অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা মূলত সর্বজনীন ও বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে সবধরণের রোগ যেমন- জিহবার ক্ষত, পেট ফাঁপা ও উদরাময়ের মতো রোগগুলো খুব সহজেই সেরে যায়। আজ আমরা এই রোগগুলোর অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা সম্পর্কে জানবো।
এখানে যে ওষুধগুলোর কথা বলা হয়েছে তা ভারতীয় কোম্পানীর ওষুধ। যে বই থেকে তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে সেই বই এর শ্রদ্ধেয় লেখক (ডা. সমরেশ পাল) একজন ভারতীয়।
তাই আপনি এখানে উল্লেখিত ওষুধগুলো সব জায়গায় পাবেন না। যেসব ফার্মেসী বিদেশী কোম্পানীর ওষুধ রাখে তাদের কাছে হয়তো পাবেন। তো আর কথা নয় – চলুন রোগগুলোর সম্বন্ধে জানি।
অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা – মুখগহ্বর বা জিহ্বার ক্ষত (Glossitis-Stomatitis):
কারণ: ঠাণ্ডা লাগা, ভিটামিনের অভাব, গরম খাদ্য গ্রহণ, মাদকদ্রব্য সেবন, তামাক সেবন এবং ধারাল দাঁত থেকে এই সব ক্ষত উৎপন্ন হয়।
লক্ষণ: ভিতরের গালে, জিহ্বার উপরে দাঁতের মাড়িতে সাদা বা লালবর্ণের ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
চিকিৎসা: Tab Becozyme C-forte ১টি করে দিনে ২ বার বা Cap Bivinal-forte-C ১টি করে দিনে ২ বার বা Cap Cobadex-forte ১টি করে দিনে ২ বার বা Cap Becosules ১টি করে দিনে ২ বার।
এতে না কমলে এই সব ওষুধের সাথে Borax মিশ্রিত Glycerine বাহ্যিক প্রয়োগ করতে হবে এবং Tab Mycostatin খাওয়াতে হবে। Tab Mycostatin, Glycerine-এ মিশিয়ে লাগানো চলে।
তাতেও না কমলে Cap Neutrolin-B ১টি করে দিনে ৩ বার or Cap Becelac ১টি করে দিনে ৩ বার বা Cap Laviest ১টি করে দিনে ৩ বার এবং Candid Mouth Paint লাগাতে হবে দিনে ৩ বার or Hamycin Paint লাগাতে হবে দিনে ৩ বার।
পেট ফাঁপা (Flatulence):
কারণ: বেশি খাওয়া, অজীর্ণ রোগে ভোগা, অনিয়মিত খাওয়া, ভিটামিন B-Complex এর অভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রভৃতি হওয়ার জন্য পেট ফাঁপে।
লক্ষণ: পেট উঁচু হয়ে ওঠে এবং চাপ বোধ হয়। শ্বাস-কষ্ট হয়, ক্ষুধা-মন্দা গা বমি ভাব, বুকে জ্বালা এবং বেদনা অনুভূত হয়, খুব বেশি হলে পায়খানা ও মূত্রাবরোধ ঘটে।
চিকিৎসা: Tab Diovol ২টি করে দিনে ৩/৪ বার বা Tab Dimol ২টি করে দিনে ৩/৪ বার বা Tab Gasex ২টি করে দিনে ৩/৪ বার বা Tab Gelusil-MPS ২টি করে দিনে ৩ বার বা Polycrol Fortegel ২ চামচ করে দিনে ৩ বার বা Carmicide forte ২ চামচ করে দিনে ২ বার। তাছাড়া একটি ভালো মিক্সচার দেওয়া যায়।
Sodium-bi-Carbonate – 5mg, Light Magnesium Carbonate – 2gm, Spirit Chloroform – 3ml, Spirit Ammon-Aromate – 2ml, Aqua-ptychotis – 3ml, Tinct Cardo – 5ml, Water – 10Z ২ চামচ করে দিনে ৩ বার খেলে উপকার হয়।
বমি হলে কিংবা পায়খানা বা মূত্রত্যাগে ব্যাঘাত ঘটলে Tab Reglan ১টি করে দিনে ৩ বার খাবার আগে বা Tab Domstal ১টি করে দিনে ৩ বার খাবার আগে বা Inj Reglan ½ ml, 1M or Inj Maxeron ½ ml 1M.
আনুষঙ্গিক চিকিৎসা: সরিষার তেল মালিশ করলে কিছুটা উপশম হয়। দৈনিক একটি নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাওয়া উচিত। ডাবের পানি, ফলের রস উপকারী। আদার রস খেলেও উপকার হবে।
উদরাময় (Diarrhoea):
কারণ: অতিরিক্ত প্রোটিন জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা, খাদ্যে বিষক্রিয়া, গরমের দিনে গুরুপাক খাদ্য গ্রহণ, অজীর্ণ, অম্ল, পিত্ত রোগে দীর্ঘকাল ভোগা প্রভৃতি থেকে এই রোগ সৃষ্টি হয়।
লক্ষণ: বারংবার পায়খানার বেগ, তরল মল নির্গমণ, কোঁথানি, পেটবুক জ্বালা, গা-বমি ভাব, কলেরার মতো দ্রুত পতন অবস্থার সৃষ্টি হয়।
চিকিৎসা: Tab Septran ২টি করে দিনে ২ বার বা Tab Bactrim-DS ১টি করে দিনে ২ বার বা Cap Terramycin ১টি করে দিনে ৪ বার তার সাথে Tab Lomofen ২টি করে তিন বার বা Tab Lopamide ২টি করে ৩ বার বা Tab Furoxone ১টি করে দিনে ৩ বার।
গা বমি থাকলে এর সাথে Tab Reglan ১টি করে দিনে ৩ বার বা Tab Domstal ১টি করে দিনে ৩ বার। এতে না কমলে Tab Norbactin ১টি করে দিনে ২ বার বা Tab Norflox ১টি করে দিনে ২ বার বা Tab Norbid ১টি করে দিনে ২ বার বা Tab Gramoneg ২টি করে দিনে ৩ বার।
তাতেও না কমলে Inj Ampilin – 500gm দিনে ২ বার বা Inj Roscillin – 500mg দিনে ২ বার বা Inj Campicillin – 500mg দিনে ২ বার বা Inj Lyramycin – 80mg দিনে ২ বার।
রোগ ক্রনিক হয়ে গেলে বা আমাশয়ে পরিণত হলে Tab Enteroquinol ২টি করে দিনে ৩ বার ৭ দিন এবং তার সাথে Cap Terramycin ১টি করে দিনে ৪ বার ৭ দিন এবং Cap Vizylac ১টি করে দিনে ২/৩ বার বা Cap Becelac ১টি করে দিনে ২/৩ বার বা Cap Newtrolin-B ১টি করে দিনে ২/৩ বার।
আনুষঙ্গিক চিকিৎসা: ঝোল ভাত, দই, হালকা চা, সাগু, এরারুট, ডাবের পানি, ফলের রস প্রভৃতি খাওয়া উপকারী। Electral or Glucose পানিতে গুলে খেতে হবে। শাকসবজি, ভাজা-খাবার ও ঘন দুধ না খাওয়াই ভালো।
পরিশেষে বলা যায়, অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা ব্যবস্থা সর্বজন স্বীকৃত একটি চিকিৎসা ব্যবস্থা। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এ চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রযুক্তিগত দিক থেকে আগের তুলনায় অনেক উন্নত।
আরও পড়ুন: টিউমার থেকে হতে পারে ক্যান্সার – বিস্তারিত জানুন।
তাই আপনি যদি কোনো সমস্যায় আক্রান্ত হন তবে ভালো একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দ্রুত চিকিৎসা নিন। নিজে নিজে (ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া) ওষুধ সেবন করতে যাবেন না। এতে ক্ষতি হতে পারে।