অনিদ্রা হলো একটি ঘুমের ব্যাধি যাতে মানুষের ঘুমে সমস্যা হয়। অনিদ্রা বা ইনসমনিয়ার রোগীদের ক্ষেত্রে ঘুমিয়ে পড়তে বা ইচ্ছামত ঘুমাতে অসুবিধা হয়। এক্ষেত্রে সাধারণত দিনের বেলায় ঘুম, কম শক্তি, খিটখিটে, এবং বিষণ্ণ মেজাজ পরিলক্ষিত হয়।
এর ফলে সড়ক গাড়ি দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। সেইসাথে কোনো কাজে ফোকাস করতে এবং শেখতে সমস্যা হতে পারে। অনিদ্রা স্বল্পমেয়াদী হতে পারে। কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে বা দীর্ঘ মেয়াদী যেমন এক মাসের বেশিও স্থায়ী হতে পারে।
রোগ বিবরন: অত্যাধিক চিন্তা-ভাবনা, অতিরিক্ত দৈহিক বা মানসিক পরিশ্রম, অধিক চা, কফি, মদ্যপান, গুরুপাক দ্রব্য ভোজন, শোক, তাপ, মানসিক গোলযোগ ইত্যাদি কারন হেতু ও বৃদ্ধ বয়সে এই রোগ অধিক হয়।
চিকিৎসা:
কফিয়া (Coffea): অনুভুতি প্রবন, মতলব বাজ, হঠাৎ মানসিক উত্তেজনা ও শীত কাতর এই ধাতুর রোগীদের ইহা উপকারী। রোগী আসিয়া বলিল, ডাক্তার সাহেব, আমাকে ঘুমের ওষুধ দিন, সারা রাত্র বিছানায় এপাশ ওপাশ করি।
মনে মনে নানা রুপ কল্পনা জাগে, ঘুম আনে না। যদি সামান্য ঘুম আসে আবার জাগিয়া উঠে। নানা বিষয় চিন্তা করিতে করিতে সমস্ত রাত্রি জাগিয়া থাকে। তখন আপনি তাহাকে কফিয়া 200 শক্তি সন্ধা ও রাত্রে কিছু দিন সেবন করিতে দিবেন, নিদ্রা হবে।
ইগ্নেশিয়া (Ignatia): রোগী অতিশয় নির্জনতা প্রিয়, মেজাজ খুবই রুক্ষ, শীত কাতর। আপনি যদি জানিতে পারেন কোন প্রকার শোক বা দুঃখ অন্তরে চাপিয়া রাখিয়া একাকী থাকিয়া দুঃখ ভোগ করে, দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে অথবা যদি শোনেন কোন প্রেমিক বা প্রেমিকা প্রেমে ব্যর্থ হইয়া অনিদ্রায় ভোগে তবে তাহাকে ইগ্নেশিয়া দিবেন। অব্যর্থ ফল পাইবেন। মনে রাখবেন, ভয়জনিত অনিদ্রায়ও ইগ্নেশিয়া উপকারী।
সেবন বিধি: শক্তি 30 বা 200 দিনে ২ মাত্রা। পুরাতন রোগে 1m বা 10m।
ক্যালকেরিয়া (Calcarea Carb): মোটা থল থলে মেদ পূর্ণ রোগী ঘুমের ঔষধের জন্য আপনার নিকট হাজির। জিজ্ঞাসায় জানিতে পারিলেন রোগীর মাথা ঘামে, টক গন্ধ যুক্ত ঘামে বালিশ ভিজিয়া যায়।
ঠান্ডা লাগার প্রবনতা, ডিম খাইবার অত্যন্ত ইচ্ছা, শীত কাতর, সমস্ত রাত্রি জাগিয়া থাকে – ঘুম হয় না, যদিও ঘুম হয় সামান্য শব্দেই জাগিয়া উঠে। চক্ষু মুদিত করিয়া ঘুমের ভান করিলেই নানা প্রকার কাল্পনিক স্বপ্ন দেখে। তখন তাহাকে ক্যালকেরিয়া কার্ব দিবেন নিদ্রা হইবে।
সেবন বিধি: শক্তি 30 বা 200 সকাল বিকাল ২ বার।
হায়োসিয়ামস (Hyoseyamus): খিট খিটে স্বভাব, শীত কাতর, শিশুর মা আসিয়া বলিলেন আমার ছেলেকে ঘুমের ঔষধ দিন। কোন প্রকারেই ঘুম পারাইতে পানি না।
যদি একটু ঘুমায় তখনই হাত-পা কাঁপিয়া জাগিয়া উঠে। সমস্ত রাত্রি ছটফট করে। কোন সে ঘুমায় না তাহার কারন বুঝিতে পারিনা। শিশুটিকে হায়োসিয়ামস দিবেন উপকার হইবে।
সেবন বিধি: শক্তি 30 বা 200 সকাল বিকাল দিনে ২ বার দিতে হবে।
ক্যামোমিলা (Chamomilla): বদ মেজাজী, খিট খিটে স্বভাব, অত্যন্ত রাগী, সামান্য কিছুতেই ঝগড়া লাগিয়া বসে, কথায় কথায় রাগিয়া উঠে, প্রতিবাদ সহ্য হয় না।
এই ধাতুর রোগীদের অনিদ্রায় ইহা উৎকৃষ্ট ঔষধ। শিশু কেবল কোলে থাকিতে চায়, কাঁদে, কোন জিনিস হাতে দিলে ছুড়িয়া ফেলিয়া দেয়, মনে হয় যেন রাগিয়াই আছে, নিজেও ঘুমায়না অন্যকেও ঘুমাইতে দেয়না – এসব লক্ষণে ক্যামোমিলা অব্যর্থ।
সেবন বিধি: শক্তি 6x, 30 বা 200 সকাল বিকাল ২ বার।
চায়না (China): হতাশা, বিমর্ষ, উৎসাহ শূন্য, উদাসীন ব্যক্তিদের অতিরিক্ত রক্ত, বীর্য বা শরীরের তরল পদার্থের ক্ষয়জনিত দুর্বল রোগীদের অনিদ্রায় চায়না মহা উপকারী ঔষধ।
সেবন বিধি: শক্তি 3x বা 6x শক্তি ৪ ফোটা সামান্য ঠান্ডা জলসহ দিনে ৩ বার। 30 বা 200 শক্তিও খুব উপকারী।
প্যাসিফ্লোরা (Passiflora): শিশু, যুবক, বৃদ্ধ যেকোন বয়সের রোগীই হোক, অনিদ্রায় কোন কারন খুঁজিয়া না পাওয়া যায় বা অন্যান্য ঔষধ প্রয়োগ করিয়া ব্যর্থ হইলে ইহাতে উপকার হইবে।
সেবন বিধি: শক্তি Q (মাদার) ৩০ ফোটা অর্ধ ছটাক জলসহ রাত্রে শয়নের পূর্বে সেবন করিতে হয় (শিশুদের অর্ধ বা সিকি মাত্রা)।
এভেনা স্যাট (Avena Sat): অতিরিক্ত মানসিক পরিশ্রমজনিত কারনে যাহারা অনিদ্রায় ভোগে কিংবা হস্তমৈথুন, স্বপ্নদোষ, অতিরিক্ত স্ত্রী সহবাস বা অস্বাভাবিক বীর্য ক্ষয় করিয়া নিদ্রাহীনতা দেখা দেয় এভেনা তাহাদের পরম বন্ধু।
সেবন বিধি: শক্তি Q (মাদার) ১০ ফোঁটা অর্ধ ছটাক গরম জলসহ প্রত্যহ ৩ বার সেব্য।
রাউলফিয়া (Rauwolfia): চিন্তা-ভাবনা অথবা মানসিক উত্তেজনা হেতু কিংবা অন্য কোন কারনে অনিদ্রায় কষ্ট পাইতে থাকিলে ইহা উপকারী।
সেবন বিধি: শক্তি Q (মাদার) ৫ থেকে ১০ ফোঁটা (বয়স অনুপাতে) সকালে ও রাত্রে দিনে ২ বার।
ককুলাস ইন্ডিকা (Cocculus Indica): কাহারো কোন কারনে অনেক দিন পযর্ন্ত রাত্রি জাগিয়া থাকিবার ফলে অনিদ্রা রোগ দেখা দিলে ককুলাস উপকারী।
সেবন বিধি: শক্তি 30 বা 200 দিনে ২ বার।
বায়োক্যামিক চিকিৎসা:
ক্যালি ফস (Kali Phos): স্মৃতি শক্তি খর্বতাদের অনিদ্রা রোগে এই ঔষধ উত্তম কার্যকারী। অত্যাধিক লেখাপড়া করিয়া, দিবা-রাত্রি নানান কাজে ব্যস্ত থাকিয়া, শোক-দুঃখ বা কোন প্রকার ভয় পাওয়ার কারনে মানসিক অশান্তি জনিত অনিদ্রাতে এই ঔষধ বিফলে যায় না। শিশু ঘুমায় না, কিছু সময় কিছু ঘুমাইলে ভয় পাইয়া কাঁদিয়া উঠে এসব লক্ষণে ক্যালি ফস উপকারী।
সেবন বিধি: শক্তি 6x বা 12x ১ থেকে ৪ বড়ি এক মাত্রা (বয়স অনুপাতে) প্রত্যহ ৩ বার।
ফেরাম ফস (Ferrum Phos): অত্যাধিক ঘুমের জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটিলে ফেরাম ফস সেবনে ঘুম দূর হইবে।
সেবন বিধি: শক্তি 3x ২ থেকে ৪ বড়ি এক মাত্রা প্রত্যহ রাত্রে এক বার ।
পথ্য ও আনুষঙ্গিক চিকিৎসা ব্যবস্থা:
নিদ্রার পূর্বে শীতল জল দ্বারা মাথা ধৌত করিবে। গুরুপাক দ্রব্য ভোজন, অতিরিক্ত চা, কফি, মদ্যপান নিষিদ্ধ। লঘু পথ্য আহার হিতকর। নিদ্রার পূর্বে শীতল জল পান উপকারী। শক্ত বিছানায় শয়ন করা ভাল।
রোগী বিবরন: জনৈক মৌলভী সাহেব বয়স ৪২ বৎসর। মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। ১৯৮৭ সালের কোন এক সময় আমার নিকট চিকিৎসার জন্য আসেন।
সমস্ত রাত্রি বিছানায় এপাশ ওপাশ করেন। কিছুতেই চোখে ঘুম আসে না। মনে নানা রূপ কল্পনা জাগে। যদিও একটু নিদ্রা যায়, হঠাৎ চমকিয়া উঠে। এই ভাবে সমস্ত রাত্রি ছটফট করে। আমি তাহাকে কফিয়া শক্তি 200, ৬ মাত্রা রাত্রে খাবারের ১ ঘন্টা পূর্বে ও ১ ঘন্টা পরে ৩ দিন সেবন করিতে দেওয়ায় অনিদ্রা দূর হয়।
আরও পড়ুন: হোমিওপ্যাথিতেও রয়েছে এন্টিবায়োটিক এর মতো শক্তিশালী ঔষধ