বাজারে নানা ধরণের ওষুধ পাওয়া যায়। সব ওষুধই কারও কারও প্রয়োজন হয়। ওষুধ সম্বন্ধে যাদের জানার আগ্রহ আছে তাদের জন্যই মূলত এই লিখা। এই লিখাতে মোট তিনটি ওষুধের বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে।
পুরো লিখাটি পড়লে আপনি অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ এরিথ্রোমাইসিন, জেন্টামাইসিন এবং অক্সিটেট্রাসাইক্লিন সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তো আর কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায় যাচ্ছি।
ওষুধ – এরিথ্রোমাইসিন (Erythromycin):
এটা স্বাদহীন, গন্ধহীন, সাদা স্ফটিকাকার বস্তু। এটা গ্রাম পজেটিভ কক্কাস এবং ব্যাসিলাসদের উপর সক্রিয়। তাছাড়া গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া, কক্কাস, ক্ল্যামাইডিয়া ট্র্যাকোম্যাটিশ, ইইরিপ্লাসমা, ইউরিয়ালাইটিকাম, বোরেলিয়া বার্জোবোরী, টিপোনিমাপ্যালিডাম প্রভৃতি ব্যাকটেরিয়াদের উপরও সক্রিয়।
এটার প্রায় সমস্তটাই পৌষ্টিক তন্ত্র থেকে শোষিত হবে তবে ধীরে ধীরে, এটা শরীরের সমস্ত অংশে ছড়িয়ে পড়ে এবং প্লীহা ও যকৃতে বেশি সময় অবস্থান করে। এটার ৫ শতাংশ প্রস্রাবের মাধ্যমে নির্গত হয়।
ব্যবহার: ফ্যারিংজাইটিস, ল্যারিংজাইটিস, টনসিলাইটিস, সাইনুসাইটিস, ওটাইটিস, ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়াসহ সর্বপ্রকার শ্বাসযন্ত্রের রোগে, দাঁতের রোগে, ফোঁড়া, কার্বাঙ্কল, ইরিসিপেলাস, শিশুদের হূপিং কাশি, চামড়ার ক্ষতে এবং আমাশয় রোগে ব্যবহার করা হয়।
মাত্রা: বয়স্কদের ২৫০ মিগ্রা থেকে ৫০০ মিগ্রা দিনে ৩-৪ বার রোগের প্রকৃতি অনুসারে।
শিশুদেরঃ ৪ বছরের নিচে ১২৫ মিগ্রা দিনে ৩-৪ বার; তদুর্ধ্বে ২৫০ মিগ্রা দিনে ২-৩ বার।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: বমি বা বিবমিষা উদরাময়, জ্বরভাব, লিভারের গন্ডগোল, চর্মের উদ্ভেদ প্রভৃতি হতে পারে।
অন্তঃক্রিয়া: কার্বামাজেপিন, থিওফাইলিন, ডাইজস্কিন, পেনিসিলিন ওয়ারফেরিন, সাইক্লোসেরিন প্রভৃতির সাথে বিক্রিয়ার ফলে কর্মক্ষমতা হ্রাস হয়।
সাবধানতা: হেপাটাইটিস সহ লিভারের অন্যান্য রোগে এরিথ্রোমাইসিন ব্যবহার নিষিদ্ধ। গর্ভবতী মহিলাদের দেওয়া নিষেধ।
ওষুধ – জেন্টামাইসিন (Gentamicin):
জেন্টামাইসিন একটি বহুব্যাপক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসকারী ওষুধ। এটা গ্রাম পজেটিভ এবং গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়াদের উপর সক্রিয় তবে গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়াদের উপর বেশি সক্রিয়।
জেন্টামাইসিন ইন্ট্রা মাস্কুলার এবং ইন্ট্রাভেনাস পথে দেওয়া হয়। তাছাড়া চোখের, কানের ড্রপ ওষুধ এবং ক্রীম আকারে পাওয়া যায়। এটার অধিকাংশই প্রস্রাবের মাধ্যমে দেহ থেকে নির্গত হয়।
ব্যবহার: সেপটিসিমিয়া, মেনিনজাইটিস, ব্রঙ্কাইটিস, সর্দিকাশি, নিউমোনিয়া, পোড়া ও পোড়া ঘা, অন্যান্য চর্মের ক্ষত, উদরাময়, কলেরা, প্রস্রাবের পীড়া, চোখের প্রদাহ, অঞ্জনী, কর্নিয়ার ক্ষত, কানের প্রদাহ ও অন্যান্য রোগে জেন্টামাইসিন ব্যবহার করা হয়।
এটা শিশুদের জন্মের পর থেকেই ব্যবহার করা চলে। শিশুদের পেটের গোলমাল এবং শ্বাসযন্ত্রের রোগে খুব ভালো ফল দেয়।
মাত্রা: বয়স্কদের 80mg দিনে ২-৩ বার IM বা I.V. অন্যদিকে শিশুদের জন্ম থেকে ১ সপ্তাহ পর্যন্ত 7.5mg দিনে ২ বার; ১ সপ্তাহের ঊর্ধ্বে 7.5mg দিনে ৩ বার বা 10mg দিনে ২ বার; ৬ মাসের ঊর্ধ্বে ৪ বৎসর পর্যন্ত 20mg দিনে ১ বার বা 15mg দিনে ২ বার।
চোখের ড্রপ ১-২ ফোঁটা দিনে ৩ বার। কানের রোগে ৩-৪ ফোঁটা দিনে ৩-৪ বার।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: প্রস্রাবে কাস্ট, সেল প্রোটিন নির্গত হয় এবং রক্তে ননপ্রোটিন নাইট্রোজেন বৃদ্ধি পায়। মাথাঘোরা, কানে গর্জনশীল শব্দ এবং বর্ধিরতা প্রভৃতি ঘটে। তাছাড়া অবসাদ ক্ষুধামন্দা ও চর্মের উদ্ভেদ, বমি বা বিবমিষা, চুলওঠা প্রভৃতি দেখা দেয়।
আন্তঃক্রিয়া: ফ্রুসেমাইড, লিগনোকেন, এথাক্রাইনিক অ্যাসিড মেথিসিলিন সহ প্রভৃতির সাথে আন্তঃক্রিয়ায় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
সাবধানতা: গর্ভবতী মহিলাদের ব্যবহার নিষেধ। পারকিনসোনিজম রোগে এটার ব্যবহার নিষেধ। বাচ্চাদের প্রস্রাব গ্রন্থির রোগে সাবধানে ব্যবহার করতে হবে।
অক্সিটেট্রাসাইক্লিন (Oxytetracyclin):
এটা গন্ধহীন, তিক্ত অস্বাদ বিশিষ্ট হরিদ্রাবর্ণের স্ফটিকাকর বস্তু। এটা জলে দ্রবণীয়। এটা টেট্রাসাইক্লিনের পরিবার ভুক্ত। এটা গ্রাম পজেটিভ এবং গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়াদের উপর সক্রিয়। এটা পৌষ্টিক তন্ত্র থেকে সম্পূর্ণরূপে এবং দ্রুত শোষিত হয়। এটা প্রস্রাবের সাথে ৬০-৭০% নির্গত হয়।
ব্যবহার: সর্বপ্রকার জ্বর, গনোরিয়া, স্যাঙ্কার, প্রস্রাবের পীড়া, শ্বাসযন্ত্র এবং নাক, কান ও গলার রোগে, সিফিলিস, সর্বপ্রকার চর্মরোগ, পৌষ্টিক তন্ত্রের রোগ, স্ত্রীরোগ, চোখের রোগ, হাড়ের রোগ প্রভৃতিতে অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ব্যবহার করা হয়।
মাত্রা: বয়স্কদের ২৫০ মিগ্রা – ৫০০ মিগ্রা দিনে ৩-৪ বার। ৮ বৎসরের ঊর্ধ্বের শিশুদের ২৫০ মিগ্রা দিনে ৩-৪ বার। গণোরিয়াতে ৫০০ মিগ্রা দিনে ৪ বার ৭ দিন। সিফিলিস রোগে ৫০০ মিগ্রা দিনে ৪ বার ১৫-৩০ দিন পর্যন্ত। ব্রণের ক্ষেত্রে ২৫০ মিগ্রা প্রত্যহ ৩-৪ মাস।
ইনজেকশান: ৮ বৎসরের উর্ধ্বের শিশুদের ৭৫ মিগ্রা দিনে ২ বার, চোখের মলম ১ সেমি করে দিনে ৩-৪ বার। ক্ষতের মলম প্রয়োজন অনুসারে দিনে ৩ বার। বয়স্কদের ২ মিগ্রা দিনে ২ বার।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: ক্ষুধামন্দা, বমি বা বিবমিষা, মুখ গহ্বরের ক্ষত, চর্মের উদ্ভেদ, আমবাত, ইউসিনোফিলিয়া, রক্তাল্পতা ও দাঁতের রঙ হরিদ্রা বর্ণ সহ প্রভৃতি হতে পারে।
আন্তঃক্রিয়া: পেনিসিলিন, অম্লের ওষুধ, আয়রণ, ফেনাইটইন লিথিয়াম, ডাইগক্সিন, কার্বমাজেপিন প্রভৃতির সাথে আন্তঃক্রিয়ার ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
সাবধানতা: গর্ভবতী এবং স্তনদানকারী মহিলাদের সর্বোতভাবে ব্যবহার নিষিদ্ধ এই ওষুধ। ৮ বৎসরের নিচের শিশুদের ব্যবহার নিষিদ্ধ। ইনজেকশান কেবল ইন্ট্রা মাসকুলার পথে চলবে। ইন্ট্রাভেনাস হলে তা বিপদজনক।
আরও পড়ুন: ব্রঙ্কাইটিস রোগের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা জেনে নিন।
পরিশেষে বলা যায়, ওষুধ এর ব্যবহার বিধি, মাত্রা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সহ নানাবিধ তথ্য জানতে হলে আপনাকে এই ধরণের তথ্যগুলো নিয়মিত চর্চা করতে হবে।
এতে করে ওষুধ সম্পর্কে আপনার জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি পাবে। সচেতন হতে পারবেন। আমরা না জেনেই বিভিন্ন ওষুধ খেয়ে ফেলি। কিন্তু ওষুধ সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে হয়তো এরকম ভুল আমরা কেউ করবো না।
এখন তো আধুুনিক যুগ। মোবাইলের প্লে স্টোরে ডিমস (DIMS) নামক একটি অ্যাপস আছে। আপনি সেটা ডাউনলোড করে নিতে পারেন। বাংলাদেশের সব ধরণের ওষুধ কোম্পানীর তৈরীকৃত ওষুধের সমস্ত তথ্য পাবেন।
অন্যদিকে, মেডেক্স নামক ওয়েবসাইট থেকে ওদের মোবাইল অ্যাপ ভার্সন অ্যাপটি ডাউনলোড করতে পারেন। সেটিতে আরো সুন্দরভাবে সমস্ত ওষুধ এর তথ্য দেয়া আছে। এখানকার তথ্যগুলো ইংরেজীর পাশাপাশি বাংলাতেও পড়তে পারবেন।