মানব শরীরে নানা সময়ে জানা অজানা বিভিন্ন ধরণের রোগ হয়। আমরা সেই জন্য ওষুধ খাই। সচেতনতার খাতিরে আমাদের বিভিন্ন ওষুধের তথ্য জানা উচিত। এতে করে আমাদের মধ্যে সাবধানতা বাড়বে যথা বিভিন্ন ওষুধের ব্যবহার, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারবো।
ওষুধের তথ্য আপনাকে আপনার জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে সাহায্য করবে। আপনি বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করার মাধ্যমে স্বল্প সময়ে বেশি কিছু জানতে পারবেন। এখন মূল আলোচনায় যাচ্ছি।
ডাইক্লোফেনাক (Diclofenac) ওষুধের তথ্য:
এটা একটি স্টেরয়েড বিহীন প্রদাহ নাশক ওষুধ এবং এর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী ক্ষমতা বিদ্যমান। এটা পৌষ্টিকতন্ত্র থেকে সম্পূর্ণরূপে শোষিত হয়।
এটা গ্রহণের দুই ঘন্টা পরে সাইনোভিয়াল ফ্লুইডের চেয়ে রক্তরসে সর্বোচ্চ পরিমাণ জমা হয় তবে ৪ ঘন্টা পরে সাইনোভিয়াল ফ্লুইডে বেশি জমা হয়।
তা সত্ত্বেও এটা প্রদাহিক অংশে বেশি সময় ধরে কাজ করে এবং রক্তরসে পরিমাণ কমে যাওয়ার পরেও দীর্ঘ সময় আরোগ্যকার্যে ব্যাপৃত থাকে। এটার প্রায় ৯০ শতাংশ মূত্রপথেই নির্গত হয়।
ব্যবহার: প্রদাহ জনিত সন্ধিবাত, অস্থিসন্ধির প্রদাহ, গেঁটেবাত, মেরুদন্ডের বাত, কটিবাত, ঘাড় শক্তভাব, মচকানো বা আঘাতজনিত ব্যথা বাধক, দন্তশূল, ছোট অস্ত্রোপচারের ব্যথা যন্ত্রণা এবং মাথার বিভিন্ন যন্ত্রণাতে ব্যবহার করা হয়।
মাত্রা: বয়স্কদের ৫০ মিগ্রা ট্যাবলেট ১টি করে দিনে ৩ বার, ৭৫ মিগ্রা ইন্ট্রামাস্কুলার দিনে ২ বার ২ দিন, সাধারণ রোগে ৭৫ মিগ্রা দিনে একবার ইন্ট্রা গ্লুটিয়াল।
শিশুদের ½ টি ট্যাবলেট দিনে ২ বার, ইনজেকশান দেয়া চলবে না। বয়স্কদের ১০০ মিগ্রা সাসটেইন্ড রিলিজ দিনে ১ বার দেওয়া যায়।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: পেটের গোলমাল, মাথার যন্ত্রণা, চর্মের উদ্ভেদ আচ্ছন্নভাব, পেপটিক আলসার, রক্তের স্বাভাবিক চিত্রপট পরিবর্তন সহ প্রভৃতি ঘটতে পারে।
আন্তঃক্রিয়া: লিথিয়াম, ডাইগক্সিন, মেথোট্রেক্সেট স্যালিসাইলেটস্, ফ্রুসেমাইড প্রভৃতির সাথে বিক্রিয়ায় কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়।
সাবধানতা: হাঁপানি, আমবাত, নাসিকা প্রদাহ, পাকস্থলীর ক্ষত এবং গর্ভবতী মহিলাদের ব্যবহার নিষিদ্ধ।
প্যারাসিটামল (Paracetamol) জাতীয় ওষুধের তথ্য:
এটা গন্ধহীন, তিক্ত আস্বাদ বিশিষ্ট এবং সাদা রঙের স্ফটিকাকার বস্তু। এটা বেদনানাশক এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী ওষুধ। এটার মৃদু যন্ত্রণানাশক ক্ষমতা বিদ্যমান।
এটা পৌষ্টিকতন্ত্র থেকে দ্রুত এবং প্রায় সম্পূর্ণরূপে শোষিত হয়। ১ থেকে ½ ঘন্টার মধ্যে এটা রক্তরসে সর্বোচ্চ পরিমাণে জমা হয় এবং দেহের সমস্ত কোষরসে ছড়িয়ে পড়ে। এটা ১ থেকে ৩ শতাংশ পরিবর্তনের পর মূত্রপথে নির্গত হয়।
ব্যবহার: জ্বর, মৃদু প্রদাহ মাথার যন্ত্রনা, দাঁতের ব্যথা, হাড়ে ব্যথা, গাঁট ফোলা, গলার ব্যথা প্রভৃতিতে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসকারী ওষুধ এবং উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন যন্ত্রণানাশক ওষুধের সাথেও ব্যবহার করা হয়।
মাত্রা: বয়স্কদের ৫০০ মিগ্রা ১টি ট্যাবলেট দিনে ৩-৪ বার, শিশুদের ক্ষেত্রে ৫ বছরের উর্ধ্বে ½ টি ট্যাবলেট দিনে ৩-৪ বার। ১ বছর থেকে ৫ বছর পর্যন্ত ১২৫ মিগ্রা বা ১ চামচ সিরাপ দিনে ৩ বার। ৩ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত ½ চামচ (৬২.৫ মিগ্রা) দিনে ৩ বার।
১ মাস থেকে ৩ মাস পর্যন্ত ড্রপ ওষুধ ৪০ মিগ্রা (৫ ফোঁটা) দিনে ৩ বার। বয়স্কদের মারাত্মক রোগে ৬৫০ মিগ্রা পর্যন্ত দেওয়া যায়। ১৫০ মিগ্রা ইন্ট্রা মাস্কুলার দেওয়া হয় (আলসার রোগীদের)।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: প্যারাসিটামলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই কম লক্ষ্য করা যায়। কদাচিৎ পেটের গোলমাল বা চামড়ার উদ্ভেদ লক্ষ্য করা যায়।
আন্তঃক্রিয়া: অ্যালকোহল, ক্লোরামফেনিকল, মোটোক্লোপ্রামাইড পেথিডিন, প্রপেথালিন প্রভৃতির সাথে আন্তঃক্রিয়ার ফলে কর্মক্ষমতার হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে।
সাবধানতা: গর্ভবতী মহিলাদের কম মাত্রায় এবং সাবধানতা সহকারে প্রয়োগ করতে হবে। যকৃতের রোগ এবং প্রস্রাবের পীড়ায় কম মাত্রায় ব্যবহার করা উচিত।
মেট্রোনাইডাজোল (Metronidazole) জাতীয় ওষুধ:
এটা একটি অ্যামিবা ধ্বংসকারী ওষুধ। এটা এন্টামিবা হিস্টোলাইটিকাদের দ্রুত ধ্বংস করে। এটা পৌষ্টিকতন্ত্র থেকে সম্পূর্ণরূপে পাচিত এবং শোষিত হয়। এটা যকৃতে পাচিত হয় এবং মূত্রপথে নির্গত হয়।
৮০ শতাংশের উপর পরিবর্তিত এবং অপরিবর্তিতভাবে মূত্রপথে নির্গত হয়। ১০-১৫ শতাংশ মলের সাথে নির্গত হয়। এটা ট্রাইকোমোনা জীবাণু এবং জিয়ার্ডিয়া নামক পরাশ্রয়ীদের ধ্বংস করে।
ব্যবহার: অ্যামিবাঘটিত আমাশয়, যকৃতের ক্ষত, ট্রাইকোমোনা জীবাণু দূষণ, জিয়ার্ডিয়াসিস, মুখ গহ্বরের ক্ষত, পৌষ্টিকতন্ত্রের অস্ত্রোপচারের পূর্বে বা পরে ব্যবহার করা হয়।
মাত্রা: অ্যামিবা ঘটিত আমাশয়ে বয়স্কদের ৪০ মিগ্রা ট্যাবলেট দিনে ৩ বার ৭ দিন। শিশুদের ২ বছর পর্যন্ত ৫০ মিগ্রা সিরাপ দিনে ৩ বার ৭ দিন। তদুর্ধ্বে ১২ বছর পর্যন্ত ২০০ মিগ্রা ট্যাবলেট দিনে ৩ বার ৭ দিন।
যকৃতের ক্ষতে একই মাত্রায় ৫ দিন চিকিৎসা চলবে। ট্রাইকোমোনিয়াসিস অর্ধমাত্রায় ৭ দিন চিকিৎসা চলবে। জিয়ার্ডিয়াসিসের ক্ষেত্রে অর্ধ মাত্রায় ৫ দিন চিকিৎসা চলবে।
মুখগহ্বরের ক্ষতে অর্ধ মাত্রায় ৩ দিন চিকিৎসা চলবে। প্রয়োজনবোধে ২ সপ্তাহ বাদ পূণরায় আরেকটি কোর্স চালাতে হবে। অস্ত্রোপচারের সময়, পূর্বে বা পরে ইন্ট্রাভেনাস পথে দেওয়া হয়।
বয়স্কদের ১০০ মিলি ৮ ঘন্টা অন্তর অথবা নরমাল স্যালাইন বা ডেক্সট্রোজেন সাথে মিশিয়ে দেওয়া চলে।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: জিহ্বায় তিক্তভাব, বমি বা বিবমিষা, চর্মে উদ্ভেদ, প্রুরিটাস, পেটের অস্বস্তিভাব, জিহ্বার কর্কসভাব দেখা দিতে পারে।
আন্তঃক্রিয়া: অ্যালকোহল, সিমেটিডিন, ফেনোবারবিটোন প্রভৃতির সাথে আন্তঃক্রিয়ার ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
সাবধানতা: থাইরয়েড গ্রন্থির রোগে এটা ব্যবহার করা নিষেধ। গর্ভবতী মহিলা এবং স্তনদায়ী মাতাকে ব্যবহার নিরাপদজনক নয়।
আরও পড়ুন: গর্ভকালীন সমস্যা ও সেগুলোর সহজ সমাধান।
পরিশেষে বলা যায়, বিভিন্ন ওষুধের তথ্য জানলে আপনার জ্ঞানের পরিধি বাড়বে। আপনার মধ্যে ওষুধ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়বে। একান্ত প্রয়োজনের বাইরে আসলে কোনো ওষুধ খাওয়া উচিত নয়।
উপরে যেসব ওষুধের তথ্য দেয়া হয়েছে সেগুলো সব আসলে ওটিসির মতো। আমরা এসব সেবনের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নেই না বললেই চলে। কিন্তু পরামর্শ না নিলেও অন্তত ওষুধগুলো সম্পর্কে জানা দরকার।
আপনি যদি নিয়মিত ওষুধের তথ্য সম্পর্কে জানতে থাকেন তবে একটা সময় পরে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন যে, আপনি কতোটা সচেতন হয়েছেন এবং কতোটা জেনেছেন। যা ঘটবে তা সত্যিই বিস্ময়কর হবে।