কটন বাড ব্যবহার করে মৃত্যুবরণ করা ঘটনা অতি বির।। সমপ্রতি প্রকাশিত একটি রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ঘটনাটি ঘটে কানাডার মন্ট্রিলে। ঘটনা তদন্তকারী কর্মকর্তা ডা. জেসক রামসে কানাডার স্বাস্থ্য বিভাগকে বলেছেন যে, কটন বাডের প্যাকেটের ওপর সতর্কবাণী লিখে দিতে।
মন্ট্রিল নিবাসী ৪০ বছর বয়স্ক মি. ডেনিয়েল সেন্ট পিয়ে গত বছর মৃত্যুবরণ করেছেন। তার মৃত্যুর কারণ হলো বহিঃকর্ণের ইনফেকশন, যা কানের পর্দা ছিদ্র করে মেনিনজাইটিস করেছে। মি. সেন্ট পিয়ে একজন কানে মাত্রাতিরিক্ত কটনবাড ব্যবহারকারী।
যে কারণে প্রতিদিন বারবার ব্যবহারের ফলে তার বহিঃকর্ণে ইনফেকশন হয় এবং পরে তিনি আরো বেশি কটন বাড ব্যবহার করাতে তার বহিঃকর্ণের ইনফেকশন মধ্যকর্ণ থেকে অন্তকর্ণে বিস্তৃতি লাভ করে।
অন্তকর্ণ থেকে মস্তিষ্ক এবং মস্তিষ্কের আবরণ মাত্র কয়েক মিলিমিটার দূরে। যার ফলে ইনফেকশন অতি সহজেই মস্তিষ্ক এবং তার আবরণে সংক্রমিত হয়ে হতে পারে মেনিনজাইটিস বা স্পাইনাল কর্ডের চার পাশের প্রদাহ, যা কানের ইনফেকশনের জটিলতা হিসেবে দেখা দেয়।
গত বছর মার্চে মি. সেন্ট পিয়ে কান ব্যথা ও কান থেকে রক্তপাতের জন্য হাসপাতালে গিয়েছিলেন। তার কানের পর্দা এত বেশি ফুলেছিল এবং তার কানে এত বেশি রক্ত জমেছিল যে, ডাক্তার কানের পর্দা ভালো করে দেখতে পারেননি। ডাক্তার তাকে একটি কানের ড্রপ দিয়ে ছেড়ে দেন।
সে দিন রাতে বাড়িতে তার অবস্থার আরো অবনতি হয়। তার স্ত্রী তখন জরুরী অ্যাম্বুলেন্স ডেকে তাকে মন্ট্রিল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান এবং ভর্তি করেন।
ডাক্তারদের শত চেষ্টার পরও সেখানে তার মস্তিষ্ক এবং মস্তিষ্কের আবরণের প্রদাহজনিত কারণে জীবনাবসান ঘটে, যা কিনা কটন বাড ব্যবহারের জন্য হয়েছিল।
ডা. রামসে বলেছেন, অতিরিক্ত কটন বাড ব্যবহার করলে বহি:কর্ণ ফুলে যায় এবং তা ব্যবহারকারীকে কান বন্ধ থাকার একটি অনুভূতি দেয়। ডা. জেকস কানাড়ার স্বাস্থ্য বিভাগকে কডন বাডের প্যাকেটের গায়ে ‘রেডী’ দিয়ে সতর্ক চিহ্ন দিতে প্রস্তাব করেছেন।
কী কী কারণে কানের পর্দা ছিড়ে যায়:
১. কোনো কিছু দিয়ে কান খোঁচালে;
২. কোনো কিছু ঢুকলে, তা অদক্ষ হাতে বের করার চেষ্টা করলে;
৩. হঠাৎ বাতাসের চাপজনিত কারণে যেমন কানে থাপ্পড় দিলে, কোনো বিস্ফোরণ ঘটলে, বক্সিং;
৪. হঠাৎ পানির চাপ, যেমন- পানির নিচে সাঁতার কাটলে, ওয়াটারপোলো, ড্রাইভিং মাথায় আঘাত বা দুর্ঘটনাজনিত কারণে।
উপসর্গ:
১. কানে ব্যথা, প্রথমে তীব্র ও পরে অল্প ব্যথা।
২. কানে কম শুনতে পাওয়া, অল্প ছিঁড়ে গেলে অল্প কম শুনবে, বেশি ছিঁড়ে গেলে বধিরতা বেশি হবে।
৩. কানে ভোঁ ভোঁ শব্দ হতে পারে, মাথা ঘোরাতে পারে, যদিও তা স্বল্পকালীন।
৪. কান পরীক্ষা করলে দেখা যাবে, কানের পর্দায় ছিদ্র আছে এবং ছিদ্রের চার পাশে এলোমেলো এবং লাল হয়ে আছে।
৫. বহি:কর্ণে রক্ত জমাট থাকতে পারে।
চিকিৎসা:
১. কানে কোনো ইনফেকশন না হওয়ার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে।
২. ব্যথা থাকলে প্যারাসিটামাল খেতে হবে।
৩. কানে কোনো পানি দেয়া যাবে না।
৪. কান কটন বাড কিংবা অন্য কিছু দিয়ে খোঁচানো যাবে না।
৫. কানে কোনো ড্রপ দেয়া যাবে না।
৬. সাতাঁর কাটা যাবে না।
৭. দুই সপ্তাহ পর রক্ত জমা থাকলে তা বের করতে হবে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ দিয়ে।
৮. রোগীকে আশ্বস্ত করতে হবে।
৯. সাধারণত উপরিউক্ত চিকিৎসায় রোগী ভালো হয়ে যায়।
১০. যদি রোগী দেরিতে চিকিৎসার জন্য কান থেকে পুঁজ পড়া বা ইনফেকশন নিয়ে আসে, তখন তা কানের বহি:কর্ণ ও মধ্যকর্ণের প্রদাহ হিসেবে চিকিৎসা করতে হবে।
১১. যদি কানের পর্দার ছিদ্র থেকে যায় তাহলে তিন মাস পর কানের মাইক্রোসার্জারির মাধ্যমে কানের পর্দা জোড়া লাগাতে হবে যা এখন বাংলাদেশে নিয়মিত করা হয়।
পরিশেষে বলা যায়, সাধারণত কানের পর্দা ছিঁড়ে গেলে যে কোনো ফার্মেসি থেকে কানের ড্রপ নিয়ে অনেকেই তা ব্যবহার করে, যা একেবারেই উচিত নয়।
এ ক্ষেত্রে কানে কটন বাড তথা কোন কিছুই ব্যবহার করা যাবে না এবং নিকটস্থ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে বা নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। একজন ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নেয়া সবসময়ই উচিত।
আরও পড়ুন: তেতুল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা।