করতোয়া একটি নদী যেটি পঞ্চগড় জেলার শেষ প্রান্ত থেকে বয়ে এসে দেবীগঞ্জ উপজেলার মাঝ বরাবর চলে গেছে। করতোয়া নামটি অনেক সুপরিচিত কারণ দেবীগঞ্জ উপজেলায় করতোয়া নামক একটি ব্রিজ রয়েছে। এই ব্রিজটি চীনের প্রকৌশলীরা করে দিয়েছে অর্থাৎ কারিগরি সহযোগিতা করেছে।
করতোয়া নদীর অদূরেই রয়েছে ময়নামতি নামক বাগান। আর করতোয়া নদীর ব্রিজের সাথেই পূর্ব পাশে রয়েছে স্কাউট হাউজ। এখনো তেমনভাবে কাজ করা হয়নি তবে প্রকল্প চলমান রয়েছে।
ময়নামতি চরের ঠিক একটু খানি দক্ষিণে নদীর পশ্চিমপাড়ে রয়েছে আরেকটি বাগান যেটিকে আগড় বাগান নামে পরিচিত। এই বাগানটিও দেবীগঞ্জ উপজেলার মাননীয় টিএনও মহোদয় করে দিয়েছিলেন।
বর্তমানে এই আগর বাগানের দৈর্ঘ্য বেড়েই চলেছে। বাগানের সৌন্দর্য বাড়ছে। পশু-পাখিদের আবাস-স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে কারণ পশু-পাখিরা নিশ্চিন্তে সেখানে তাদের ঘর তৈরী করছে।
আগর বাগানের ঠিক পূর্ব পাশে রয়েছে পেড়ালবাড়ী নামক গ্রাম। এই গ্রামের অনেক মানুষ সেখানে গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়া নিয়ে চড়াতে যায়। তারা রোদের সময় সেখানে গাছের ছায়ায় জিরিয়ে নিতে পারে।
আর করতোয়া নদীর দক্ষিণ পাশে যে ময়নামতির চড় রয়েছে সেখানে রয়েছে চা বাগান। চা বাগানের বিস্তৃত সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে।
ময়নামতির বাগানের ভেতর দিয়ে চলার জন্য রয়েছে ইটের রাস্তা। নিরাপত্তার জন্য নিরাত্তা প্রহরী রয়েছে। সারাদিন বিশেষ করে বিকেল বেলা সেখানে অনেক মানুষ ঘুরতে যায়। পরিবার নিয়ে সময় কাটায়।
করতোয়া নদীর দুই পাশে বর্তমানে অনেক গাছ-গাছালিতে পূর্ণ। সবুজে সবুজে ভরপুর। নদীটি দেবীগঞ্জ উপজেলার ভেতর দিয়ে দক্ষিণ দিকে বহুদূর অগ্রসর হয়েছে। আর পেড়ালবাড়ী গ্রামটির একটু পশ্চিমেই যে ছোট আমডারা নামক নদীটি রয়েছে সেটি দাড়ারহাট নামক জায়গায় গিয়ে করতোয়ার সাথে মিশ্রিত হয়েছে।
দাড়ারহাটের যেখানে আমডারা করতোয়া নদীর সাথে মিশ্রিত হয়েছে সেখানেও বড় ধরণের বাগান রয়েছে। মানুষ জন সেখানে অবসর সময়ে এবং প্রখর রোদ থাকাকালীন সময়ে গিয়ে বিশ্রাম নেয়।
করতোয়া নদীর দুই পাশে তেমন কোনো বাড়ি-ঘর নেই। অর্থাৎ নদীর সাথেই নেই। একটু দূরে রয়েছে। আর তাই সবুজ গাছপালা লাগানোর যথেষ্ট জায়গা রয়েছে। দেবীগঞ্জ উপজেলাবাসী নিজ উদ্যোগেই এই কাজগুলো করে যাচ্ছে।
তবে নদীর দুই পাশ সবুজে সবুজে ভরে তুলতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং অন্যান্য বিভিন্ন দলের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের তত্ত্বাবধানে সেখানে নিয়মিত নদীর দুই পাশ তদারকি করা হয়। কেউ গোপনে গাছ কেটে নিয়ে যায় কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হয়।
করতোয়া ব্রীজের দুই পাশেই বড় পাথর নির্মিত ইট দ্বারা নিরাপদ করা হয়েছে। বন্যার সময় নদীতে অনেক পানি আসে। নিরাপত্তা সূচক অনেক সময় ক্রস করে ফেলে। যদি ব্রীজের দুই পারের হাফ কিলোমিটার জায়গা ঐভাবে নিরাপদ করা না হতো তবে বন্যার সময় ভাঙনের সৃষ্টি হয়ে নদীর দুই পাড়ের মানুষের চরম ক্ষতি হতো। হয়তো নদীও তার গতিপথ পরিবর্তন করতো।
তবে কিছু সমস্যাও রয়েছে। করতোয়া ব্রীজের আশপাশ থেকেই নিয়মিত বালু উত্তোলন করা হয়। এতে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। বড় ধরণের বন্যা হলে ব্রীজের ক্ষতি হতে পারে। তাই নির্ধারিত পরিবেশবান্ধব নিয়ম মেনে এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে মত বিনিময় করে বালু উত্তোলন করা হলে হয়তো কোনো ক্ষতি হবে না।
আর করতোয়া নদীর কিছু কিছু জায়গায় একটু ক্ষনন করা যেতে পারে। এতে করে গতিপথ ঠিক থাকবে। বর্ষা ছাড়া যেহেতু বছরের অন্যান্য সময়ে নদীতে তেমন পানি থাকে না সুতরাং কাজটি সেসময় করা যেতে পারে।
উত্তরবঙ্গের মানুষের জন্য প্রধান নদী হলো করতোয়া যেটি অনেক মানুষের জীবিকার উৎস হিসেবেও কাজ করে। করতোয়া নদীর মাছ খুবই সুস্বাদু। অনেকেই করতোয়া নদীতে মাছ ধরে তা বাজারে বিক্রি করে নিজের সংসার চালায়া।
অন্যদিকে, পঞ্চগড়ে করতোয়া নদী থেকে বালু উত্তোলন করে বিভিন্ন মানুষ তাদের শ্রম নির্বাহ ও সংসার চালায়। কাজটি যদিও খুব পরিশ্রমের কিন্তু নদীর শীতল হাওয়ায় করতে তা ভালোই লাগে।
যাইহোক, করতোয়া নদীর দুই পাশে যে সবুজের সমারোহ তা যেন শুধু বাড়তেই থাকে আমরা সে প্রত্যাশাই করি। মানুষ এখন যতোটা সচেতন ভবিষ্যতেও যাতে এতোটা সচেতন থাকে সেটাও চাই।
আর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং অন্যান্য গোষ্ঠী যারা রয়েছে তারা যেন নদীর এই সৌন্দর্যের প্রতি খেয়াল রাখে এটি উপজেলাবাসীর চাওয়া। নদী মরে গেলে কৃষক মরে যাবে এমন নয় কিন্তু অনেক ক্ষতি হবে। আর নদীর সবুজ না থাকলে সে নদী আস্তে আস্তে মরুভুমি হয়ে যাবে এবং বন্যার সময় আশপাশের যেকোন বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আরও পড়ুন: প্যান্ডেল ক্লিপ খুলে নিতেন তিনি ঘাস কাটার আড়ালে।
করতোয়া নদীর সবুজের সমারোহে বয়ে চলার অবিরাম দৃশ্য যে কারও মন জুড়িয়ে দেবে। ভবিষ্যতে এই সৌন্দর্যের কারণে সেখানে পর্যটক এর সমাগম হবে। এতে করে পুরো উপজেলা লাভের মুখ দেখতে পাবে। সুতরাং নদীর সৌন্দর্য রক্ষায় সবার এগিয়ে আসা উচিত।