অনলাইনে আয় করতে যে শুনে সেই-ই চায়। কিন্তু এটা কি এতেই সহজ? তাহলে তো সবাই বড় লোক হয়ে যেতো।
শুনে ভয় পেলেন নাকি? ভয়ের কিছু নেই। টাকা বাতাসে উড়ে – কথাটি নিশ্চয়ই শুনেছেন। যারা অনলাইন থেকে আয় করতে পারে তাদের ক্ষেত্রে কথাটি ধ্রুব সত্য।
অনলাইন থেকে মোটামুটি কিছু দক্ষতা নিয়ে কাজ শুরু করলে আয় করা যায়। নির্ধারিত কোনো বিষয়ে আপনি যদি খুব দক্ষ হয়ে ওঠেন তবে আয় করাটা আরও সহজ হয়ে যাবে আপনার কাছে।
শুনলে অবাক হবেন যে, অনলাইন থেকে মাসে ১০,০০০ টাকা থেকে ১০,০০,০০০ টাকা পর্যন্তও মাসে আয় করা সম্ভব এবং এটা অনেকেই করছেন।
যাই হোক, আপনি যদি আয় করতে চান আপনাকে প্রথমত এসব ব্যাপারে ভালো করে জানতে হবে, যেকোন একটি কাজ ভালোভাবে শিখতে হবে এবং তারপর ধৈর্য্য সহকারে কাজ করে যেতে হবে।
আজ অনলাইন আয় নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। আশা করছি, আলোচনাটি সবার কাজে লাগবে। তো আর কথা নয় – সরাসরি যাচ্ছি মূল আলোচনায়।
অনলাইনে আয় করার সহজ কিছু উপায়:
ক) বিজ্ঞাপন দেখে অনলাইন থেকে টাকা আয়
খ) ছবি তুলে অনলাইন থেকে টাকা আয়
গ) ক্যাপচা এন্ট্রি করে অনলাইন থেকে টাকা আয়
ঘ) ফেসবুকের মাধ্যমে অনলাইন থেকে টাকা আয়
ঙ) গুগল অ্যাডসেন্স এর মাধ্যমে অনলাইন থেকে টাকা আয়
চ) ব্যানার অ্যাড এর মাধ্যমে অনলাইন থেকে টাকা আয়
১. বিজ্ঞাপন দেখে অনলাইন থেকে টাকা আয়:
বিজ্ঞাপন দেখে যে, অনলাইন থেকে টাকা আয় করা সম্ভব সে সম্পর্কে অনেকেরই বিশদ কোন ধারণা নেই। আবার যাদের রয়েছে তাদের জানার ভিতরেও রয়েছে সঠিক তথ্যের ঘাটতি।
অনলাইনে বিজ্ঞাপন দাতার সংখ্যা এতোই বেশি যা শুনলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। তবে খুব সহজেই এটা বলা যায় যে, বর্তমানে অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেয়না এমন কোম্পানীর সংখ্যা নেই বললেই চলে।
এই কোম্পানীগুলো তাদের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মানুষের দোরগোড়ায় তাদের পণ্য, সেবা ও কার্যক্রম পৌছে দিতে চায়।
আর এর জন্য কোম্পানী গুলো এতোটাই আগ্রহী যে এই কাজে তারা অর্থ ব্যয় করতে পিছপা হয় না। অনলাইনে এমন অনেক ওয়েবসাইট আছে যারা এসব কোম্পানীর কাছ থেকে তাদের বিজ্ঞাপন জনসাধারণকে দেখানোর জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে থাকে।
পরবর্তীতে তারা ঐ সব বিজ্ঞাপন দেখার জন্য তাদের লভ্যাংশ থেকে বিজ্ঞাপনটি যে দেখছে তাকেও কিছু অর্থ প্রদান করে থাকে।
তবে এক্ষত্রে বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট বাছাই করারও একটা ব্যাপার থেকে যায়। তাই কোন ওয়েবসাইটে এই ধরনের কাজ শুরু করার পূর্বে সাইটটি সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া আবশ্যক। নিচের এই ওয়েবসাইটগুলো থেকে প্রাথমিক ভাবে কাজ শুরু করলে আশা করি ভাল ফলাফল পাবেন।
১. https://www.clixsense.com
২. https://www.neobux.com
৩. https://www.prizerebel.com
৪. https://www.paidverts.com
উপরে যেসব ওয়েবসাইটের কথা বলো এগুলো থেকে আপনি খুব একটা অর্থ আয় করতে পারবেন না। আর এগুলোকে কোন স্কিল বলা হয় না। সুতরাং এই কাজগুলোর উপর ডিপেন্ড না হওয়াই ভালো।
২. ছবি তুলে অনলাইন থেকে টাকা আয়:
যদি আপনি একজন ফটোগ্রাফার বা চিত্র গ্রাহক হয়ে থাকেন অথবা ছবি তোলা যদি আপনার শখ হয়ে থাকে তাহলে আপনার তোলা এই আকর্ষণীয় ছবিগুলো বিক্রি করেও আপনি অনলাইন থেকে টাকা আয় করতে পারবেন।
অনলাইনে অনেক ডিজাইনাররা তাদের প্রজেক্টের জন্য বিভিন্ন প্রকার ছবি সুন্দর সুন্দর খুঁজে থাকেন, তাদের নিকট এই ছবিগুলো বিক্রি করতে পারেন। অনলাইনে ছবি বিক্রি করার এমনি একটি ওয়েবসাইট হল- https://www.istockphoto.com
৩. ক্যাপচা এন্ট্রি করে অনলাইন থেকে টাকা আয়:
ক্যাপচা এন্ট্রি কাজের সাথে পরিচিত নয় এরকম মানুষ মনে হয় পাওয়া কঠিন। যারা অনলাইনে কাজ করতে চান, প্রাথমিক ভাবে নিজেদের আর্থিক চাহিদা পূরণের জন্য ক্যাপচা এন্ট্রি কাজটি তাদের জন্য আদর্শ।
তবে আমরা অনেকেই জানিনা যে, আমরা যে ক্যাপচাগুলো এন্ট্রি করি সেগুলো আসলে কি কাজে লাগে। এগুলো জানারও একটা ব্যাপার আছে।
পুরো বিশ্বে অসংখ্য কোম্পানী আছে যারা বিভিন্ন জনপ্রিয় ওয়েবসাইটে নিজেদের অ্যাকাউন্ট তৈরী করার মাধ্যমে তাদের কোম্পানীর প্রচার করতে চান। কিন্তু এই অ্যাকাউন্টের সংখ্যা নেহাত যে কম তা নয়।
সে কারণে ঐসব কোম্পানীগুলো এক ধরনের বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করে যা তাদের জন্য বিভিন্ন জনপ্রিয় ওয়েবসাইটে একাউন্ট তৈরীর কাজ করে থাকে।
কিন্তু এখানে সমস্যা হচ্ছে বর্তমানে প্রতিটি ওয়েবসাইটেই অ্যাকাউন্ট তৈরীর ক্ষেত্রে ক্যাপচা পূরণ করতে হয়। যা সফটওয়্যারকে অটোম্যাটিক অ্যাকাউন্ট তৈরীতে বাধা দিয়ে থাকে।
ফলে এই সমস্যা সমাধানের জন্য সফটওয়্যার অ্যাকাউন্ট তৈরীর সময় যখন কোন ক্যাপচা পায় তখন সেটি ক্যাপচা সার্ভারে প্রেরণ করে থাকে।
আর সেটাই আপনার সামনে এসে উপস্থিত হয় এবং সেটি আপনি সফটওয়্যারের হয়ে এন্ট্রি করেন এবং কোম্পানী এর জন্য আপনাকে অর্থ প্রদান করে থাকে।
ক্যাপচা এন্ট্রির কাজে সাধারণত প্রতি হাজারের ভিত্তিতে অর্থ প্রদান করা হয়। আপনার যদি টাইপিং এর গতি বেশি হয়ে থাকে তাহলে আপনি ক্যাপচা এন্ট্রি মাধ্যমেই অনলাইন থেকে টাকা আয় করতে পারবেন।
৪. ফেসবুকের মাধ্যমে অনলাইন থেকে টাকা আয়:
ফেসবুক কি তা আর নতুনভাবে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কোন দরকার আছে বলে আমি মনে করি না।
ফেসবুক হল আজকের দুনিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট। অনেকেই জানতে চান ফেসবুকের মাধ্যমে কি অনলাইন থেকে টাকা আয় করা যায়।
হ্যা, ফেসবুকের মাধ্যমে অনলাইন থেকে টাকা আয় করা যায়। বর্তমানে ফেসবুকে মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২.২ বিলিয়ন।
আর এজন্য মার্কেটিং জাতীয় কাজের বড় ধরনের সুযোগ এখানে রয়েছে। তবে আপনার বন্ধু বা ফ্যান অনেক বেশি এ কারণে ফেসবুক আপনাকে টাকা প্রদান করবে না।
কিন্তু এই বন্ধু বা ফ্যানকে নির্ভর করেই আপনাকে আয় করতে হবে। মোট কথা ফেসবুকে মার্কেটিং বা প্রচারের কাজ করে অনলাইন থেকে টাকা আয় করতে হবে।
৫. গুগল অ্যাডসেন্স এর মাধ্যমে অনলাইন থেকে টাকা আয়:
গুগল অ্যাডসেন্স থেকে আয় করার জন্য আপনার একটা সচল ব্লগ অথবা ওয়েবসাইট প্রয়োজন। আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন এমন বিলবোর্ড বা পোস্টার যেখানে তারা (জনৈক অসাধু ব্যবসায়ীরা) দাবি করে যে, গুগল অ্যাডসেন্স থেকে প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ ডলার আয় করুন ঘরে বসে।
কিন্তু কথাটি সম্পূর্ণ সত্য নয়! গুগল অ্যাডসেন্স থেকে আয় হয় তখন, যখন কেউ গুগলের ঐ সব অ্যাডে ক্লিক করে।
আর এজন্য আপনার একটা তথ্যসমৃদ্ধ ওয়েবসাইট তৈরি করে নিতে হবে। এছাড়াও প্রতিদিন প্রচুর পরিমানে ভিজিটর আপনার ওয়েবসাইটে থাকতে হবে।
গুগল অ্যাডসেন্স সবচেয়ে স্ট্যান্ডার্ড একটা পদ্ধতি যেটা থেকে কোন সময় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আর একবার আপনি সফলতার পর্যায়ে গেলে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না।
৬. ব্যানার অ্যাড এর মাধ্যমে অনলাইন থেকে টাকা আয়:
ব্যানার অ্যাড থেকে আয় হল অনলাইন থেকে টাকা আয় এর একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। আপনার ওয়েবসাইটের ব্যানারের স্থানে কোন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন থাকার মানেই ব্যানার অ্যাড।
আপনার যদি একটা ব্লগ বা ওয়েবসাইট থাকে আর তার পেজের অবস্থান যদি ভাল হয় এবং তাতে যদি প্রতিদিন অনেক ভিজিটরের আগমন ঘটে তবে বিজ্ঞাপন দাতারা আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইটে তাদের বিজ্ঞাপন দিতে দ্বিধাবোধ করবে না।
তবে এক্ষেত্রে ওয়েবসাইটের জনপ্রিয়তা যতো বেশি হবে পাঠকের সংখ্যা যতো বাড়বে ততো বেশি আর আপনার আয়ও বাড়তে থাকবে।
অনলাইন থেকে আয় করা অর্থ বা টাকা উঠাবেন যেভাবে:
১. চেক: এটা একটি ব্যাংকের চেক যেটি আপনি যেকোন ব্যাংক থেকেই উত্তোলন করতে পারবেন। অ্যাডসেন্স ও অন্যান্য সাইট এরকম চেকে টাকা পাঠিয়ে থাকে। এটা বাংলাদেশ থেকে টাকা পাওয়ার সবচেয়ে সাধারণ ও জনপ্রিয় মাধ্যম।
২. পেপ্যাল: অনলাইন থেকে টাকা পাওয়ার আরেকটি জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে পেপ্যাল। এখনও অবশ্য পেপ্যাল বাংলাদেশে আসেনি কিন্তু শীঘ্রই আসবে।
৩. পেওনিয়ার: এটা বাংলাদেশ থেকে অনলাইনের টাকা পাওয়ার জন্য নতুন একটা রাস্তা।
৪. মানিবুকারস: মানিবুকারস অনেকটা পেপ্যালের মতই। বাংলাদেশে এটা প্রচলিত আছে।
৫. এলার্ট পে: এটিও পেপ্যালের মতই আর বাংলাদেশে প্রচলিত আছে। আপনি এর টাকা ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন থেকে উঠাতে পারবেন।
পরিশেষে বলা যায়, আপনি অনলাইন থেকে প্রতি মাসে কত টাকা আয় করতে পারবেন এটা আপনার পরিশ্রম, দক্ষতা আর পদ্ধতির উপর নির্ভর করবে।
অনলাইন থেকে সত্যিই অনেক টাকা আয় করা যায়। যদি আপনি ধৈর্য্য ধরে লেগে থাকেন আর কঠোর পরিশ্রম করেন তাহলে আপনিও অনলাইন থেকে টাকা আয় করতে পারবেন। কখনো চুরি বা ধোঁকাবাজি করবেন না আর কাজের প্রতি সবসময় সৎ থাকার চেষ্টা করবেন।
একটা জিনিস মাথায় রাখবেন, যখন একটা কাজ শিখতে যাবেন, সেটা নিয়ে পরিশ্রম করতে যাবেন কতোই না বাঁধা আসবে। কিন্তু বাঁধাকে আপনার বাঁধা মনে করা যাবে না।
হয়তো আপনার মন ভেঙে যাবে। কিন্তু তখন যদি আপনি আপনার কাজের প্রতি আরও বেশি মনোযোগী না হোন তবে আপনার দ্বারা সফল হওয়া সম্ভব নয়।
বর্তমান যুগ আধুনিক যুগ। এখন সবকিছুই অনলাইন নির্ভর হয়ে যাচ্ছে। তাই প্রযুক্তিগত বিদ্যা কখনো বৃথা যাবে না ইনশাআল্লাহ।
আরও পড়ুন: পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট এর জন্য আবেদন করুন অনলাইনে।