বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। কৃষির সাথে এই দেশের বেশিরভাগ মানুষ ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। কেউ জমি চাষ করে, কেউ গরু পালন করে, কেউবা ব্যবসা করে। তবে গরু পালন করে বর্তমানে অনেকেই লাভবান হচ্ছেন।
পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ থানার ইমরান হোসেন গরু পালন করেন আজ দুই বছর থেকে। ইমরান হোসেন এসএসসি পাশ করেছেন ২০১৬ সালে। তখন তার পরিবারের আর্থিক সংকটের কারণে আর পড়াশোনা করা হয়ে ওঠেনি।
এরপর দুই বছর কেটেছে এই সেই কাজ করে। কখনো অন্যের জমিতে কাজ করেছেন আবার কখনো ছোট ছোট ব্যবসা করেছেন। ২০১৯ ইং সালে বিবাহ করেন। শশুরবাড়ি থেকে ইমরানকে ব্যবসা করার জন্য সাহায্য হিসেবে কিছু টাকা দেয়া হয়।
সেই টাকা দিয়ে ইমরান হোসেন ব্যবসা না করে তিনটি গরু কেনেন। তারপর স্বামী-স্ত্রী মিলে গরু পালন শুরু করেন। নিজেরাই গরুর খাবার যোগাড় করা, গরু চড়ানো, গোসল করানো অর্থাৎ সব কাজ করতেন।
তিনটি গরু থেকে আজ তাদের ১৫টি গরু হয়েছে। মাঝখানে একটি সমিতি থেকে তারা কিছু টাকা ঋণ নিয়েছেন। বর্তমানে তিনটি বিদেশি গরু রয়েছে। এখন ইমরান হোসেনের খামার থেকে প্রতিদিন ৪টি গরু দুধ দেয়।
তিনি সেই দুধ বিক্রি করে সব ধরণের খরচ মেটান। তার দুই ছেলে বর্তমানে স্কুলে পড়াশোনা করছে। পরিবারে আর্থিক অনটন বলতে আর কিছু নেই।
গ্রামের মানুষজনের কাছে ইমরান হোসেন একটি উদ্যোক্তার নাম। সফল খামারীর নাম। গ্রামের আরও কয়েকজন ইমরানের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে গরু কিনে লালন পালন শুরু করেছেন।
ইমরান হোসেন তার সাফল্যের গল্প বলতে গিয়ে কষ্টের কথাগুলোও বলেছেন। তিনটি গরু কেনার পর তার কাছে আর কোনো টাকা ছিলো না। তাই গরুর খাবার যোগাড় এবং চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেয়েছেন।
হঠাৎ একটি গরু তার মারা যায়। তখন ইমরান সহ পুরো পরিবার ভেঙে পড়ে। অনেকেই ইমরান হোসেনকে গরু পালন থেকে সরে আসতে বলে। কিন্তু তিনি সরে আসেননি।
আর তাই আজ তিনি সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে আরোহন করছেন। আর্থিক অভাব অনটন আর ইমরানের পরিবারকে স্পর্শ করতে পারে না।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি জানতে চাইলে তিনি বলেন যে, খামার এর সম্প্রসারণই আমার প্রধান লক্ষ্য। বর্তমানে ১৫টি গরু হয়েছে। ১ জন মানুষ আমার এখানে কাজ করে তার জীবিকা নির্বাহ করছে। আমি চাই ভবিষ্যতে আরও অনেক মানুষের কর্মসংস্থান আমার এখানে হোক।
আরও পড়ুন: পেয়াজ চাষ করে মাথায় হাত উত্তরবঙ্গের চাষীদের।
দেবীগঞ্জ জেলার প্রাণিসম্পদ অফিসার জানান, তার এলাকায় বেশি কয়েকটি খামার রয়েছে। প্রতিনিয়ত সেসব খামারীদের সাথে তারা যোগাযোগ রক্ষা করছেন। যেকোন প্রয়োজনে খামারীদের সহায়তা প্রদানে তিনি অঙ্গীকারবদ্ধ।
বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, গরু পালন করে খুব সহজেই আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব। দরকার শুধু ধৈর্য্য আর পরিশ্রম।