ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড:
ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড হার্ট ও মস্তিষ্কের জন্য খুবই দরকারি ও উপকারি। যদি আপনি দীর্ঘদিন বাঁচতে চান সেক্ষেত্রেও এই অ্যাসিডের তাৎপর্য অপরিসীম।
শরীরে যাতে এই অ্যাসিডের কখনো ঘাটতি না হয় তাই চিকিৎসক’রা সবসময় চর্বিযুক্ত মাছ, চিয়া সিডস ও কাঠবাদাম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন এর বিশেষজ্ঞ ড. সুজ্যান স্ট্যানবাম ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড নিয়ে নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। তারই কিছু অংশ আজকের নিবন্ধে উল্লেখ করা হলো।
ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আসলে কি?
এই অ্যাসিড হলো এক ধরণের পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড। আমরা প্রতিদিনই বিভিন্ন কাজ করি। আমাদের শরীর এতে ক্লান্ত হয়। কিছু উপাদানের ক্ষয় হয়।
অ্যাসিডটি এই ক্ষয় হয়ে যাওয়া উপাদানগুলোর ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে এবং আমাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম সুগম রাখতে সহায়তা করে। আমাদের শরীরের কোষের মেমব্রেন এর ক্ষেত্রে এই অ্যাসিডের গুরুত্ব অপরিসীম।
এই ফ্যাটি অ্যাসিড এর তিনটি ধরণ আছে। সেগুলো হলো (১) ইপিএ; (২) ডিএইচএ এবং (৩) এএলএ।
চর্বিযুক্ত মাছে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় প্রথম দুটি ধরণ। আর বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবারে অ্যাসিডের তৃতীয় ধরণটি।
শরীরের কর্মশক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে এই অ্যাসিড। কারণ, কর্মশক্তিকে উজ্জীবিত করণে যেসব উপাদান প্রয়োজন তা এই ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড এর মধ্যে রয়েছে।
আপনি জানলে অবাক হবেন যে, হার্ট, ফুসফুস এবং রক্তনালী সুরক্ষিত রাখতে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের জুড়ি নেই। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে তোলে এই অ্যাসিড।
এই ফ্যাটি অ্যাসিড হার্টে যেসব প্রভাব দেয়:
চর্বি শরীরের জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয়। তবে অবশ্যই অতিরিক্ত নয়। চর্বির অনেক ধরণ থাকে। তবে হার্ট এর জন্য চর্বির যে ধরণ অবশ্য প্রয়োজনীয় তা এই অ্যাসিডের মধ্যে রয়েছে।
অবাক করা কথা যে, শরীর নিজে থেকে এই উপাদান তৈরী করতে পারে না। বাইরে থেকেই তা শরীরে নিতে হয় অর্থাৎ বিভিন্ন খাবারের মাধ্যমেই শরীরে এই উপাদানের ঘাটতি পূরণ হয়।
উপরোক্ত উপাদানটি শরীরের রক্তচাপ ও ট্রাইগ্লিসেরাইড এর মাত্রা কমিয়ে দেয়। সহজ কথায়, রক্তে চর্বির মাত্রা কমায়। এছাড়াও বিভিন্ন ধরণের দূরারোগ্য রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
সাধারণত হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাক এর মতো রোগ এর ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে দিতে পারে।
ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার:
একজন মানুষের দিনে কতটুকু মাত্রায় এই অ্যাসিড প্রয়োজন তার আদর্শ কোনো মাত্রা নেই। সহজভাবে প্রতি সপ্তাহে যদি অন্তত দুই দিন চর্বিযুক্ত মাছ খাওয়া যায় তবে ঘাটতি পূরণ হবে।
সাধারণত টুনা, ম্যাকারেল, ট্রাউট, হেরিং, স্যামন ও সার্ডিনস মাছে প্রচুর পরিমাণে এই প্রয়োজনীয় অ্যাসিডটি পাওয়া যায়।
মাছের কথা যদি বাদ দেন তবে অলিভ অয়েল, অ্যাভাকাডো, ফ্লাক্স সিডস এবং আখরোট থেকে এই অ্যাসিড পেতে পারেন।
সাপ্লিমেন্ট ইস্যু:
ড. স্ট্যানবাম বলেন যে, উৎস অনেক হওয়া সত্বেও এই উপাদানের ঘাটতি মানুষের শরীরে দেখা যায়। সেক্ষেত্রে সাপ্লিমেন্ট নেয়ার কথা অনেকেই ভাবতে পারেন।
সাপ্লিমেন্ট নিতে চাইলে আগে শরীর পরীক্ষা করতে হবে যে, শরীরে কি পরিমাণ এই অ্যাসিড রয়েছে আর কতটুকু প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: শরীর ও মন ভালো রাখতে এই কাজগুলো করুন।
এই অ্যাসিডের মাত্রা পরীক্ষা করার পর চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট নিতে পারেন। এতে কোনো অসুবিধা হবে না। জেনে রাখা ভালো, বাংলায় একে স্নেহ পদার্থ বলা হয়।
পরিশেষে বলা যায়, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। চর্বিযুক্ত মাছ নিয়মিত খেলে শরীরে এর ঘাটতি হওয়ার কথা নয়।
তারপরেও যদি কখনো উপরে উল্লিখিত বিষয়গুলোর মারাত্মক লক্ষণ (খারাপ লক্ষণ) দেখা দেয় তবে আনুষঙ্গিক চিকিৎসার পাশাপাশি অ্যাসিডের মাত্রা পরীক্ষা করে দেখা উচিত।