বিশ্বে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক বা আর্থিক সংকটে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা। দেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড ভেঙে গেলে কি হয় তা এই দেশটির দিকে তাকালেই বোঝা যায়।
তাই এই কথা খুব সহজেই বলা যায় যে, আর্থিক সংকটে শ্রীলঙ্কা নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সম্প্রতি বিভিন্ন তালিকায় এসেছে যে, কেবল শ্রীলঙ্কা নয়, আর্থিক সংকটে শ্রীলঙ্কার মতো পরিণতি হতে পারে এমন তালিকায় আছে আরও ১২টি দেশ।
শ্রীলঙ্কার বর্তমান সংকট এমন যে, সেখানে খাবার নেই, পানি নেই, জ্বালানি নেই। শুধুই হাহাকার আর হাহাকার। তীব্র এই সংকট এবং এর কারণে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা গোটা বিশ্বের সামনে শ্রীলঙ্কাকে একটা উদাহরণ হিসেবে সামনে নিয়ে এসেছে যা ধ্রুব সত্য।
আর এটা কোনো উদাহরণ নয় বরং বাস্তব। এখনও প্রতিদিন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংবাদ মাধ্যমে শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে তথ্য প্রচার করা হয়।
তবে দুঃখের কথা হচ্ছে, সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স জানিয়েছে যে, ১২টি দেশের অবস্থা বর্তমানে অস্থিতিশীল যে দেশগুলোর অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারে।
প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থাটি মূলত বিপর্যয়ের খাদের কিনারায় থাকা দেশগুলোকে চিহিৃত করে তাদের অর্থনৈতিক দুরবস্থার দিকদিকে সামনে নিয়ে এসেছে।
তালিকায় থাকা দেশগুলোর বৈদেশিক ঋণ, মুদ্রাস্ফীতি এমন চরম পর্যায়ে পৌছে গেছে যা ভবিষ্যতের জন্য চরম সংকটের আভাস দিচ্ছে।
তালিকায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে আর্জেন্টিনা, ইউক্রেন, মিশর, কেনিয়া, ইথিওপিয়া, এল সালভাদর, ইকুয়েডর, বেলারুশ, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ইত্যাদি।
সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স থেকে আরও জানা গেছে যে, শ্রীলঙ্কা, লেবানন, রাশিয়া, সুরিনাম এবং জাম্বিয়া ইতোমধ্যেই ঋণ খেলাপি দেশের তালিকার অন্তুর্ভুক্ত হয়েছে।
এছাড়া মস্কো এবং বেলারুশ দেশ দুটিও ঋণ খেলাপি হওয়ার দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে এবং আরও এক ডজনের মতো দেশ এই তালিকার দিকে ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে।
কারণ হিসেবে চিহিৃত করা হয়েছে ক্রমবর্ধমান ঋণের খরচ, মুদ্রাস্ফীতি এবং ঋণ যা ঐসব দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে এবং পতনের আশঙ্কা তৈরী করছে।
বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে আরও জানা গেছে, এসব দেশের মাথার ওপর বিশাল অংকের ঋণের বোঝা চেপে আছে। বিশেষজ্ঞদের হিসাব মতে, এই ঋণের বোঝার পরিমাণ প্রায় ৪০০ বিলিয়ন বা ৪০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার।
তবে তালিকায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ঋণের বোঝা বহন করছে আর্জেন্টিনা। সব মিলে হিসাব মতে দেশটিকে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
তবে খুশীর খবর হলো – তালিকায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের নামটি নেই। বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। উন্নয়ন অব্যাহত থাকলে অচিরেই বাংলাদেশ তার সকল সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবে।
শ্রীলঙ্কার আজ যে পরিণতি সেটা পৃথিবীর কোন দেশেরই কাম্য নয়। তবুও আসলে এরকমটা হয়ে যায়। একটা প্রগতিশীল রাষ্ট্র বা দেশ কখনো এতো সহজে অর্থনীতির দৃঢ় কাঠামোকে চাইলেও ভেঙে ফেলতে পারে না।
ঋণের বোঝা, বাড়তি উন্নয়ন, কৃষির উপর বিরূপ প্রভাব, দূর্নীতিসহ ইত্যাদি কারণে একটি দেশের অর্থনীতির চাকা ভেঙে যেতে পারে। তাই বিশ্বের প্রতিটি দেশকে এসব ব্যাপারে সজাগ থাকা উচিত।
আরও পড়ুন: দূর্ঘটনা – ট্রেন ও মাইক্রোবাস সংঘর্ষের ফলে নিহত ১১ জন।