মানুষ মানুষের জন্য এ কথা আমরা সবাই জানি। একজন আরেকজনের উপকার করবে এটাই তো নিয়ম। কেউ নিজে নিজে সব কিছু কখনো শিখতে পারে না। আপনি যদি একজন ভালো ছাত্র হতে চান তাহলে ভালো শিক্ষকের কাছে পড়তে হবে।
আপনি যদি একজন ভালো মানুষ হতে চান তাহলে ভালো মানুষের গুণাবলীগুলো আপনাকে অর্জন করতে হবে। পৃথিবীতে আপনি যাই-ই করেন না কেন তার জন্য আপনাকে কারও না কারও কাছে যেতে হবে অথবা কাছে আনতে হবে।
আপনি যদি চুরি করা (কথার কথা) শিখতে চান তাহলেও কিন্তু আপনাকে একজন অভিজ্ঞ চোরের সান্নিধ্যে যেতে হবে। তো যারা কাউকে কোন কিছু শেখায় তারা তো অভিজ্ঞতা ছাড়া আর শেখাতে পারে না। তাদের অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে আর তাই তারা শেখায়।
কিন্তু এমন কাউকে শেখানো উচিত নয় যার আসলে শেখার যোগ্যতা নাই। কারন, যোগ্যতাবিহীন মানুষগুলো একসময় আপনাকে চরম ভুল বুঝবে। তাদেরকে আপনি কোনভাবেই বোঝাতে পারবেন না। এমন ঘটনা আমার সাথে ঘটেছে। আর সেটাই আপনাদের সাথে শেয়ার করবো আজ।
আমি ২০১৩ সাল থেকেই কম্পিউটারের সাথে যুক্ত। প্রথম অবস্থায় টাইপ করা শিখি। এরপর আস্তে আস্তে ব্যাসিক থেকে অ্যাডভান্সড লেভেলের কিছু কাজ শিখি। বর্তমানে ২০২৩ সাল। ঘটনাটি আমার সাথে ২০২৩ সালেই ঘটেছে।
তো বেশ কয়েক বছর একটানা কম্পিউটারের সাথে যুক্ত থাকায় আমি বেশ ভালোভাবেই তা রপ্ত করি। অর্থাৎ সকল সাধারন কাজ (মাইক্রোসফ্ট অফিস ওয়ার্ড, এক্সেল, এক্সেস, পাওয়ার পয়েন্ট, ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর, ভিডিও এডিটিং, অডিও এডিটিং) ভালোভাবে জানি।
আর অ্যাডভান্সড লেভেলের কাজের মধ্যে রয়েছে এইচটিএমল, সিএসএস, পিএইচপি এবং ওয়ার্ডপ্রেস কাস্টমাইজেশন যা আমি ভালোভাবেই পারি। আমার নিজের ওয়েবসাইটও রয়েছে। ফেইসবুক এবং ইউটিউব চ্যানেলও রয়েছে আমার যেখানে আমি নিয়মিত কাজ করি।
আর বর্তমানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আমি চাকরি করি। চাকরি করার পাশাপাশি আমি এসব করি। আমি যেখানেই থাকি না কেন আমার সাথে আমার কম্পিউটারটি থাকে।
তো আমি যে জায়গায় জব করি সেখানে একটি ফ্যামিলির সাথে আমার পরিচয় হয়। তারা স্বামী-স্ত্রী। তাদের কোন সন্তান নেই অর্থাৎ সন্তান হয় না। যেকোনভাবে আমার সাথে পরিচয় হওয়ার পরে উনারা জানতে পারেন আমি কম্পিউটার বিষয়ে জানি।
আমাকে জিজ্ঞেস করা হলে আমিও স্বাভাবিকভাবে আমার যোগ্যতার কথা বলি। এরপর ঐ ভদ্র মহিলা আমার কাছে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে জানতে চায়। উনি ফ্রিল্যান্সিং শব্দটি যদিও জানে না এখনও তথাপি আমি আপনাদের বুঝানোর স্বার্থে উল্লেখ করলাম।
এরপর আমি তাকে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে বললাম। আর কিভাবে ওয়েবসাইট তৈরী করে সেখানে নিয়মিত লেখালেখি করার মাধ্যমে গুগল অ্যাডসেন্স এর মাধ্যমে আয় করা যায় তা সম্পর্কে বললাম।
ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে তাদের ধারণা নাই বললেই চলে। ধারণা না থাকলেও কেউ যদি কোন কিছু বুঝিয়ে বলে তাহলে তো একটুখানি বুঝার কথা। তাদের আসলে সে জ্ঞানটুকুও নেই। যাই হোক, তখন আমি খুব একটা বুঝতে পারিনি। কিন্তু এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি এবং বুঝছি।
তখন আমার কাছে কম্পিউটার ছিলো না। বাসা থেকে কম্পিউটার নিয়ে আসতে পারিনি কারণ অর্থনৈতিক চাপে সেটা খুব কষ্টে বিক্রি করে আসছিলাম। তারা স্বামী-স্ত্রী তখন একটি ল্যাপটপ কিনবেন বলে আমার সাথে বললেন।
যেই বলা সেই কাজ। তাদের সাথে আলোচনা করার পর প্রায় ১৫ দিনের মাথায় তারা আমার হাতে ১৮,০০০/- (আঠার হাজার) টাকা দিয়ে একটি ল্যাপটপ কিনে আনতে বললেন। আমি তাদের সাথে যেতে বললাম। কিন্তু তারা আমার সাথে যেতে রাজি হলেন না বরং সব কিছু আমার উপর ছেড়ে দিলেন।
অবশ্য এতে আমি একটু অবাক হয়েছিলাম। কারন, কিছুদিন আগেও আমি তাদের অপরিচিত ছিলাম। কিন্তু তারা অল্প কয়েকদিনের পরিচয়ে আমার উপর এতো বড় একটি দায়িত্ব দিলেন।
পরে আমি এই টাকা নিয়ে মোটরসাইকেল ভাড়া করে রাজধানীর কম্পিউটার সিটি মাল্টিপ্লানে চলে গেলাম। সেখানে আমার পরিচিত একজন ছিলো। আমার এলাকায় তার বোনের বিয়ে হয়েছে। সেই সুত্রে পরিচয়। তো তিনি আমাকে অনেক সহযোগিতা করলেন। ল্যাপটপ কিনতে লাগলো মোট ২১,০০০/- (একুশ হাজার) টাকা। আমার পকেটে ছিলো ১০০০ টাকা এবং বাকি ২,০০০/- (দুই হাজার) টাকা বাকি রেখে আসলাম।
ল্যাপটপ নিয়ে এসে প্রাথমিক সেটআপ করে প্রয়োজনীয় সব সফ্টওয়ার দিয়ে তারপর তাদের কাছে নিয়ে আসলাম। তারা আমাকে ল্যাপটপটি ব্যবহার করার জন্য দিয়ে দিতো। কারন, আমার কম্পিউটার ছিলো না তখন।
আমি ঐ ভাবিকে কাজের ফাঁকে ফাঁকে সময় নিয়ে শেখাতাম। আমার অনেক কষ্ট হতো। কিন্তু আমি আসলে কথা দিয়ে ফেলছিলাম এবং তারা ল্যাপটপটিও কিনে ফেলেছে। এখন যদি না শেখাই তাহলে আমার সাথে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে এবং তারা আমার উপর খুব মন খারাপ করবে।
আমি সকালবেলার কাজ শেষ করে দুপুর বেলা শেখাতাম এবং শুক্রবারেও শেখাতাম। কিন্তু বিশ্বাস করেন, ঐ ভাবির মাথায় তেমন কোনো জ্ঞানই ছিলো না। আমি এতো সহজ করে বুঝিয়ে দেয়ার পরেও উনি বুঝতো না।
মাউস ধরানো শেখাতে আমার প্রায় ১০ দিন চলে গেছে। বাংলা লিখা শিখাতে ৩ মাস লেগেছে এবং ইংরেজী লেগেছে ৩ মাস। তারপর সে কোনরকমে লিখতে পারে। কিন্তু লিখার কোন ডিজাইন করতে পারে না।
আমি যে শিখাইনি তা নয় বরং একসময় নিজেই বুঝলাম যে, ইনার বুঝার ক্ষমতা আসলে খুব বেশি নেই। তবে কথা বলে খুব বেশি। কোন বিষয়ে যদি গল্প শুরু করেন তাহলে তার শেষ করতে পারবেন না। একের পর এক আজগুবি কথা বলতেই থাকবে যেসব কথার কোন আগামাথা নেই।
তো যখন ঐ ভাবি মোটামুটি লিখা শিখতে পারলো তখন আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে, এখন তাহলে ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে একটি ওয়েবসাইট তৈরী করে দেই এবং তাকে শেখাই।
ওয়ার্ডপ্রেস এর উনি কিছুই বুঝতো না। আমার ধারণা হয়ে গিয়েছিল যে, আমি যদি তাকে ওয়ার্ডপ্রেস শেখাতে যাই তাহলে আমার প্রায় ১ বছর মিনিমাম লাগবে। আর এতোটা সময় আসলে শেখানো সম্ভব নয়। কারন, আমি কর্পোরেট জব করতাম, সরকারি চাকরি নয়। আর তাছাড়া উনি আমাকে শেখানোর জন্য কোন টাকা দিতো না।
আমি ১টি টাকাও নেইনি। কোনদিন চাইনি। কারন, সবার বিবেক আছে। বিবেক দিয়ে সব বিবেচনা করা উচিত ছিলো।