বুকের সর্দি, কফ দূর করতে সহজ এবং উপায় হলো লবণ পানি। লবণ শ্বাসযন্ত্র থেকে কফ দূর করতে সাহায্য করে। এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সাথে এক চা চামচ লবণ মিশিয়ে নিন। এটি দিয়ে দিনে দুই তিনবার কুলকুচি করুন।
উপরের কারন ছাড়াও বুকের ঘন কফ দূর করার জন্য কিছু ওষুধ রয়েছে। সেসব ওষুধ নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো। আপনারা দয়া করে ওসব ওষুধ নিজে নিজে সেবন করতে যাবেন না। সেবন করার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
১. এডোভাস – Adovas
উপাদান: অ্যাঢাটোডা ভ্যাসিকা ০.৬৮ গ্রাম, পাইপার লংগাম ০.১৪ গ্রাম, গ্লাইসারহিজা গাবরা ৬.৭৮ মি.গ্রা., টারমিনালিয়া চেবুলা ৭৩.২৪ মি.গ্রা., সস্যুরিয়া লাপ্পা ৬.৭৮ মি.গ্রা., জিঞ্জিবার অফিসিনালি ৬.৭৮ মি.গ্রা., পাইপার নাইগ্রাম ৬.৭৮ মি.গ্রা., সিজাইজিয়াম এরোম্যাটিকাম ৬.৭৮ মি.গ্রা., সিনামোমাম জিলানিকাম ৬.৭৮ মি.গ্রা., সিনামোমাম ট্যামালা ৬.৭৮ মি.গ্রা., মাইরিকা ন্যাগি ৬.৭৮ মি.গ্রা., পিস্টাসিয়া ইন্টেজেরিমা ৬.৭৮ মি.গ্রা.,ইলেটারিয়া কার্ডামোমাম ৬.৭৮ মি.গ্রা.।
নির্দেশনা: বুকের জমাট বাঁধা ঘন কফ তরল করে বের করে। শুষ্ক কাশি উপশম করে। এছাড়া শ্বাসযন্ত্রের দুর্বলতা, ধূমপানজনিত কাশি এবং স্বরভঙ্গ রোগে অত্যন্ত কার্যকর।
মাত্রা ও ব্যবহারবিধি : ১২ বছরের কম বয়সী শিশু: ১ – ২ চামচ (৫ – ১০ মি.লি.) দিনে ৩ বার।
প্রাপ্ত বয়স্ক: ৩ চামচ (১৫ মি.লি.) দিনে ২ – ৩ বার কুসুম গরম (কাশির তীব্রতায়) পানিসহ অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেব্য।
যে ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে না: এর কোন উপাদানের প্রতি অতিসংবেদনশীলতা দেখা দিলে ব্যবহার করা উচিৎ হবে না।
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া: এটি নিরাপদ এবং সুসহনীয়। নির্দেশিত মাত্রায় সেবন করলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয় না।
অন্য ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া: অন্য ওষুধের সাথে কোন প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়নি।
গর্ভকালীন ও স্তন্যদানকালীন সময়ে ব্যবহার : গর্ভাবস্থায় এডোভাস® সেবন সম্পর্কে কোন নির্দিষ্ট তথ্য নেই। তাই গর্ভাবস্থায় সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা বাঞ্চনীয়। মায়ের ভ্রুণের ক্ষতির তুলনায় লাভের পরিমাণ যাচাই করে ব্যবহার করা উচিত।
সরবরাহ: প্রতিটি বোতলে রয়েছে ১০০ মি.লি. এডোভাস সিরাপ ও ২০০ মি.লি. এডোভাস সিরাপ।
২. এমব্রোক্স – Ambrox
উপাদান: এমব্রোক্সল হাইড্রোক্লোরাইড। ৬ মি.গ্রা./ মি.লি পেডিয়াট্রিক ড্রপস্, ১৫ মি.গ্রা./৫ মি.লি. সিরাপ এবং ৭৫ মি.গ্রা. এসআর ক্যাপসুল।
নির্দেশনা: শ্লেষ্মাযুক্ত কাশি, শ্বাসতন্ত্রের শ্লেষ্মাযুক্ত তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ, রাইনো ফেরিঞ্জিয়াল ট্রাক্ট-এর শ্লেষ্মাযুক্ত প্রদাহ (ল্যারিন্জাইটিস, ফ্যারিন্জাইটিস, সাইনুসাইটিস এবং রাইনাইটিস), শ্লেষ্মাযুক্ত অ্যাজমাটিক ব্রঙ্কাইটিস, ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা, ব্রঙ্কিয়েক্টেসিস, দীর্ঘস্থায়ী নিউমোনিয়া।
মাত্রা ও ব্যবহার বিধি: দৈনিক সেবন মাত্রা (খাবার পর গ্রহণ করা উত্তম)।
পেডিয়াট্রিক ড্রপস: ০-৬ মাস বয়স : ০.৫ মি.লি. দিনে ২ বার।
৬-১২ মাস বয়স: ১.০ মি.লি. দিনে ২ বার।
১-২ বছর বয়স: ১.২৫ মি.লি. দিনে ২ বার।
সিরাপ: ২-৫ বছর বয়স : ২.৫ মি.লি. (১/২ চা চামচ) দিনে ২-৩ বার।
৫-১০ বছর বয়স: ৫ মি.লি. (১ চা চামচ) দিনে ২-৩ বার।
১০ বছরের বেশি বয়সের শিশু ও বয়স্ক: ১০ মি.লি. (২ চা চামচ) দিনে ২-৩ বার।
ক্যাপসুল: ১২ বছরের বেশি বয়সের শিশু ও বয়স্ক: ১টি ক্যাপসুল দিনে ১ বার।
সতর্কতা ও যেসব ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে না: অতিসংবেদনশীলতা থাকলে। গ্যাস্ট্রিক ও ডিওডেনাল আলসারের রোগীদের এবং খিঁচুনীর রোগীদের সাবধানতার সাথে দেয়া উচিত।
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া: কিছু কিছু ক্ষেত্রে পাকস্থলীর প্রদাহ, ভার ভার ভাব দেখা দিতে পারে।
অন্য ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া: অ্যান্টি-টাসিভ (যেমন কোডেইন) এর সাথে গ্রহণ করা উচিত নয়।
গর্ভাবস্থা ও স্তন্যদানকালে ব্যবহার: গর্ভকালীন সময়ে, বিশেষ করে প্রথম ৩ মাস ব্যবহার করা উচিত নয়।
সরবরাহ:
এমব্রোক্স পেডিয়াট্রিক ড্রপস: ১৫ মি.লি.।
এমব্রোক্স সিরাপ: ১০০ মি.লি.।
এমব্রোক্স ৭৫ এস আর ক্যাপসুল: ৩ x ১০ টি।
৩. ব্রোফেক্স – Brofex
উপাদান: ডেক্সট্রোমেথরফ্যান ১০ মি.গ্রা./৫ মি.লি. সিরাপ।
নির্দেশনা: শুকনো কাশি, এবং তীব্র কাশি যা স্বাভাবিক কার্যাবলী অথবা ঘুমের বিঘ্ন ঘটায়।
মাত্রা ও ব্যবহার বিধি: (প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে) দিনে ১৫-৩০ মি.গ্রা. ৩ থেকে ৪ বার। ৬-১২ বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে ৬.৭৫ মি.গ্রা. দিনে ৪ বার পর্যন্ত। ৬ বছরের নিচের শিশুদের ক্ষেত্রে ২.৫-৫ মি.গ্রা. দিনে ৪ বার পর্যন্ত।
সতর্কতা ও যেসব ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে না: মনোঅ্যামাইন অক্সিডেজ ইনহিবিটর-এর সাথে ব্যবহার করা যাবে না।
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া: কদাচিৎ দেখা যায়। কিন্তু মাঝে মাঝে বমি বমি ভাব এবং মাথা ঝিম ঝিম করতে পারে। মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ গ্রহণের ফলে উত্তেজনা, বিভ্রান্তি এবং শ্বাসতন্ত্রের কার্যকারিতার অবনমন দেখা দিতে পারে।
অন্য ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া: ফিন্যালজিন এবং ডেক্সট্রোমেথরফ্যান একই সঙ্গে গ্রহণকারীদের মারাতড়বক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
গর্ভাবস্থা ও স্তন্যদানকালে ব্যবহার: গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস এ ওষুধ ব্যবহার করা অনুচিত। স্তন্যদানকারী মায়েদের এ ওষুধ ব্যবহার না করার পরামর্শ দেয়া যেতে পারে।
সরবরাহ: ব্রোফেক্স™ সিরাপ ১০০ মি.লি.।
৪. তুসকা – Tusca
উপাদান : (গুয়াইফেনেসিন ১০০ মি.গ্রা., স্যুডোএফিড্রিন হাইড্রোক্লোরাইড ৩০ মি.গ্রা. এবং ট্রাইপ্রোলিডিন হাইড্রোক্লোরাইড ১.২৫ মি.গ্রা.)/৫ মি.লি. সিরাপ।
নির্দেশনা: পুঞ্জিভূত কফ সহ শ্বাসতন্ত্রের উপরের অংশের ব্যাধির, লক্ষণসমূহের উপশমে নির্দেশিত।
মাত্রা ও ব্যবহার বিধি: (প্রাপ্তবয়স্ক) দুই চা চামচ দিনে ৩ বার। ১২ বছরের উর্ধ্বে শিশুদের জন্য দুই চা চামচ দিনে ৩ বার। ৬-১২ বছর ১ চা চামচ দিনে ৩ বার এবং ২-৬ বছর ১/২ চা চামচ দিনে ৩ বার।
সতর্কতা ও যেসব ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে না: গুয়াইফেনেসিন, স্যুডোএফিড্রিন অথবা ট্রাইপ্রোলিডিন এর প্রতি অতিসংবেদনশীলতা। তীব্র করোনারী ধমনীর রোগ অথবা মারাত্মক উচ্চ রক্তচাপ সম্পন্ন রোগীদের ক্ষেত্রে দেয়া যাবে না। নিজেদের অবস্থা বিবেচনা সাপেক্ষে রোগীদের গাড়ী ও যন্ত্রপাতি চালানো উচিত নয়।
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া: কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের অবনমন অথবা উত্তেজনা, ঘনঘন তন্দ্রাচ্ছন্নতা হতে পারে। ঘুমের ব্যাঘাত এবং কদাচিৎ দৃষ্টিভ্রম দেখা দিতে পারে।
চামড়ার ফুসকুড়ি, ট্যাকিকার্ডিয়া, কখনো কখনো মুখ, নাক ও গলার শুষ্কতা দেখা দিতে পারে। পুরুষ রোগীরা স্যুডোএফিড্রিন সেবনে মূত্রত্যাগে অক্ষমতা হতে পারে, এক্ষেত্রে প্রোস্টেট এর বৃদ্ধি অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে।
অন্য ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া: ডিকন্জেস্টেন্ট, ট্রাইসাইক্লিক বিষন্নতারোধী ওষুধ, রুচিদমনকারক এবং এ্যামফেটামিন জাতীয় দেহ উত্তেজক অথবা মনোঅ্যামাইন অক্সিডেজ ইনহিবিটর-এর সাথে একত্রে ব্যবহার করার ফলে কখনো কখনো রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে পারে।
গর্ভাবস্থা ও স্তন্যদানকালে ব্যবহার: গর্ভবতী মহিলাদের ভ্রুনের বৃদ্ধির ক্ষতির তুলনায় লাভের পরিমান যাচাই করে এ ওষুধ ব্যবহার করা উচিত।
সরবরাহ: তুসকা® সিরাপ : ১০০ মি.লি.।
আরও পড়ুন: বদ হজম বা অজীর্ণের হোমিও চিকিৎসা জেনে নিন