
দেবীডুবা ইউনিয়নের স্কুলপাড়ার বাসিন্দা কমল রায় বলেছেন, তার তিন বিঘা জমির ধান ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ধান গাছগুলো সব নুইয়ে পড়েছে।
বেলতলী পাড়া গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা আব্দুল জলিল বলেছেন, কেবল বৈশাখের শুরু। প্রথম ঝড়েই যে অবস্থার তৈরী হয়েছে এরকম যদি আরও কয়েকটি ঝড় হয় তবে গ্রামের মধ্যে কিছুই আর অবশিষ্ট থাকবে না।
কয়েক বছর আগে দেবীগঞ্জের পেড়ালবাড়ী ও বেলতলী পাড়া নামক গ্রামের ওপর দিয়ে ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক কাল বৈশাখী ঝড় বয়ে গেছে। ইটের ঘরগুলো পর্যন্ত পড়ে গেছে। কয়েকজন মানুষও মারা গেছে।
তখন থেকেই এইসব এলাকার মানুষের মনের মধ্যে একটু ভয় ঢুকেছে। ঐরকম আরেকটা কাল বৈশাখী ঝড় যদি আবার হয় তবে দেবীগঞ্জ তথা উক্ত এলাকার চরম ক্ষতি হবে।
দেবীগঞ্জ উপজেলার সবগুলো ইউনিয়নের মানুষ মূলত কৃষি নির্ভর। বিভিন্ন ধরণের চাষাবাদ করেই সবার জীবন কাটে। সরেজমিনে দেখা গেছে যে, মাত্র ১৫ শতাংশ ঘর ইটের তৈরী। ১০ শতাংশ ঘর মাটির তৈরী আর বাকি ৭৫ শতাংশ বাড়িই হলো টিনের তৈরী।
নিরাপত্তাসূচক হিসেবে রয়েছে কয়েকটি স্কুল ভবন মাত্র। বেলতলী পাড়ায় বেশ কয়েকটি পরিবার রয়েছে যারা অর্থনৈতিকভাবে একেবারেই অস্বচ্ছল।
স্থানীয় সরকার তথা চেয়ারম্যান ও মেম্বার মহোদয়গণ যদি তাদের প্রতি একটু সুনজর দিতেন তবে সেই পরিবারগুলো হয়তো হাফ ছেড়ে বাঁচতো।
করোনার কারণে বিগত দুই বছরে অর্থনৈতিকভাবে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো পঙ্গু হয়ে গেছে। এর মধ্যে আবার এখন কাল বৈশাখী ঝড় যদি মাঝে-মধ্যেই হয় তবে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো কোথায় যাবে?
আরও পড়ুন: ল্যাপটপ কেন গরম হয়? সমাধান জেনে নিন।
দেবীগঞ্জের স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষকে এই সময়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে কাল বৈশাখী ঝড়ের কবলে যারা নানা দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তাদের পাশে দাড়ানোর জন্য বিনীত অনুরোধ রইলো।