কানের রোগ সচরাচর সবার হয় না। বাচ্চাদের একটু বেশি হয়, বড়দের কম হয়। কানের রোগ হলে কান ব্যথা করে, ফড়ফড় করে, চুলকায় ইত্যাদি। হোমিওপ্যাথিতে কানের রোগ এর ক্ষেত্রে ভালো মানের চিকিৎসা রয়েছে।
আজ আমরা কানের রোগ সম্পর্কে জানবো। কানের বিভিন্ন রোগ যেমন- কানে শুনতে না পাওয়া, কানে ব্রণ হওয়া, কানে পুঁজ হওয়া ইত্যাদি সম্পর্কে জানবো। তো আর কথা নয় – মূল আলোচনায় যাই।
অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মতো কানেরর নানাবিধ রোগ হয়। যেমন – কানে পুঁজ হওয়া, কানে শূল-বেদনা দেখা দেওয়া, কানে অসহ্য যন্ত্রণা, কানের ভেতরে ব্রণ হওয়া, কানে কম শোনা, কানের ভেতরে ভোঁ-ভোঁ কিংবা শো-শো অথবা গুণ-গুণ প্রভৃতি শব্দ হওয়া, বধিরতা প্রভৃতি।
এসব রোগ হলে চিকিৎসায় বিলম্ব করা উচিত নয়। চিকিৎসায় যত দেরি হবে রোগ তত বাড়বে। চিকিৎসার সময় লক্ষণ সঠিকভাবে বিচার করে ওষুধ ওষুধ নির্বাচন করতে হবে।
মনে রাখতে হবে, ওষুধ নির্বাচনে ভুল হলে ওষুধ সেবন করে রোগীর কোনো উপকার হবে না বরং রোগটা আরও বেড়ে যেতে পারে। রোগ নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত রোগীকে কষ্টভোগ করতে হয়।
চিকিৎসকের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত রোগীকে সত্বর কষ্ট-যন্ত্রণার কবল থেকে মুক্ত করা। আর যারা প্রকৃত চিকিৎসক তারা মূলত এই কাজটিই করে থাকেন। আর অপ্রকৃত চিকিৎসগণ স্বার্থ অনুসন্ধানে তৎপর থাকেন।
কানে ব্রণ হওয়ার চিকিৎসা: কানের চারপাশে লাল হয়ে ওঠে; পরে সেখানে ব্রণ হয়। ব্যথা প্রথমে অল্প হয়, পরে বাড়ে। যন্ত্রনাও হয়। এ রকম হলে কথাবার্তা শুনতেও অসুবিধা হয়।
লাল হয়ে ফুলে উঠলে এবং যন্ত্রণা হলে- বেলেডোনা ৩x।
এরকম হলে অন্য ওষুধ- সিলিকা ৩০ বা সালফার ৩০।
পুঁজ হলে বা পুঁজ হবার উপক্রম হলে- হিপার সালফ ৬।
বাইরে লাগানোর ওষুধ- বেলেডোনা Q।
কানের গোড়ায় ব্যথা-যন্ত্রণার চিকিৎসা: কানের সামনের অংশ লাল হয় ও ফুলে ওঠে। ব্যথা হয়। জ্বর ভাবও দেখা দেয়। খাদ্য চিবোতে ও গিলতে কষ্টবোধ হয়।
রোগটা যদি এভাবেই সেরে যায় তো ভালো; কিন্তু হৃৎপিণ্ড, অন্তকোষ, মাথা বা স্তনদেশ আক্রমণ করে বসলে যথেষ্ট বিপদের সম্ভাবনা থাকে। এরকম হলে অনেক সময় প্রবল জ্বর হয়। ব্যথা-যন্ত্রণাও খুব বেড়ে যায়।
যন্ত্রণা ও অস্থিরতা দেখা দিলে এবং সেই সঙ্গে জ্বর ও পিপাসা দেখা দিলে- অ্যাকোনাইট ৩x।
রক্তিম ভাব, ফোলা, মাথার যন্ত্রণা, তীব্র বেদনা প্রভৃতি লক্ষণে- বেলেডোনা ৩x-৬।
তীব্র বেদনা, নড়াচড়ায় বেদনা বৃদ্ধি প্রভৃতি লক্ষণে- ব্রায়োনিয়া ৬।
পুঁজ হলে- মার্ক সল ৬।
পুঁজ হবার ভয় থাকলে- সালফার ৩০।
এ রোগের সর্বোৎকৃষ্ট ওষুধ- মারকিউরিয়াস বিন আয়োডেটাস ৩x-৬x বিচূর্ণ।
এ অবস্থায় ঠাণ্ডা লাগানো অনুচিত। গরম সেঁক দিলে আরাম হয়।
কানে শুনতে না পাওয়ার চিকিৎসা: দীর্ঘদিন কঠিন রোগ ভোগ করলে রোগী অনেক সময় কানে কম শোনে। আবার অধিক শুক্রক্ষরণ-জনিত কারণেও এমন হতে পারে। যথা সময়ে চিকিৎসা না করলে রোগটা বেড়ে যায়।
কোনো কঠিন রোগ হওয়ার জন্য বা জ্বর হওয়ার জন্য শুনতে না পেলে- সালফার ৩০, চায়না ৬, পালসেটিলা ৬। যেকোন একটি ওষুধ সেব্য।
ঠাণ্ডা লেগে এরকম হলে- বেলেডোনা ৬ বা অ্যাকোনাইট ৬।
অধিক শুক্রক্ষরণের জন্য এমন হলে- ফসফরাস ৩০।
এ ধরণের রোগ হলে ঝাল-মসলা খেলে ক্ষতি হয়। রাত্রি জাগরণও এ রোগের পক্ষে ক্ষতিকর।
কানে কম শোনার চিকিৎসা: স্নায়বিক দুর্বলতা, ঠাণ্ডা লাগা, কানে পুঁজ হওয়া, পানি ঢোকা, খোল জমা প্রভৃতি কারণে কানে কম শোনা রোগটি দেখা দেয়। ঠিকমত চিকিৎসা হলে রোগী স্বাভাবিক শ্রবণশক্তি ফিরে পায়।
কানে খোল জমলে- ল্যাকেসিস ৬ বা কার্বোভেজ ৬।
এ অবস্থায় কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন কানের মধ্যে ফেলে দিলে খোল নরম হয়ে বেরিয়ে যেতে পারে।
কোনো রোগ হয়ে এমন অবস্থা হলে- মারকিউরিয়াস ৩, সালফার ৩০, পালসেটিলা ৬। যেকোন একটি ওষুধ সেব্য।
ঠাণ্ডা লাগার জন্য কানে কম শুনতে পেলে- মারকিউরিয়াস ৩, অ্যাকোনাইট ৩। যেকোন একটি ওষুধ সেব্য।
কানে যন্ত্রণার চিকিৎসা: কানের ভেতরে লাল হয়, ফোলে, ব্যথা হয়, যন্ত্রণা হতে থাকে। প্রথম মুখেই এর চিকিৎসা করনো দরকার, নতুবা আরও ভেতরে রোগটা বিস্তৃত হয়ে পড়তে পারে।
বমি, বমি-বমি ভাব, অস্থিরতা, চঞ্চলতা, মাথা ভারী বা মাথার যন্ত্রণা প্রভৃতি লক্ষণে- বেলেডোনা ৩।
শ্লেষ্মার জন্য এরকম হলে- পালসেটিলা ৩।
রোগটা যদি পুরাতন হয় তাহলে- সালফার ৩০, নাইট্রিক অ্যাসিড ৬। যেকোন একটি ওষুধ সেব্য।
কানের ভেতর বিভিন্ন শব্দ হওয়ার চিকিৎসা: ঠাণ্ডা লেগে বা স্নায়বিক দুর্বলতার জন্য এ রোগটা দেখা দেয়। এমন হলে মাথা ধরে ও কানে ভোঁ-ভোঁ, গুণ-গুণ ও শাঁ শাঁ প্রভৃতি শব্দ হয়।
কানে নানারকম শব্দ শোনার উৎকৃষ্ট ওষুধ- থিওসিনামিন ২x-৩০।
সামান্য শব্দ হওয়ার জন্য রোগীর অসহ্য লাগে বা বিরক্তি দেখা দেয়, এমন লক্ষণে- সালফার ৩০ (প্রথমে), অ্যাকোনাইট ৬ (পরে)।
ঠাণ্ডা লেগে এ রোগ হলে- নাক্সভমিকা ৬-৩০।
সূর্যাস্তের পর রোগ বৃদ্ধি পেলে এবং ঘড়-ঘড় শব্দ শোনা গেলে- পালসেটিলা ৬।
মাথায় রক্তাধিক্যবশতঃ এরকম হলে- বেলেডোনা ৬ বা আর্নিকা ৩।
কানে খোল জমার চিকিৎসা: কানে খোল জমলে কান-খুসকি (কটন বাট) দিয়ে তা বের করে দিতে হয়। আগের দিন কানের মধ্যে সামান্য নারকেল তেল দিয়ে রাখলে খোলটা নরম হয়ে যায় তখন খুসকি দিয়ে সহজেই বের করা যায়।
কিন্তু পুঁজ জমে দুর্গন্ধ হলে এবং তার ফলে খোল জমলে- ল্যাকেসিস ৬, কোনায়াম ৩ বা কার্বোভেজ ৩০। যেকোন একটি ওষুধ সেব্য।
কানে পুঁজ হওয়ার চিকিৎসা: এ রোগটা শিশুদেরই বেশি হয়; তবে বড়দের যে হয়না তা কিন্তু নয়। ম্যালেরিয়া, হাম, ঠাণ্ডা লাগা, কানে পানি ঢুকে সে পানি বের না হলে কানে পুঁজ হয়।
গন্ধশূন্য পুঁজ জমলে- পালসেটিলা ৬।
উপরের ওষুধে কাজ না হলে- সালফার ৩০।
পুরাতন বা দীর্ঘদিন ধরে পুঁজ হয়ে থাকলে- ক্যালক্যারিয়া কার্ব ৬-৩০ বা মার্ক সল ৩।
কানে একজিমার চিকিৎসা: রোগটা সঠিকভাবে একজিমা কিনা তা আগে দেখা দরকার। যদি একজিমা হয় তাহলে চিকিৎসা শুরুতেই হওয়া দরকার, নইলে রোগটা বিস্তৃত হয়ে পড়ে ও প্রভূত ক্ষতি করে।
এ রোগের ওষুধ- গ্রাফাইটিস ৬, রাসটক্স ৩ বা মেজেরিয়াম ৩-২০০।
কানে শূল-বেদনার চিকিৎসা: কঠিন রোগে ভোগার ফলে বা ঠাণ্ডা লাগার জন্য কানে ব্যথা-যন্ত্রণা হয়। কি যেন ফুটছে মনে হয়।
প্রচণ্ড বেদনায়- মার্ক সল ৬, সালফার ৩০। যেকোন একটি ওষুধ সেব্য।
আঘাত লাগার জন্য এরকম হলে- আর্নিকা ৩।
ঠাণ্ডা লেগে এরকম হলে- সিপিয়া ৩, অ্যাকোনাইট ৩x। যেকোন একটি ওষুধ সেব্য।
আরও পড়ুন: আয়ু কমে যাওয়ার কারণগুলো জানুন – সচেতন হোন।
পরিশেষে বলবো, কানের রোগ যাতে না হয় সেজন্য সব রকম ঠাণ্ডা থেকে সতক থাকা দরকার। ঠাণ্ডা পানিতে গোসল না করে গরম পানিতে গোসল করলে উপকার হয়। বরফ বা আইসক্রিম এ অবস্থায় খাওয়া উচিত নয়। ঈষদুষ্ণ পানি পানীয় হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।