অ্যালোপ্যাথি ওষুধ আমাদের জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যখন আমাদের কোনো অসুখ হয় তখনই আমরা অ্যালোপ্যাথি ওষুধ সেবন করি। কিন্তু এসব ওষুধ সম্পর্কে যদি আমরা খানিকটা জানতাম তবে তা আমাদের উপকারে আসতো।
আর তাই কিছু অ্যালোপ্যাথি ওষুধ এর সাধারন তথ্য আজ তুলে ধরবো। এই তথ্যগুলো জানলে আপনি হয়তো আর যত্রতত্রভাবে ওষুধ খেতে যাবেন না। তো আর কথা নয় – চলুন মূল আলোচনায় যাই।
অ্যালোপ্যাথি ওষুধ – ক্লোরামফেনিকল (Chloramphenicol):
এটা একটা বহুব্যাপক ব্যাকটেরিয়ানাশক্ ওষুধ। এটা প্রায় অধিকাংশ গ্রাম পজেটিভ এবং গ্রাম ন্যাগেটিভ ব্যাকটেরিয়াদের উপর সক্রিয়।
এটা পৌষ্টিকতন্ত্র থেকে দ্রুত এবং সম্পূর্ণরূপে শোষিত হয়। এটা অপরিবর্তিত থেকে প্রস্রাবের মাধ্যমে নির্গত হয়। এটা শরীরের সমস্ত অংশেই ব্যাপৃত হয়।
ব্যবহার: টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড, ইনফ্লুয়েঞ্জা, লিস্টোরিয়া, ঈ-কোলাই প্রভৃতি ইনফেকশনে ব্যবহৃত হয়। শিশুদের হুপিং কাশি, নিউমোনিয়া, পারটুসিস প্রভৃতিতে ভালো কাজ দেয়। চোখ এবং কানের রোগেও এব ব্যবহার চলে, অবশ্য সেগুলি বাহ্যিক প্রয়োগের ওষুধ।
মাত্রা: বয়স্কদের ক্ষেত্রে ২৫০-৫০০ মিগ্রা দিনে ৩-৪ বার, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ১২৫ মিগ্রা দিনে ৩ বার, ৫ বৎসরের ঊর্ধ্বে ২৫০ মিগ্রা দিনে ২-৩ বার, ১ বৎসরের নিচের শিশুদের ১২৫-২৫০ মিগ্রা দিনে ২-৩ বার, সিরাপ বা ড্রাইসিরাপ ১ চামচ দিনে ২-৩ বার দিতে হয়।
ক্লোরামফেনিকল ইন্ট্রা মাস্কুলার ২৫০ মিগ্রা অর্থাৎ ২ মিলি দিনে ২ বার দেওয়া যায়। চোখের বা কানের ড্রপ ১-২ ফোঁটা দিনে ৩-৪ বার দেওয়া যায়।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: পেটের গোলমাল, বমিভাব, বমি, দুর্বলতা ও রক্তসল্পতা সহ প্রভৃতি হতে পারে।
আন্তঃক্রিয়া: টলবুটামাইড, ডাইফিনাইল হাইডেনটইন, ফেনোবারবিটাল, প্যারাসিটামল প্রভৃতির সাথে বিক্রিয়ার ফলে কর্মদক্ষতা কমে যায়।
সাবধানতা: গর্ভবতী মহিলাদের ব্যবহার নিষিদ্ধ, রেডিও থেরাপি চলতে থাকলে ক্লোরামফেনিকল ব্যবহার চলবে না। মারাত্মক লিভারের রোগে ব্যবহার নিষেধ। যাদের রক্তাল্পতা আছে বলে মনে হয় তাদের এই ওষুধ দিতে নেই।
অ্যালোপ্যাথি ওষুধ – কোট্রাইমোক্সাজোল (Co-trimoxazole):
Trimethoprim + Sulphamethoxazole কে কোট্রাইমোক্সাজোল বলা হয়। এটা সমস্ত গ্রাম পজেটিভ এবং গ্রাম ন্যাগেটিভি জীবাণুদের ধ্বংস করে। এটা খাবার পর দ্রুত এবং সম্পূর্ণরূপে শোষিত হয়।
ট্রাইমেথোপ্রিম শরীরের সমস্ত অংশে বিস্তার লাভ করে বিশেষতঃ ফুসফুস, প্রস্টেট গ্রন্থি, কান, স্তনদুগ্ধ, লিভার প্রভৃতি অংশে। এটার ৫০ শতাংশ প্রস্রাবের মাধ্যমে অপরিবর্তিত অবস্থায় নির্গত হয়।
সালফামেথোক্সাজোল একটি মৃদু অ্যাসিড। এটার বিস্তারও ব্যাপক। এটার ৩০ শতাংশ প্রস্রাবের মাধ্যমে অপরিবর্তিত অবস্থায় নির্গত হয়।
ব্যবহার: প্রস্রাবের সমস্ত রকম পীড়া, শ্বান যন্ত্রের পীড়া, ওলাওঠা উদরাময়, টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড, গনোরিয়া, স্যাঙ্কার ক্ষত বা চামড়ার ইনফেকশনে ও হাড়ের রোগে ব্যবহার করা হয়।
মাত্রা: বয়স্কদের ১২ বৎসরের ঊর্ধ্বে Trimethoprim – 160mg এবং Sulpha – 800mg (D.S.) দিনে ২ বার করে।
শিশুদের (৬-১২) বৎসর পর্যন্ত Trim – 80mg এবং Sulpha – 200mg দিনে ২ বার করে, ১ বৎসরের ঊর্ধ্বে Trim – 40mg এবং Sulpha – 200mg দিনে ২ বার করে।
এক দেড় মাস থেকে ৬ মাস পর্যন্ত Trim – 20mg এবং Sulpha – 100mg দিনে ২ বার। গনোরিয়াতে ২টি D.S. দিনে ২ বার ২দিন।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: বমি বা গাবমি, মুখে ঘা, চর্মে উদ্ভেদ, আমবাত প্রভৃতি কখনো কখনো হয়। মারাত্মক প্রতিক্রিয়া খুব কমই দেখা যায়।
আন্তঃক্রিয়া: পাইরিমেথামাইন, ওয়ারফারিন, ফেনাটাইন সাইক্লোস্পোরিন প্রভৃতির সাথে আন্তঃক্রিয়া ঘটে।
সাবধানতা: গর্ভবতী মহিলা এবং স্তন্যদানকারী মাতাকে এই ওষুধ দেওয়া নিষেধ। যাদের সালফার অ্যালার্জী থাকে তাদের এই ওষুধ দেওয়া নিষেধ। দেড় মাসের নিচের শিশুদের এই ওষুধ দেওয়া চলে না।
সাইপ্রোফ্লোক্সাসিন (Ciprofloxacin) জাতীয় ওষুধ:
এটা ক্লোরো কুইনোলোনস গ্রুপের একটি ওষুধ। এটার গঠন রূপ – এটা সর্বপ্রকার গ্রাম পজেটিভ এবং গ্রাম ন্যাগেটিভ ব্যাকটেরিয়াদের উপর সক্রিয়, তাছাড়া ভাইরাস, প্রোটোজোয়া, ফাঙ্গাস প্রভৃতির উপরও সক্রিয়।
অন্যান্য ওষুধে যে সমস্ত ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করা যায় না Ciprofloxacin তাদের ধ্বংস করে। এটার প্রায় ৮৫ শতাংশ পৌষ্টিকতন্ত্র থেকে শোষিত হয়ে যায়। এটা শরীরের সমস্ত অংশে বিস্তার লাভ করে।
এটার প্রায় সম্পূর্ণ অংশই অপরিবর্তিত থেকে প্রস্রাবের মাধ্যমে নির্গত হয়। ৪৫ শতাংশ পায়খানার মাধ্যমে নির্গত হয়।
ব্যবহার: নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কোনিউমোনিয়া, প্লুরিসি, ফুসফুসের ক্ষতে, নাক, কান, গলার রোগে এটা ব্যবহার করা হয়। এটার বেশি ব্যবহার হয় টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড, কলেরা, উদারময় নেফ্রাটাইটিস, প্রস্টেট গ্রন্থির পীড়া সহ সকল প্রকার প্রস্রাবের পীড়া প্রভৃতিতে।
তাছাড়া আঘাত, ক্ষত, পোড়ার ইনফেকশনে ব্যবহার করা হয়। গনোরিয়া, স্যালপিনজাইটিস, এন্ডোমেট্রিওসিস, পেলভিক প্রদাহ, হাড়ের রোগ, সেপটিসিমিয়া, মেনিনজাইটিস প্রভৃতিতে ব্যবহার করা হয়।
মাত্রা: শ্বাস যন্ত্রের পীড়া, প্রস্রাবের পীড়া, উদরাময়, অন্যান্য ইনফেকশনে, টাইফয়েড জ্বরে, ৫০০ মিগ্রা দিনে ২ বার ৫দিন। I.V. Infusion (১০০-২০০) মিগ্রা দিনে ২ বার।
গনোরিয়াতে ২৫০ মিগ্রা ১ বার মাত্র সেব্য। ইউরেথ্রাইটিস এর ক্ষেত্রে ৭৫০ মিগ্রা দিনে ২ বার। I.V. Influsion ১০০ মিগ্রা ১বার মাত্র।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: চর্মে উদ্ভেদ, বমিভাব, মাথাধরা, খিঁচুনি প্রভৃতি হতে পারে তবে তুলনামূলকভাবে কম লক্ষ্য করা যায়।
আন্তঃক্রিয়া: ম্যাগনেসিয়াম হাইড্রক্সাইড, প্রবেনেসিড, থিওফাইলিন প্রভৃতির সাথে বিক্রিয়ার ফলে কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
সাবধানতা: এটা ১২ বৎসরের নিচের শিশুদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা উচিত নয়। মৃগীরোগী এবং গর্ভবতী মহিলাদের এটা ব্যবহার নিষিদ্ধ। স্তনদানকারী মাতার ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার নিষিদ্ধ ।
আরও পড়ুন: যৌন রোগ কেন হয়? ভয়াবহ কয়েকটি যৌন রোগ সম্পর্কে জানুন।
পরিশেষে বলা যায়, অ্যালোপ্যাথি ওষুধ যেমন ভালো তেমনি আবার খারাপ। খারাপ এজন্যেই বলা হচ্ছে যে, প্রতিটি ওষুধের যথেষ্ট পরিমান পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।
প্রয়োজন ছাড়া কোনো ওষুধ সেবন করা উচিত নয়। ওটিসি ড্রাগ হিসেবে যেগুলো সুপরিচিত সেগুলোও মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়।
মোট কথা, একজন ব্যক্তি যখন বিভিন্ন অ্যালোপ্যাথি ওষুধ সম্পর্কে উপরে দেয়া তথ্যের মতো করে বিস্তারিত জানবে তখন সেই ব্যক্তি নিজে থেকেই সবচেয়ে বেশি সচেতন হবে। ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনে ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি ওষুধ সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞানও রাখা প্রয়োজন।