ওমেপ্রাজল (Omeprzole):
ওমেপ্রাজল হল একটা নতুন শ্রেণীর পৌষ্টিকতন্ত্রের ক্ষত নিরাময়কারী ওষুধ। এটা অ্যান্টাসিড বা হাইড্রোজেন গ্রাহী গ্রুপ থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। এটা হলো প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর।
ওমেপ্রাজল অতিরিক্ত পাকস্থলীর অ্যাসিডরস ক্ষরণকে প্রতিরোধ করে এবং নিয়মিত রস ক্ষরণে সাহায্য করে আর এর ফলে পাকস্থলীর ক্ষত নিরাময় বা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়।
ওমেপ্রাজল সম্পূর্ণরূপে পাচিত ও শোষিত হয়। বাকি অংশ মলের মাধ্যমে নির্গত হয়। এটা ২ সপ্তাহের মধ্যেই ক্ষত নিরাময় এবং রস ক্ষরণকে নিয়মিত করতে সমর্থ।
ব্যবহার: পাকস্থলীর ক্ষত, ডিওডেনামের ক্ষত, জোলিনজার এলিশন সিনড্রোম, অন্ননালীর প্রদাহ প্রভৃতিতে ব্যবহার হয়।
মাত্রা: ডিওডেনামের ক্ষতে ১টি ২০মিগ্রা ক্যাপসুল প্রত্যহ খেতে হবে ১ মাস। পাকস্থলীর ক্ষতে ১টি ২০মিগ্রা ক্যাপসুল প্রত্যহ ১ বার ২ মাস চালাতে হবে।
অন্ননালীর প্রদাহে ২০মিগ্রা দৈনিক অন্তত ১ মাস পর্যন্ত, জোলিনজার এলিশন সিনড্রোমে ২০মিগ্রা ৩টি ক্যাপসুল অর্থাৎ ৬০মিগ্রা একত্রে সকালবেলা খেতে হবে যতদিন প্রয়োজন।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: গা বমি, মাথা ধরা, উদরাময়, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং চর্মে উদ্ভেদ হতে পারে।
আন্তঃক্রিয়া: ডায়াজিপ্যাম, ফেনাইটোইন, ওয়ার ফ্যারিন প্রভৃতির সাথে বিক্রিয়ার ফলে কার্যক্ষমতা হ্রাস পায় এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
সাবধানতা: শিশুদের ব্যবহার একেবারে নিষিদ্ধ। গর্ভবতী মহিলা এবং স্তনদানকারী মহিলাদের ব্যবহার নিষিদ্ধ।
নালিডিক্সিক অ্যাসিড (Nalidixic Acid)
নালিডিক্সিক অ্যাসিড হল কুইনোলেন গ্রুপের যৌগ। এটার সর্বোচ্চ ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসকারী ক্ষমতা বিদ্যমান। এটা গ্রাম-ন্যাগেটিভ ব্যাকটেরিয়াদের উপর বেশি সক্রিয়।
এটা পৌষ্টিকতন্ত্র থেকে দ্রুত এবং সম্পূর্ণরূপে শোষিত হয়। এটার ৮০ শতাংশ মূত্রপথে নির্গত হয়। এমনকি ২৪ ঘন্টা পরেও এটার পাচিত অংশের অস্তিত্ব মূত্রে বর্তমান থাকে।
৪ শতাংশ মলের মাধ্যমে নির্গত হয়। মূত্রের বিক্রিয়া অর্থাৎ Ph পরিবর্তন হয়। কিন্তু তা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসকারী ক্ষমতা নষ্ট করে না। ক্ষারকীয় মূত্র বেশি পরিমাণে এই ওষুধ এবং এটার পাচিত অংশকে অধিক্ষণ ধরে রাখতে পারে।
ব্যবহার: রক্ত আমাশয়, ব্যাকটেরিয়া ঘটিত উদরাময় তৎসহ অন্যান্য পেটের রোগে এবং সর্বপ্রকার প্রস্রাবের পীড়ায় নির্ভয়ে দেওয়া চলে।
মাত্রা: পেটের রোগে বয়স্কদের ৫০০মিগ্রা ২টি ট্যাবলেট অর্থাৎ ১০০০মিগ্রা দিনে ৩-৪ বার ৭ দিন পর্যন্ত। শিশুদের ১ বছরের উর্ধ্বে ৪ বছর পর্যন্ত ১ চামচ (৩০০মিগ্রা) দিনে ৪ বার, তদুর্ধ্বে ১২ বছর পর্যন্ত ৫০০মিগ্রা (১টি ট্যাবলেট) দিনে ৪ বার।
প্রস্রাবের পীড়ার ক্ষেত্রে বয়স্কদের প্রথমে ১০০০ মিগ্রা দিনে ৪ বার ৭ দিন। তারপর ৫০০ মিগ্রা দিনে ৪ বার ৭ দিন। শিশুদের ½ চামচ থেকে ১ চামচ দিনে ৩ বার ১৪ দিন পর্যন্ত।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: বমি বা বিবমিষা, দুর্বলতা, চর্মে উদ্ভেদ, রক্তাল্পতা প্রভৃতি দেখা যেতে পারে।
আন্তঃক্রিয়া: নাইট্রোফিউরেটোইন, অ্যাসপিরিন প্রভৃতির সাথে বিক্রিয়ার ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং কর্মক্ষমতাও হ্রাস পায়।
সাবধানতা: তিন মাসের নিচের শিশুদের ব্যবহার নিষিদ্ধ। গর্ভবতী মহিলাদের প্রথম অবস্থায় ব্যবহার নিষিদ্ধ পরে অবশ্য জরুরি প্রয়োজনে দেওয়া যেতে পারে। যে সমস্ত শিশুদের তড়কা থাকে তাদের দেওয়া উচিত নয়। যকৃতের রোগে ব্যবহার নিষিদ্ধ।
ডেক্সামেথাসোন (Dexamethasone)
ডেক্সামেথাসোন হল সাদা রঙের, অল্প তিক্ত আস্বাদবিশিষ্ট, গন্ধহীন স্ফটিকাকার গুড়ো ওষুধ। এটা পানিতে অদ্রবণীয়।
এটা প্রোটিন সিন্থেসিসের হার নিয়ন্ত্রণ করে।
ডেক্সামেথাসোন পৌষ্টিকতন্ত্র থেকে ক্যালসিয়ামের শোষণ ব্যাহত করে। গ্রোথ হরমোন নিঃসরণ করতে ব্যাহত করে ফলে হাড়ের উপর ক্রিয়াশীল থাকে।
এটা প্লাজমা তথা রক্তরসের কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড বৃদ্ধি করে এবং নিউট্রোফিল ও লোহিত রক্তকণিকা বৃদ্ধি করে। এটা লিম্ফোসাইট এবং ইওসিনোফিল এর মাত্রা কমিয়ে দেয়।
পৌষ্টিকতন্ত্র থেকে প্রায় সম্পূর্ণভাবে এবং দ্রুত শোষিত হয়। এটা সর্বোচ্চ ক্রিয়া হয় সেবনের ১ ঘন্টার মধ্যেই। এটার ক্রিয়ার স্থায়িত্ব ২ থেকে ৩ দিন পর্যন্ত থাকে। ডেক্সামেথাসোন কিডনী এবং যকৃতে পাচিত হয় এবং মূত্রপথে নির্গত হয়।
ব্যবহার: সর্বপ্রকার বাতব্যাধি, বিষক্রিয়া, ওষুধের প্রতিক্রিয়া, মেনিনজাইটিস, প্রবল জ্বর, টাইফয়েড, হাঁপানি ও অন্যান্য ফুসফুসের রোগ, অ্যালার্জিঘটিত বিক্রিয়া, চর্মরোগ, অ্যানিমিয়া, লিউকোমিয়া, খিচুনি সহ জরুরী অবস্থায় ব্যবহার করা হয়।
মাত্রা: ইনজেকশন ওষুধ ১-২ মিলি ৬ ঘন্টা অন্তর দেওয়া হয়। শিশুদের ½ থেকে ১ মিলি প্রয়োজন অনুযায়ী। ট্যাবলেট ১-২টি একত্রে দিনে ৩ বার ১ সপ্তাহ পর্যন্ত। এই ডোজ শেষ হলে পরে ট্যাবলেট ১টি দিনে ২ বার ৭ দিন পর্যন্ত।
এরপর আবার মাত্র ১টি দিনে মোট ৭ দিন পর্যন্ত। শিশুদের ড্রপ ওষুধ ৫-১০ ফোঁটা দিনে ৩ বার ক্রমশ মাত্রা কমিয়ে এনে ওষুধ বন্ধ করতে হবে।
আরও পড়ুন: এলার্জি কেন হয়? প্রতিকার জেনে নিন।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: দুর্বলতা, হাড় ফোঁপড়া হওয়া, পাকস্থলীর ক্ষত থেকে রক্তপাত, ক্ষুধা বৃদ্ধি, ক্ষত নিরাময়ে বিলম্ব, ব্রণ, মেয়েদের ঋতুর গোলযোগ, মধুমেহ, গলাভাঙ্গা, মুখে বিস্বাদভাব প্রভৃতি দেখা যায়। অধিক দিন চিকিৎসায় চক্ষুর ছানি হয়।
সাবধানতা: যক্ষ্মা রোগীদের সাবধানতা সহকারে ব্যবহার করা উচিত।