আফিং বা আফিম:
ভারতের প্রায় সর্বস্থানে, এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন স্থানে আফিং এর চাষ হয়। বর্তমানে এর চাষ সরকারের অনুমতিসাপেক্ষ। মধ্যভারত, উত্তর প্রদেশ, রাজপুতানা ও পাঞ্জাবের বিভিন্ন স্থানে আফিং এর চাষ হয়।
আফিং বর্ষজীবি উদ্ভিদ। এই গাছ সাধারণত লম্বায় ৩-৪ ফুট পর্যন্ত হয়। অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে এর বীজ বপন করা হয়। জানুয়ারী থেকে মার্চের মধ্যে এর ফুল ও ফল হয়। ফল পাকলে তা থেকে বীজ সংগ্রহ করা হয়। এগুলোই হলো পোস্তদানা।
পোস্তদানা থেকে যাতে কেউ এই গাছ তৈরী করতে না পারে সেই জন্য খোসাসহ ফল সেদ্ধ করে তারপর বীজ অর্থাৎ পোস্তদানা বাজারে ছাড়া হয়।
বীজের খোসাগুলো পৃথকভাবে বাজারে আসে। একে বলে পোস্ত অর্থাৎ ঢেড়ী। এই পোস্ত ঢেড়ী ভেজানো জল খেয়েও অনেকে নেশা করে থাকেন।
আফিং এর বীজ অর্থাৎ পোস্তদানা, ফল অর্থাৎ পোস্ত-ঢেড়ী, আঠা, ফুল ও ফুলের পাপড়ি ওষুধরূপে ব্যবহৃত হয়।
বিভিন্ন রোগে ব্যবহার:
১. স্নায়ু রোগে: অল্প দুধের সঙ্গে ২৫ মিলিগ্রাম আফিম মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন।
২. অন্ত্রজ বায়ুগত রোগে: সকালে বিকালে কিছু খাবার পর ঈষদুষ্ণ বার্লির পানিসহ ২৫ মিলিগ্রাম আফিম মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন।
৩. পাথুরি রোগে: ২৫ মিলিগ্রাম আফিং মিছরির জলের সাথে মিশিয়ে কিছুদিন খেলে উপকার পাবেন।
৪. সর্দিগর্মিতে: ২০ থেকে ২৫ মিলিগ্রাম আফিম মিছরির জলসহ নিয়মিত কয়েকদিন খাবেন তাহলে উপকার পাবেন।
৫. দূর্বল স্বাস্থ্যে: যারা দূর্বল স্বাস্থ্যের মানুষ, কাজ-কর্ম করতে পারেন না, তারা একটি নির্দিষ্ট মাত্রা ঠিক করে নিয়ে প্রত্যহ দুধসহ আফিম খাবেন।
৬. বমিতে: ১৫ থেকে ২০ ফোঁটা আদার রস গরম করে, ঠান্ডা হলে ছেঁকে তার সঙ্গে ১৫ থেকে ২০ মিলিগ্রাম আফিম মিশিয়ে খাবেন, বমি কমে যাবে।
৭. হাত-পা কামড়ানো: ১০ থেকে ১৫ ফোঁটা আদার রসের সঙ্গে ১০ থেকে ১৫ মিলিগ্রাম আফিম মিশিয়ে খেলে হাত-পা কামড়ানো কমে যায়।
৮. একশিরাতে: ২০ থেকে ২৫ ফোঁটা আদার রসের সঙ্গে ১৫ থেকে ২০ মিলিগ্রাম আফিম মিশিয়ে প্রত্যহ একবার অথবা দুবার খেলে উপকার পাওয়া যায়।
সাবধানতা: কোনো রোগীর যদি জ্বর থাকে তবে সেই ক্ষেত্রে আফিম এর ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ অর্থাৎ জ্বরের রোগীর ক্ষেত্রে আফিম ব্যবহার করা যাবে না।
আফিম সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য: আফিং এর বৈজ্ঞানিক নাম হলো- Papaver Somniferum. আর ইংরেজীতে বলা হয় Opium Poppy. আফিং হলো বর্ষজীবি গুল্ম প্রকৃতির উদ্ভিদ। এ গাছ লম্বায় ৩ থেকে ৪ ফুট পর্যন্ত হয়।
আরও পড়ুন: প্রস্রাব করতে গেলে জ্বালাপোড়া হয়? জেনে নিন ঘরোয়া সমাধান।
অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসে আফিং এর বীজ বপণ করা হয়। আর জানুয়ারী থেকে মার্চের মধ্যে এর ফুল ও ফল হয়। ফলগুলো দেখতেই পোস্তদানার মতো। আফিং গাছের পোস্তদানা, ফল, ফুল, ফুলের পাপড়ি, আঠা সবই ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
পরিশেষে বলা যায়, অনেকেই শুধুমাত্র নেশাজাতীয় গাছ হিসেবেই আফিমকে চেনে। কিন্তু ভেষজ গুণ আসলে অনেক। যেহেতু এটা থেকে নেশা করাও সম্ভব তাই এর উৎপাদন ও বন্টনে সরকারের কিছু বাধ্য-বাধকতা ও নিয়ম-নীতি রয়েছে।
সরকারি নিয়ম-নীতির বাইরে আফিম নিয়ে কিছুই করা যাবে না। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন কিংবা যত্রতত্র ব্যবহার কিছুই করা যাবে না। আর বিভিন্ন রোগে ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন ইউনানী চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার অনুরোধ রইলো।