কালোজিরা নামটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। কালোজিরা খুব উপাদেয় একটি খাদ্য উপাদান। সবাই পছন্দ করে। স্বাদেও সেরা। বিশেষ করে ভর্তা খেতে সবাই পছন্দ করে।
কালোজিরা’কে সর্বরোগের মহৌষধ বলা হয়। মহানবী (সাঃ) নিজেও এটি খুব পছন্দ করতেন। বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থে এ বিষয়ক অনেক তথ্য পাওয়া যায়।
প্রায় বাড়ির রান্নাঘরেই যতো উপাদান থাকে তন্মধ্যে কালোজিরা অন্যতম। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ এটিকে খুব পছন্দ করে। কোন ব্যক্তি যদি নিয়মিত কালোজিরা খায় (কাঁচা, ভেজে কিংবা ভর্তা করে) তবে অনেক রোগ থেকে মুক্ত থাকে। তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো- উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, একজিমা, এলার্জি ইত্যাদি।
এটাকে বলা হয় সর্বরোগের মহৌষধ। একটি হাদিস গ্রন্থে এসেছে যে, যখন কোন ব্যক্তির কোনো ওষুধেই আর কাজ করে না তখন কালোজিরা-ই হলো তার সর্বশেষ ওষুধ।
যতো রকমের রোগ আছে সেগুলোর প্রায় সবরকম রোগের ক্ষেত্রেই কালোজিরা ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এমন কোনো রোগের ক্ষেত্রে বলা নাই যে, কালোজিরা খাওয়া নিষেধ।
কালোজিরা-তে যেসব উপাদান রয়েছে:
কালোজিরা হলো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উপাদানে ভরপুর একটি খাদ্য উপাদেয়। এতে আছে ফসফেট, আয়রণ, লৌহ, ফসফরাস, কার্বো হাইড্রেট এবং জীবাণুনাশক বিভিন্ন উপাদান। ক্যান্সার প্রতিরোধক কেরোটিনও কালোজিরায় রয়েছে।
শক্তিশালী বিভিন্ন ধরণের হরমোনও রয়েছে কালোজিরায়। বিভিন্ন গবেষক বলেছেন যে, কালোজিরায় রয়েছে পাচক এনজাইম ও অম্লনাশক উপাদান এবং অম্লরোগের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষেধক।
কালোজিরার বিভিন্ন উপকারিতা:
১. স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিকরণে: নিয়মিত কালোজিরা খেলে মস্তিষ্কের মধ্যে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি হয়। এতে করে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। পুদিনা পাতার রস বা কমলার রস কিংবা এক কাপ চায়ের সাথে যদি কালোজিরার তেল মিশিয়ে খাওয়া যায় তবে দুঃশ্চিন্তা দূর হয়।
দিনে অন্তত তিন বার খেতে হবে। এভাবে খেতে না পারলে শুধু মাত্র সাদা ভাতের সাথে মিশিয়েও খাওয়া যায়। গরম ভাতের সাথে মিশিয়ে খেলে অনেক উপকার হয়। শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায়।
২. মাথা ব্যথা দূরীকরণে: মাথা ব্যথা হলেই কেবল এটি খেতে হবে বিষয়টি এমন নয়। প্রতিদিন অন্তত এক চা চামচ কালোজিরার তেল মধুসহ সামান্য গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেতে হবে।
আর প্রতিদিন অন্তত ১/২ চা চামচ কালোজিরার তেল মাথায় লাগিয়ে রেখে দিতে হবে। সবচেয়ে বেশি উপকার হবে যদি রাতে শোয়ার আগে মাথায় তেল লাগিয়ে ঘুমানো যায়। সারারাত ঘুমও ভালো হয়। চুলেরও উপকার হয়। মাথা ঠাণ্ডা থাকবে এবং ব্যথা হবে না।
৩. সর্দি হলে: সামান্য কালোজিরার তেলের সাথে সামান্য মধু ও সামান্য তুলশী পাতার রস মিশ্রিত করে খেতে হবে নিয়মিত। সর্দি যদি বসে যায় তাহলে কালোজিরা বেটে কপালে প্রলেপ দিতে হবে।
শ্লেষ্মা যদি বেশি হয় তবে পাতলা কোন কাপড় নিয়ে তাতে কালোজিরা রেখে শুকতে হবে। এভাবে দুই-তিন করলেই শ্লেষ্মা তরল হয়ে বের হয়ে যাবে। প্রয়োজনে বুকে ও পিঠে কালোজিরার তেল মালিশও করা যায়।
৪. হার্টের অসুখে: দুধের সাথে এক চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে প্রতিদিন খেতে হবে। আরও ভালো ফল পেতে খাওয়ার সাথে সাথে কালোজিরার তেল বুকে নিয়মিত মালিশ করতে হবে।
৫. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে: কালোজিরা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও কাজ করে। প্রত্যহ সকালবেলা দুটি করে রসুনের কোয়া চিবিয়ে খেতে হবে এবং সারা শরীরে কালোজিরার তেল মালিশ করতে হবে। সকালে সূর্যের তাপে একটু বসতে হবে।
আর সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন সামান্য মধুসহ কালোজিরার তেলে খেতে হবে। তাহলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসবে। যদি রক্তচাপ কম থাকে তাহলে বেড়ে যাবে আর বাড়তি থাকলে কমে যাবে। সত্যিকার অর্থেই, কালোজিরা যাদুর মতোই কাজ করে।
৬. অর্শ রোগ কমাতে: মাখনের সাথে তিলের তেল এবং সাথে কালোজিরার তেল মিশিয়ে কয়েক সপ্তাহ খেতে হবে। অবশ্যই খালি পেটে খেতে হবে।
৭. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে: প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস পানির মধ্যে কিছু পরিমাণ কালোজিরা মিশিয়ে খেতে হবে। তাহলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রেণে থাকবে। ভাতের সাথে কালোজিরার তেল মিশিয়ে খেলেও অনেক উপকার হয়।
৮. যৌন শক্তি বৃদ্ধির জন্য: অনেকেই জানে না যে, কালোজিরা যৌন শক্তি বাড়াতেও খুব সাহায্য করে। নিয়মিত কালোজিরা খেলে পুুরুষের শুক্রানু বৃদ্ধি পায়। মাখন, জাইতুন তেল এবং কালোজিরার তেল মিশিয়ে নিয়মিত খেলে ধ্বজ ভঙ্গ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
৯. অনিয়মিত মাসিক: যেসব মায়েদের/মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক হয় তারা আসলে খুব কষ্টে থাকে। তো অনিয়মিত মাসিক হলে কাঁচা হলুদের রস, চাল ধোয়া পানি এবং কালোজিরার তেল একসাথে মিশিয়ে দিনে ৩ বার খেলে শতভাগ উপকার হয়।
১০. বুকের দুধ বাড়াতে: কিছু কিছু মায়েদের সন্তান হওয়ার পরে বুকে পর্যাপ্ত দুধ থাকে না। সন্তান ঠিক মতো দুধ পায় না। সেই ক্ষেত্রে প্রতি রাতে শোয়ার পূর্বে কালোজিরা চূর্ণ দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে হবে। নিয়মিত কালোজিরা ভর্তা করে ভাতও খাওয়া যেতে পারে। তাহলে ১০ দিনের মাথায় বুকের দুধ অনেক বৃদ্ধি পাবে।
এছাড়াও কালোজিরা সাধারণত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, পিঠে ব্যথা, শিশুর দৈহিক ও মানসিক বিকাশ, ত্বকের সৌন্দর্য, চর্মরোগ, বাত ব্যথা, হজমের সমস্যা, চুল পড়া, দেহের সাধারণ উন্নতি, দাঁত ব্যথা, পারকিন্স রোগ, পর্যাপ্ত ঘুম, কিডনীর পাথর, চোখের ব্যথা, ডায়রিয়া, জ্বর ও আঁচিল সমস্যা রোধে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পরিশেষে বলা যায়, এই মসলাটি পৃথিবীবাসীর জন্য আশীর্বাস্বরূপ। নিয়মিত কোনো ব্যক্তি যদি কালোজিরা খায় তবে তার কোনো রোগ হওয়ার সম্ভাবনা নাই। সুঠাম দেহের অধিকারী হওয়া যায়।
আরও পড়ুন: ফ্যাটি লিভার হলে করণীয় কি জেনে নিন – সচেতন হোন।
তাই সচেতনতার স্বার্থে ও নিজের প্রয়োজনে বাসায় সবসময় কালোজিরার তেল রাখুন এবং নিয়মিত খাওয়ার চেষ্টা করুন। এটি আসলে স্বাদেও অনন্য। বেশি করে রসুন দিয়ে এটি ভর্তা করলে খুব স্বাদ হয়। এভাবে খেয়ে দেখার অনুরোধ রইলো।