অ্যালোপ্যাথিক ডাক্তার হয়ে গেলেন হোমিওপ্যাথি ডাক্তার – এমন ঘটনা অনেক ঘটেছে। আবার, অনেকেই অ্যালোপ্যাথিতে উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে আবার হোমিওপ্যাথিতেও ডিগ্রী নিয়েছেন।
যখন যে প্যাথি ভালো লাগে তখন সে প্যাথি নিয়েই চিকিৎসা করুন। কিন্তু হোমিওপ্যাথি থেকে একদম কনভার্ট হয়ে কেউ অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসক হয়েছেন কিনা তা আমার জানা নেই।
যাই হোক, আজ আমরা এমন একজন ডাক্তারের কথা জানবো যিনি স্বনামধন্য অ্যালোপ্যাথিক ডাক্তার ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি হোমিওপ্যাথিতে ডাইভার্ট হন। তারপর হোমিওপ্যাথিরই একটা অংশ বায়োক্যামিক এ চলে যান।
পুরো ঘটনাই জানবো। তো আর কথা নয় – সরাসরি যাচ্ছি মূল আলোচনায়।
ডাক্তার ইউএম সামন্ত, ভারতের প্রখ্যাত অ্যালোপ্যাথিক ডাক্তার ছিলেন। অ্যালোপ্যাথিক থেকে কনভার্ট হয়ে হোমিওপ্যাথিক প্র্যাকটিস শুরু করলেন। এরপরে হোমিও বাদ দিয়ে বায়োকেমিক মেডিসিন দিয়ে চিকিৎসা শুরু করলেন।
এরপরে অ্যালোপ্যাথিক এবং হোমিওপ্যাথিক বাদ দিয়ে ফুলটাইম বায়োকেমিক মেডিসিন দিয়ে চিকিৎসা করছেন তিনি। প্রতিষ্ঠা করেছেন “সামন্ত বায়োকেমিক ফার্মেসী”।
মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত সকল রোগের, সকল রোগীর চিকিৎসা করেছেন এই বায়োকেমিক মেডিসিন দিয়ে। কিন্তু কেন? অ্যালোপ্যাথিক ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র বায়োকেমিক মেডিসিন দিয়ে চিকিৎসা শুরু করলেন? কি এমন বিশেষত্ব আছে এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে?
এ যাবৎ আবিষ্কৃত যত চিকিৎসা পদ্ধতি আছে তার মধ্যে সবচেয়ে সহজ ও নিরাপদ চিকিৎসা পদ্ধতির নাম হল বায়োকেমিক চিকিৎসা। মাত্র ১২ টি মেডিসিন দিয়ে মানুষের যত ধরনের রোগ আছে সব ধরণের রোগের চিকিৎসা করা যায়।
১ দিনের বাচ্চা থেকে শুরু করে ১০০ বছরের বৃদ্ধ সবার জন্য নিরাপদ ও সমান কার্যকরী এ চিকিৎসা পদ্ধতি। আশা করি, বুঝতে পেরেছেন ডাক্তার সামন্ত কেন বায়োকেমিক চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন।
জার্মানির ডাক্তার সুসলার এই চিকিৎসা পদ্ধতি (বায়োকেমিক) আবিষ্কার করেছেন । এই ১২ টি মেডিসিন আবিষ্কারের পেছনে সুন্দর একটি গল্প আছে। হয়তো অন্য আরেকদিন প্রকাশ করবো।
এখন আমরা জানবো বায়োকেমিক ১২ প্রকার মেডিসিন নিয়ে। পৃথিবীতে যতো রোগ আছে সবগুলো রোগের চিকিৎসায় এই ১২টি মেডিসিন ব্যবহৃত হয়।
বায়োকেমিক ১২টি মেডিসিন হল-
১. ক্যালকেরিয়া ফ্লোরিকা
২. ক্যালকেরিয়া ফসফরিকা
৩. ক্যালকেরিয়া সালফ
৪. ফেরাম ফসফোরিকাম
৫. কেলি মিউর
৬. কেলি ফসফরিকাম
৭. কেলি সালফিউরিকাম
৮. ম্যাগনেসিয়া ফসফোরিকাম
৯. নেট্রাম মিউর
১০. নেট্রাম ফসফরিকাম
১১. নেট্রাম সালফিউরিকাম এবং
১২. সাইলিশিয়া
মাত্র এই ১২ টি মেডিসিন যার দ্বারা পৃথিবীতে যত রোগ আছে সকল রোগের সফল চিকিৎসা করা যায়। বায়োকেমিক মেডিসিনকে সেলুলার থেরাপি, টিস্যু রেমেডি ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। তবে এগুলো সচরাচর সবাই জানে না।
বাংলাদেশের হোমিও সিলেবাসে বায়োকেমিক মেটেরিয়া মেডিকা ও বায়োকেমিক প্রাকটিস অফ মেডিসিন পড়ানো হয়।
তবুও বায়োকেমিক মেডিসিন আজ আমাদের চিকিৎসকদের কাছে অবহেলিত। কারণ হচ্ছে- বায়োকেমিক চিকিৎসার মূলনীতি এবং হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার মূলনীতি সম্পূর্ণ আলাদা।
বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের উচিত হোমিওপ্যাথি এবং বায়োকেমিক আলাদা আলাদা ভাবে পড়ানো। যেমন- বাংলাদেশ ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক বোর্ডে ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক আলাদা আলাদাভাবে পড়াচ্ছে ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার মূলনীতি আলাদা হওয়ার কারণে। যদিও উভয়েই ভেষজ চিকিৎসা পদ্ধতি।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত বায়োকেমিক মেডিসিনগুলোকে OTC (ওটিসি) ড্রাগের অন্তর্ভুক্ত করে দেওয়া। যেন যে কেউ অল্প কিছু প্রশিক্ষণ নিয়েই নিজের পরিবারের জন্য কোন ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ব্যবহার করতে পারে। এই সহজ চিকিৎসা পদ্ধতি প্রত্যেক পরিবারে প্রাকটিস করা উচিত।
প্রত্যেক পরিবারের কর্তা ব্যক্তিদের উচিত, পারিবারিক চিকিৎসার প্রথমেই বায়োকেমিক মেডিসিন দিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করা। নিজেরা নিজেদের জন্য শিখে নেওয়া।
বায়োকেমিক চিকিৎসা পদ্ধতি সর্বোত্তম এবং একদমই নিরাপদ। এখানে সামান্য ভুল হলেও বিন্দু পরিমাণ ক্ষতি হবে না। তাই বায়োকেমিক চিকিৎসা পদ্ধতি সচরাচর সবারই জানা উচিত।
আরও পড়ুন: হোমিও চিকিৎসা শিখুন – পরিবারের চিকিৎসার খরচ কমান।