এমটিএফই প্রতারণা – বিষয়টি সম্পর্কে সারা দেশেই আলোচনা সমালোচনা চলছে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি চলছে। কারন, তারা লাখ লাখ মানুষের হাজার কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে।
সম্প্রতি যুগান্তর পত্রিকা তাদের প্রধান শিরোনাম দিয়েছে “সর্বস্বান্ত লাখ লাখ মানুষ”। ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, অনলাইন ভিত্তিক মাধ্যম এমটিএফই লাখ লাখ বাংলাদেশি গ্রাহকদের থেকে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা।
একেক জন মানুষ একেক ভাবে এই টাকা দিয়েছে। কেউ নিজের জমানো টাকা দিয়েছে, কেউ জায়গা-জমি বা নিজের কোন সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছে, আবার কেউ এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে দিয়েছে।
সবাই ইচ্ছে মতো বিনিয়োগ করেছিলো। সবার কাছে অনলাইন ভিত্তিক বিশ্বস্ত কোম্পানী হিসেবে এটা পরিচিতি পেয়েছিলো। কিন্তু সবশেষে দেখা গেল, এমটিএফই কোম্পানী উধাও হয়ে গেলো এবং সবাইকে নিঃস্ব করে দিয়ে গেল।
এই ঘটনা শুধু বাংলাদেশেই নয় অর্থাৎ শুধু বাংলাদেশের মানুষ প্রতারিত হয়েছে বিষয়টি এমন নয়। ভারতের পশ্চিম বঙ্গের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষও অনেক টাকা হারিয়েছে। যারা প্রতারিত হয়েছে তাদের মধ্যে বেশিরভাগই তরুণ এবং কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থী।
জানলে অবাক হবেন, শিক্ষক, ডাক্তার, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ অন্যান্য পেশার মানুষও এমটিএফই এর সাথে যুক্ত ছিলেন।
এমটিএফই এর কোন অনুমোদন ছিলো না বাংলাদেশে। অথচ অ্যাপটি ভালোভাবেই ব্যবহার করছিলো সব শ্রেণী পেশার মানুষ।
আর এমটিএফই কোম্পানী বাংলাদেশকে লেনদেন এর ব্যাপারে কোন তথ্য দেয়নি। আর সেই সুবাদে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও তাদের কাছে থেকে কোন তথ্য নেয়নি। যার জন্য প্রতারণার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছুই জানে না।
অন্যান্য পত্রিকা যেমন সমকালের প্রধান শিরোনাম হয়েছে “দেশজুড়ে জাল বিছালেও প্রশাসন ছিল নিশ্চুপ”। প্রতিবেদনটিতে এমএলএম কোম্পানী এমটিএফই ব্যবসার মাধ্যমে ডিজিটাল ফাঁদ পেতে বাংলাদেশের গ্রাহকদের কয়েক হাজার কোটি টাকা লোপাট করে দেয়ার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে যে, বিদেশি ভুইফোঁড় এক অনলাইন প্রতিষ্ঠানের ফাঁদে পড়ে বরিশাল, ময়মনসিংহ, খুলনা, কুষ্টিয়া, উত্তরাঞ্চলসহ অনেক এলাকার লাখ লাখ মানুষের এখন সর্বস্বান্ত হওয়ার মতো অবস্থা।
অ্যাপসভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি দেশে অবৈধ ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে বিশাল অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে অনলাইনের সব কার্যক্রম গুছিয়ে নিয়েছে।
অনেক প্রযুক্তিবিদ বলছেন, হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে যে পরিমাণ অর্থ গায়েব করেছে, এর চেয়ে ১০ গুণ বেশি টাকা ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে লুট করেছে অ্যাপভিত্তিক অনলাইন ট্রেডিং গ্রুপ ‘মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ (এমটিএফআই)’।
গত ৭ই আগষ্ট প্রথমে কারিগরি ত্রুটির কথা বলে গ্রাহকদের টাকা উত্তোলন সেবা বন্ধ করে প্রতিষ্ঠানটি। তারপর বৃহস্পতিবার অনলাইন স্তর থেকে একেবারেই হাওয়া হয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটি। তাদের আর হদিস মেলেনি।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ২০২১ সালের পর থেকে এমটিএফআই বাংলাদেশে ভার্চুয়ালি কার্যক্রম চালালেও তা কেন প্রশাসনের নজরে এলো না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
পরিশেষে বলা যায়, অনলাইন ভিত্তিক গেমস বা জুয়া খেলা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত এবং প্রয়োজনে আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
আর দেশে একটি কারিগরি টিম রাখা প্রয়োজন যারা দেশের অনলাইন স্তরকে নজরে রাখবে। এমপিএফই যাদের নিঃস্ব করেছে তাদের আসলে আর করার কিছুই নেই। ভবিষ্যতে দেশের মানুষ যাতে এভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেদিকটায় আমাদের নজর দিতে হবে সবার।
আরও পড়ুন: প্রিয় কথা – জীবনের জন্য চরম বাস্তব কিছু কথা