কলাপাতা’র উপকারিতা:
কলাগাছের সবুজ পাতার রস, মোচা, থোড়া সবই খুব প্রয়োজনীয়। কলা গাছ ও কলাপাতা শুধুমাত্র হাতি বা পশুর খাদ্য নয়। কলাগাছের ভেষজ গুণ আশ্চর্য।
রোগ নিরাময়ে অদ্বিতীয় অথচ চিকিৎসকগণ এ বিষয়ে নীরব। অবশ্য আজকাল দু’একজন চিকিৎসক রোগীকে মোচা, থোড়া এসবের তরকারি খেতে বলেন।
কেউ কেউ আবার থোড়ার রস খেতে বলেন। সর্দি, কাশি, শ্বাস-কষ্ট, কোষ্ঠবদ্ধতা, আমাশয়, রক্তদুষ্টি, অম্লগ্যাস, উচ্চ রক্তচাপ, লিভার সংক্রান্ত সমস্যার ক্ষেত্রে কলাপাতার রস অনেক উপকারী।
না-কচি, না-শক্ত বিবর্ণ পাতা অর্থাৎ সবুজ পাতা বেটে বা থেঁতলে নিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। তারপর তা সকালের দিকে আধ কাপ খেতে হবে। লবণ অথবা চিনি মিশিয়ে খাওয়া যাবে না।
কলাপাতায় থাকে ক্লোরোফিল। ক্লোরোফিল পেটে গেলে অন্ত্রের ঘা, লিউকোমিয়া ও চর্মরোগ হয় না। কলাপাতার সবুজ রস রক্ত পরিষ্কার করে।
কাঁচা কলা, পাকা কলা, শেকড় সবই উপকারী। তবে কাঁচা কলা তরকারিতে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে এবং পেটে গ্যাস হয়।
পাকা কলা বেলা ৯ টা থেকে ১২ টার মধ্যে খাওয়া উচিত। যখন তখন পাকা কলা খেলে ক্ষতি হতে পারে। কলা ভালো করে চিবিয়ে খেতে হবে, গিলে ফেলতে নেই।
পাকা কলা মুখের লালাতেই হজম হয়ে যায়। ইউরোপ ও অন্যান্য উন্নত দেশে কলাপাতার সাহায্যে বহু রোগের চিকিৎসা করা হয়।
ফরাসি ডাক্তার’রা শোথ, যক্ষ্মা, আন্ত্রিক, আমাশয় ও অতিসারে কলাপাতার রস খেতে দেন। শরীরের কোথাও কেটে গেল, ক্ষত হলে কিংবা চর্মরোগ হলে কলাপাতার রস লাগালে উপকার হয়।
ব্রঙ্কাইটিস, নেফ্রাইটিস, রক্তক্ষরণ, জমাট বাঁধা সর্দিতে কলাপাতার রস খুবই কাজে দেয়। প্লুরিসি, কাশি, ক্ষয়রোগ ও থুথুর সঙ্গে রক্ত পড়লে কলাগাছের সবুজ ভাজা পাতার রস খেলে ভীষণ উপকার হয়।
কচি কলাপাতা বেটে প্রলেপ দিলে কীট দংশন, হুল ফোঁটা এবং কাটায় উপকার হয়। হোমিওপ্যাথি ডাক্তার’রা দাতের ব্যথায় প্ল্যান্টাগো মাদার টিংচার দিয়ে থাকেন।
কলাপাতা হলো উত্তম ভেষজ। বেটে খেলে পেটের বদ্ধ মল, অম্ল বের করে দেয়। ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমাতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে।
আরও পড়ুন: সোরিয়াসিস নামক চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায়।
কলাপাতায় সাইট্রিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, কেরোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, তিক্ত গুণদর্মী ট্যানিন সহ ইত্যাদি আছে।
আমাদের দেশে কলাপাতা সহজলভ্য। গ্রাম-গঞ্জের প্রায় সব জায়গায়-ই পাওয়া যায়। তবুও আমরা এর গুণাগুণ সম্পর্কে তেমন কোনো খোঁজ রাখি না।
কলার ফুল অর্থাৎ মোচা একটি উপাদেয় আনাজ। নানাভাবে রান্না করে খাওয়া যায়। বিচি কলার মোচা উত্তম, কাঁঠালিকলার মধ্যম এবং মর্তমানের কষা।
মোচা কেটে লবণ দিয়ে তেঁতুল পানিতে ডুবিয়ে রাখলে কষ ঝরে যায়। তবে বেশি পরিমাণ কাঁচা কলা খেলে বা মোচা খেলে কিডনীতে পাথর জমতে পারে।
বেশি অক্সালিড অ্যাসিড থাকায় এই বিপত্তি। অতএব কাঁচা কলা বা মোচা থেকে সাবধান। এখানে কিন্তু খেতে না করা হলো না। পৃথিবীর সব খাবারেই শরীরের জন্য কিছু না কিছু পুষ্টিগুণ রয়েছে।
তবে শুধু একটু হিসেব করে খেতে হবে। কলাপাতা সম্পর্কে তেমন কেউ জানতেও চায় না। কিন্তু কলাগাছের প্রত্যেকটি অংশ মানুষের জন্য উপকারী।