আম ও কাঁঠাল খুব পরিচিত ফল। সবাই এসব ফল পছন্দ করে। বৈশাখ ও জৈষ্ঠ্য মাসে এসব ফল পাঁকে। গ্রাম-গঞ্জে বিভিন্ন উৎসব ও আনন্দ করা হয় যখন এসব ফলের দিন আসে।
প্রতিবারের ন্যায় এবারও দেবীগঞ্জ এলাকায় আম ও কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। পঞ্চগড় জেলায় সর্বমোট ৫টি উপজেলা বা থানা রয়েছে। তন্মধ্যে দেবীগঞ্জ হলো পঞ্চগড়ের সর্বদক্ষিণের একটি সুন্দর উপজেলা।
এই উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে করতোয়া নদী। আর সেই করতোয়া নদীর উপরে রয়েছে চীন মৈত্রী সেতু যা করতোয়া ব্রীজ নামে পরিচিত।
বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে মানুষ এই ব্রিজটি দেখতে আসে। যাই হোক, সৌন্দর্যের যতগুলো উপাদান রয়েছে তার সবটাই দেবীগঞ্জে রয়েছে। কোন দিক থেকে কোনো কমতি নেই।
পুরো উপজেলায় যথেষ্ট পরিমাণ গাছ-গাছালি রয়েছে। খয়ের বাগান নামে বিশাল এক বাগান রয়েছে যেখানে নানারকম গাছ-গাছালিতে ভরপুর।
আম ও কাঁঠাল গাছের কথা যদি বলি তবে সংখ্যায় নেহাত কম নয়। গ্রাম ও শহরের প্রায় প্রত্যেকটি বাড়িতেই আম ও কাঁঠাল গাছ রয়েছে। আর এই দুটো ফলের গাছ বাংলাদেশের সবজায়গাতেই দেখা যায়।
এমন কোনো মানুষ নেই যারা এসব ফল পছন্দ করে না। ঝড়ের দিনে মামার দেশে আম কুড়াতে সুখ কবিতাটির কথা তো মনে আছে অনেকের। সত্যিই মামার বাড়িতে আম কুড়াতে সুখ পাওয়া যায়।
দেবীগঞ্জ উপজেলায় পরিসংখ্যান অনুসারে আম ও কাঁঠালের গাছ রয়েছে অসংখ্য। সংখ্যায় বলা হলে তা হবে প্রায় দুই লাখের মতো।
এই উপজেলায় বিভিন্ন প্রজাতির আম পাওয়া যায়। তন্মধ্যে ফজলি এবং ল্যাংড়া আম অন্যতম। ফজলি আম কাঁচা অবস্থাতেই খাওয়া যায় এবং খেতে খুব সুস্বাদু।
দেবীগঞ্জ উপজেলায় বাজার কেবল একটিই। দেখা যায়, আশেপাশের এলাকা থেকে বিকেলবেলা অনেকেই নানারকম মিষ্টি আম বাজারে বিক্রি করতে আসে এবং মোটামুটি সস্তা দামেই পাওয়া যায়।
অন্যান্য বছরে আমের বাম্পার ফলন হলেও কাল বৈশাখী ঝড়ের কবলে বহু ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কিন্তু এবার ঝড় হলেও তেমন ক্ষতি হয়নি। কারণ, ঝড়ের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে ছিল।
আরেকটি ব্যাপার হলো, আমের ও কাঁঠালের যখন প্রথম ফুল আসে তখন যদি ঝড় না হয় তবে বেশিরভাগ ফুল থেকেই ফল হবার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু মুকুলের সময় ঝড় হলে খুব ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং যথেষ্ট পরিমাণে পরাগায়ণ না হওয়ার কারণে ফলের সংখ্যা কমে যায়।
সরেজমিনে দেবীগঞ্জ উপজেলা পরিদর্শন করে দেখা যায় যে, প্রতিটি বাড়িতেই প্রায় আমের গাছ ও কাঁঠালের গাছ রয়েছে এবং প্রচুর আম কাঁঠাল ধরেছে।
কিছু বাগান রয়েছে। সংখ্যায় নেহাতই কম। কারণ, মানুষ এমনিতেই নিজে খাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়িতেই এসব ফলের গাছ লাগায়। কিন্তু ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বড় ধরণের বাগান যদিও রয়েছে তা সংখ্যায় খুব কম।
যাই হোক, দেবীগঞ্জে যারা আম কাঁঠালের বাগান করেছে তারা এবার খুব খুশি। কারণ, ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু দাম নিয়ে তারা সবসময়ই শঙ্কায় থাকেন। কারণ, কেমন দাম হবে তা তো আগে থেকেই বলা মুশকিল।
সাধারনত কাঁঠালের বাগানের উপর কেউ নির্ভরশীল হয় না। কারণ, কাঁঠালের চাহিদা তেমন একটা থাকে না। আমের চেয়ে অনেক বেশি কাঁঠাল গাছ রয়েছে সব জায়গায়।
বৃষ্টি বেশি হলে আমে পোকা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তখন বিভিন্ন স্প্রে করতে হয়। অনেকেই স্প্রে করার কয়েকদিনের মাথায় সেগুলো বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে যায়। এতে করে মানুষের স্বাস্থ্যে তা বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে।
স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেছে যে, এসব বিষয়ে নিয়মিত তদারকি করা হয় এবং যারা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বাগান করেছে তাদের বাগান পরিদর্শন করা হয়।
আরও পড়ুন: কোচিং না করেও বিসিএস সম্ভব – অনুপ্রেরণার বাস্তব গল্প।
শেষ কথা হলো, দেবীগঞ্জ উপজেলায় আম ও কাঁঠালের এবার বাম্পার ফলনে সবাই খুশি। সবার বাড়িতে খুশির আমেজ। কয়েকদিনের মাথায় যদি কোনো বড় কাল বৈশাখী ঝড় ও শিলা বৃষ্টি না হয় তবে আম ও কাঁঠালের ফলনে কোনো বিরুপ প্রভাব পড়বে না।