অনেক আগে থেকে রূপচর্চা ও সৌন্দর্য রক্ষায় বিভিন্ন রকমের তেলের ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। অনেকে ভাবেন তেল শুধু চুলের জন্য উপকার, কিন্তু তেল চুলের পাশাপাশি ত্বকের জন্যও বেশ উপকারি। হয়তো তিলের তেল অর্থাৎ অলিভ ওয়েল নামটা এদিক থেকে ১ নম্বরে থাকবে।
একেক রকমের তেলে রয়েছে একেক রকমের গুণাগুণ। আজ তাই তিলের তেল রূপচর্চায় কি কি উপকার করতে পারে সেই বিষয়ে আলোচনা করব।
তিলের তেল ত্বকের কোষের ভিতরে খুব দ্রুত মিশে গিয়ে ভেতর থেকে রুক্ষতা দূর করে। ত্বককে করে তুলে নরম ও মসৃণ।
তেল ব্যবহারের উপযুক্ত সময় হলো রাত। তবে ত্বকের ধরন অনুযায়ী তেল ব্যবহার করা ভালো। যদিও তেলের খুব একটা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
আর খুব ভালো হয় যদি না কিনে নিজেরা তেল বানিয়ে নেওয়া যায়। চলুন তাহলে জেনে নেই রূপচর্চায় তিলের তেলের অসাধারন গুনাবলীগুলো।
তিলের তেল:
ত্বকের যত্ন না নেওয়ার কারণে অনেক সময় বয়স বাড়ার আগেই ত্বকে বলিরেখা পড়ে যায়। তিলের তেল ত্বকে বয়সের বলিরেখা রোধ করতে সাহায্য করে।
প্রতিদিন তিলের তেলের ম্যাসাজ করলে মুখে রক্ত চলাচল বাড়বে এবং ত্বক স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হয়ে উঠবে। তিলের তেল ত্বকের মরা চামড়া তুলে ফেলেও সাহায্য করে এবং ত্বক সতেজ রাখে। এ ছাড়া ত্বকের পোড়া ভাবও দূর করতে তিলের তেল ভূমিকা অপরিসীম।
নিয়মাবলী:
তিলের তেল রাতে ঘুমানোর আগে ত্বকে ম্যাসাজ করতে হবে। তাহলে ত্বক ভিতর থেকে পরিষ্কার হবে। সাথে তিলের তেল ত্বকে বয়সের বলিরেখা রোধ করতে সাহায্য করবে। ত্বকের পোড়া ভাব দূর হবে। ত্বক উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
চুলের যত্নে তিলের তেলের গুণাবলী:
তেল চুলের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা বলার অবকাশ নেই। আর তিলের তেলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই ও বি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস ও প্রোটিন থাকে যা চুল সুস্থ রাখতে খুবই দরকারি।
নিয়মিত মাথার ত্বকে ও চুলে তিলের তেল দিয়ে ম্যাসাজ করলে চুল পড়া কমে, খুশকি দূর হয়, নতুন চুল গজায়, চুলের গোড়া শক্ত হয়, চুলের রুক্ষতা ও মাথার ত্বকের সংক্রমণ জাতীয় সমস্যাও দূর হয়।
তিলের তেল চুলে কীভাবে ব্যবহার করবেন এবং এটি চুলে কতটা উপকারি সে সম্পর্কে কিছু পরামর্শ নিচে দেওয়া হলো। চলুন জেনে নেই চুলের যত্নে তিলের তেলের উপকারি ব্যবহারগুলো।
চুল পড়া কমাতে:
অনেক ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তার কারণে চুল পড়ে যায়। প্রতিদিন ঘুমানোর আগে মাথায় তিলের তেল দিয়ে ম্যাসাজ করতে হবে। দেখবেন, দুশ্চিন্তা দূর হবে, ঘুম ভালো হবে ও চুল পড়া অনেকটা কমে যাবে।
খুশকি দূর করতে:
খুশকি দূর করতে হালকা গরম তিলের তেল দিয়ে কয়েক মিনিট মাথার ত্বক ম্যাসাজ করতে হবে। আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে তারপর মাথা ধুতে হবে।
এক সপ্তাহ এভাবে নিয়মিত মাথায় এই তেল ব্যবহার করতে হবে। দেখবেন খুশকি একেবারে দূর হয়ে যাবে।
প্রাকৃতিক কন্ডিশনারের কাজ করতে:
তিলের তেল চুলে প্রাকৃতিক কন্ডিশনারের কাজ করে। প্রথমে তিলের তেল হালকা গরম করে মাথার ত্বকে পাঁচ থেকে ১০ মিনিট ভালোভাবে ম্যাসাজ করতে হবে।
আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করে। এবার পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে চুলে ঝলমলে হয়ে উঠবে।
চুলের রুক্ষতা দূর করতে:
নিয়মিত তিলের তেল দিয়ে চুল ও মাথার ত্বক ম্যাসাজ করলে চুলের রুক্ষতা চলে যায়। এইভাবে নিয়মিত ম্যাসাজ করে এবার শ্যাম্পু করে বেশি করে চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। এটি আপনার চুলের রুক্ষতা দূর করে চুল নরম ও মসৃণ করবে।
নতুন চুল গজাতে:
তিলের তেল দিয়ে ম্যাসাজ করলে মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়। এর ফলে নতুন চুল গজায়। এই তেল চুলকে গভীর থেকে সুস্থ রাখে এবং নিয়মিত ব্যবহারে চুলের ভেঙে যাওয়া সমস্যা দূর হয়।
মাথার ত্বকের চুলকানি কমাতে:
অনেক সময় মাথার ত্বকের সংক্রমণের কারণে মাথায় চুলকানির সমস্যা হয়। তিলের তেল সহজেই এই সংক্রমণ দূর করে।
এই তেল হালকা গরম করে মাথার ত্বকের ম্যাসাজ করুন। দেখবেন, ধীরে ধীরে মাথার তালুর সংক্রমণ দূর হবে
উকুন থেকে মুক্তি পেতে:
উকুন থেকে মুক্তি পেতে তিলের তেল বা অলিভ ওয়েল ব্যবহার করতে পারেন। এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল মাথার ত্বকের ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের সাথে যুদ্ধ করে উকুন থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে।
পরিশেষে বলা যায়, তিলের তেল বাজারে যথেষ্ট পরিমানে পাওয়া যায়। তবে দাম একটু বেশি অর্থাৎ ১ লিটার অলিভ ওয়েল কিনতে গেলে আপনাকে প্রায় ১০০০ টাকা দিতে হবে।
তাই প্রয়োজনের স্বার্থে অল্প অল্প করে হলেও কিনে ব্যবহার করুন। চেহারার রুক্ষতা দূর করতে এবং চেহারার লাবণ্যময়তা ফিরিয়ে আনতে তিলের তেলের অর্থাৎ অলিভ ওয়েল এর জুড়ি নেই।
আরও পড়ুন: ডালিম ফল নিয়মিত খেলে যেসব উপকারিতা পাওয়া যায়।